
একই রকম কাজ করতে হচ্ছে প্রতিদিন; অনেকটা একঘেয়েমিতে হাঁপিয়ে উঠছেন হয়তো। সবকিছু মনে হয় পানসে, ভালো লাগছে না। কখনও নিজেকে মনে হয় বিচ্ছিন্ন। নিঃসঙ্গতা জেঁকে ধরছে, অনেকের মধ্যে থেকেও মনে হয় পাশে কেউ নেই। কারো সঙ্গে আড্ডা দিতেও মন চায় না।
স্বজনদের এড়িয়ে চলতে ইচ্ছে হয়। তাদের সঙ্গে কথা বলতেও ইচ্ছে করে না। এমন পরিস্থিতি নিয়ে মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্লান্তি, অবসাদ আর হতাশা যখন মনজুড়ে থাকে, তখন এর থেকেই বিচ্ছিন্নতাবোধ সৃষ্টি হয়। মন বিষণ্ণ হয়ে থাকে। কোনো কিছুতেই উৎসাহ পাওয়া যায় না।
যেভাবে কমতে পারে এমন বিষণ্ণতা
ক. যখনই মন খারাপ হবে, তখন সব কাজ ছেড়ে কিছু সময়ের জন্য একমনে চুপচাপ থাকুন অনেকটা ধ্যানমগ্ন হোন, মেডিটেশনে বসুন। যদি ১৫/২০ মিনিট মন শান্ত রেখে, চুপ করে ধ্যানকরা যায়, তাহলে অনেকটা মানসিক আরাম পাওয়া সম্ভব। দুশ্চিন্তার জটও অনেকটা খুলে যায়।
খ. সকালের দিকে যোগাসন, প্রাণায়াম করলে ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে। নিয়ম করে যোগাসন করলে মস্তিষ্কের স্নায়ু সক্রিয় থাকে। এর ফলে নেতিবাচক চিন্তাভাবনা দূর হয়ে যায়। এতে ‘হ্যাপিহরমোন’-এর ক্ষরণ হয়। মন ভালো থাকে। তবে যোগাসন শারীরিক অবস্থা বুঝে করলে ভালো হয়।
গ. দিনে কিছুটা সময় বন্ধু-বান্ধব বা আত্মীয়দের জন্য বের করুন, তাদের সঙ্গে আলাপ-গল্প করুন। পুরানো বন্ধুদের বাড়িতে দাওয়াত করুন। পুরানো দিনের সুখস্মৃতিগুলো তাদের সঙ্গে শেয়ার করুন। কোনো আনন্দমুখর ভিডিও বা স্থিরচিত্র দেখুন এবং এসব ছবির নেপথ্য কথা স্মৃতিতর্পণ করুন। নিজেকে গুটিয়ে রাখলে হতাশা আরও বেশি গ্রাস করতে পারে।
ঘ. যারা বেশি দুশ্চিন্তা করেন বা উদ্বেগে ভোগেন, তাদের ঘুম কম হয়। টানা ঘুম হয়না, বারবার জেগেওঠেন। ঘুমাতে গেলে শরীরে অস্বস্তিবোধ হয়। এই সমস্যা কাটিয়ে ওঠার জন্য নির্দিষ্ট রুটিন তৈরি করতে হবে। চেষ্টা করুন প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতেযাওয়ার। শোবার ঘর পরিপাটি, পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা করুন। ঘুমানোর সময়ে মোবাইল, ল্যাপটপ, ইলেকট্রনিক ডিভাইস বা যন্ত্রপাতি ইত্যাদি দূরে রাখুন।
ঙ. মন ভালো করার অন্যতম উত্তমপন্থা হলো বই। কোনো কাজে উৎসাহ কমে গেলে পছন্দের বই পড়ুন। এতে ধৈর্যশক্তি বাড়বে, দুশ্চিন্তাও কমবে।
চ. বেশি একাকিত্ব অনুভব করলে কিছুদিনের ছুটি নিয়ে কোথাও ঘুরে আসুন। যদি কেউ সঙ্গে না থাকে, তাহলে একাই যান। বেশি দূরে যেতে না পারলে কাছাকাছি কোথাও ঘুরতে যান। ভালো ছবি তুলুন। সেখানকার স্থানীয় খাবার খান।
মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, কিছু দিনের জন্য সব কাজ থেকে বিরতি নিলে হৃদয় ও মস্তিষ্কও বিশ্রামপায়। এতে মনের বিষণ্ণতা অনেকটা কেটে যায়।