অনলাইন নিউজডেস্ক :
সম্প্রতি গুজরাট হাইকোর্ট সাফ জানিয়ে দিয়েছে যে, স্বামী যৌন নির্যাতন করলেও, সেটা ধর্ষণ। ওই আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, কোনও ব্যক্তি যদি কোনও মহিলাকে যৌন নির্যাতন করে, তাহলে ভারতীয় দণ্ডবিধি অনুযায়ী সেটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। যদি হেনস্তাকারী ও নির্যাতিতার মধ্যে স্বামী-স্ত্রী’র সম্পর্কও হয়, তাহলেও সেটা ধর্ষণ।
গুজরাট হাইকোর্টের শুনানিতে বিচারপতি দিব্যেশ এ জোশী বৈবাহিক ধর্ষণের এই যুক্তি দিতে গিয়ে আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া এবং ব্রিটেনের প্রসঙ্গ টানেন। তিনি বলেন, আমেরিকার ৫০টি রাজ্য, অস্ট্রেলিয়ার ৩টি রাজ্য এবং অন্যান্য অনেক দেশে বৈবাহিক ধর্ষণ বেআইনি।
অর্থাৎ এটি হলো অপরাধ। ভারতের গুজরাট রাজ্যের রাজকোটের এক মহিলার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গুজরাট হাইকোর্ট এই পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন।
বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য ভারতীয় সুপ্রিমকোর্টে যখন একাধিক মামলা বিচারাধীন রয়েছে, ঠিক সেই মুহূর্তে এই গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ এলো গুজরাট হাইকোর্ট থেকে।
ওই হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, স্বামী যদি তার স্ত্রী’কে ধর্ষণ করেন, তাহলেও সেটা ধর্ষণ হিসেবে বিবেচিত হবে। গুজরাট হাইকোর্ট ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৫ ধারার অধীনে বৈবাহিক ধর্ষণের ব্যতিক্রমের সঙ্গে সহমত পোষণ করেননি। উল্লেখ্য, ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৫ (ব্যতিক্রম ২) ধারা অনুযায়ী, একজন স্বামীর তার স্ত্রীর সঙ্গে জোরপূর্বক সহবাসকে ধর্ষণ হিসেবে গণ্য করা হবে না।
মামলার বয়ান থেকে জানা যায়, গত বছর রাজকোটের এক ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ে হয় আবেদনকারী একজন মহিলার। সেই মহিলা তার স্বামী, শ্বশুর এবং শাশুড়ির বিরুদ্ধে এক অমানবিক ও অমর্যাদাকর যৌন নির্যাতনের অভিযোগ দায়ের করেছিলেন।
অভিযোগে তিনি বলেছিলেন, তাদের স্বামী-স্ত্রী’র শোয়ার ঘরে গোপনে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগিয়ে দিয়েছিলেন তার শ্বশুর। তারপর তার শশুর তাদের স্বামী-স্ত্রীর গোপন মুহূর্তের ভিডিয়ো দেখতেন এবং ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ছবি তুলতেন।
পরিবারের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপেও এসব ছবি ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, তার স্বামীও তাদের গোপন মুহূর্তের ভিডিও হোয়াটসঅ্যাপে একটি গ্রুপে পাঠানোর পাশাপাশি বিভিন্ন পর্নোগ্রাফি সাইটেও আপলোড করতেন।
অভিযোগকারী মহিলা জানান, তাদের এই অপকর্মে বাধা দিলে তার স্বামী এবং শ্বশুর তাকে যৌন নির্যাতন করতেন। মহিলার দাবি, হোটেল বিক্রি বাঁচানোর জন্য টাকা উপার্জনের জন্য তারা (স্বামীর পরিবার) এই অপকর্ম করতেন।
এই অনৈতিক ঘটনার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেন ওই ভুক্তভোগী মহিলা। গোটা ঘটনার জেরে আবেদনকারীর স্বামী ও শ্বশুরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
যার পরিপ্রেক্ষিতে এই মামলায় জামিনের আবেদন জানিয়েছিলেন মহিলার শাশুড়ি। তবে হাইকোর্ট অভিযুক্তদের জামিন নাকচ করে দিয়েছেন।
জামিনের সওয়াল জবাব চলাকালীনই আইনজীবী দাবি করেন, ভারতীয় দণ্ডবিধি অনুযায়ী বৈবাহিক ধর্ষণ শাস্তিযোগ্য অপরাধ নয়।
এই কথার তীব্র বিরোধিতা করেন আদালতের বিচারপতি ডি এ যোশী। তিনি সাফ জানান, “স্বামী হোক বা যেই হোক, সে আসলে একজন পুরুষ। সে কোনও মহিলাকে ধর্ষণ করলে সেটা ধর্ষণই হয়।
নির্যাতিতা যদি ওই ব্যক্তির স্ত্রী হন তাহলেও সেটা ধর্ষণ, শাস্তিযোগ্য অপরাধ।” এই পর্যবেক্ষণের পর আবেদনকারীর শাশুড়ির জামিন খারিজ করে দেন গুজরাট হাইকোর্ট।
গুজরাট আদালত বলেছেন, জামিনের আবেদনকারী নিজেও একজন মহিলা। তা সত্ত্বেও তিনি অন্য মহিলার ইজ্জত ও সম্মান রক্ষা করার জন্য তার স্বামী এবং ছেলেকে বাধা দেননি।
শ্বাশুড়িও দুই অভিযুক্তের সমান ভূমিকা পালন করেছেন। আদালত জোর দিয়ে বলেছেন যে, মর্যাদার সঙ্গে বেঁচে থাকার অধিকার, ব্যক্তিগত স্বাধীনতা, যৌন স্বায়ত্তশাসন, প্রজনন পছন্দের অধিকার, গোপনীয়তার অধিকার, স্বাধীনতার অধিকার, বক্তৃতা, বক্তব্য এবং মত প্রকাশের অধিকার পুরুষ এবং মহিলা উভয়ের জন্যই সমানভাবে প্রযোজ্য।
সেই সঙ্গে আদালত আরও জানায়, ভারতে মহিলাদের উপর নির্যাতনের অধিকাংশ ঘটনাই প্রকাশ্যে আসে না।
উল্লেখ্য, বৈবাহিক ধর্ষণকে (Marital Rape) শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে মনে করে বিশ্বের অনেক দেশ। ভারতেও সেই একই পদক্ষেপ নেয়া হোক, এমন দাবি ভারতে বহুদিন ধরেই। কিন্তু এখনও বৈবাহিক ধর্ষণের পক্ষেই সওয়াল করছে ভারতের বেশ কিছু আদালত।
ক’দিন আগে এলাহাবাদ হাইকোর্ট জানায়, স্ত্রীর বয়স যদি ১৮ বছর কিংবা তার বেশি হয়, তাহলে আইন অনুযায়ী বৈবাহিক ধর্ষণ অপরাধ নয়।
এক্ষেত্রে স্বামীকে কোনও প্রকার শাস্তি কিংবা জরিমানা করা যায় না। তবে বৈবাহিক ধর্ষণের বিষয়টি অপরাধের আওতায় ফেলা হবে কি না, সেই সংক্রান্ত মামলা এখনও ভারতের সুপ্রিমকোর্টে বিচারাধীন। সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা, সংবাদ প্রতিদিন।