
তৌফিক অপু:
বাংলাদেশের প্রাচীন উৎসব সমূহের মধ্যে পুরান ঢাকার সাকরাইন উৎসব অন্যতম। যদিও এটা সমগ্র বাংলাদেশব্যাপী পালিত হয় না কিন্তু খুব জনপ্রিয় এবং গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশি সংস্কৃতি।
এটাকে ঐক্য এবং বন্ধুত্বের প্রতীক হিসেবে দেখা হয়। সংস্কৃত শব্দ ‘সংক্রান্তি’ ঢাকাইয়া অপভ্রংশে সাকরাইন রূপ নিয়েছে। পৌষ ও মাঘ মাসের সন্ধিক্ষণে, পৌষ মাসের শেষদিন হিসাবে উদযাপিত হয়।
তবে পুরান ঢাকায় পৌষসংক্রান্তি বা সাকরাইন সার্বজনীন ঢাকাইয়া উৎসবের রূপ নিয়েছে। বর্তমানে দিনভর ঘুড়ি উড়ানোর পাশাপাশি সন্ধ্যায় বর্ণিল আতশবাজি ও রঙবেরঙ ফানুশে ছেয়ে যায় বুড়িগঙ্গা তীরবর্তী শহরের আকাশ।
মূলত সাকরাইন হচ্ছে এক ধরনের ঘুড়ি উৎসব। তবে খুব বেশিদিন হয়নি এটা সন্ধ্যার পর আতশবাজি উৎসব ও ডিজে পার্টিতে পরিণত হয়ে গেছ। বিতর্কটা মূলত এখান থেকেই শুরু।
সন্ধ্যার পর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত একটানা আতশবাজি ও ডিজের শব্দ এলাকাবাসীকে বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে ফেলে। যেহেতু একযোগে শব্দটা হতে থাকে তাই বেশ বিকট শব্দে পরিণত হয়। এতে সবচেয়ে বেশি অসুবিধার সম্মুখীন হন বৃদ্ধ, ছোট বাচ্চা ও অসুস্থ ব্যক্তিরা।
এছাড়া এ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা যুবক যুবতীরা বিভিন্ন রকমের পরিস্থিতির সৃষ্টি করে যা এলাকাবাসীকে বিব্রতকর করে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রান পেতে পুরনো ঢাকার বাসিন্দারা এ উৎসব পরিত্যাগের আহ্বান জানায়।
শব্দহীন জনপ্রিয় উৎসব যখন অতি বিকট শব্দে পরিণত হয় তখন এ ধরনের দাবি ওঠাটা খুবই স্বাভাবিক। তাই উৎসব হওয়া না হওয়া নিয়ে শুরু হয়ে গেছে দ্বন্দ্ব।
একথাও সত্যি আতশবাজি ও ডিজের ভিড়ে নানান রঙের ঘুড়ি উড়ানোর দৃশ্যটাও হারিয়ে যেতে বসেছে।
আমার কাছে মনে হয় অপসংস্কৃতিটুকু বাদ দিলে পুরনো যে সংস্কৃতি এটা সত্যিই খুব সুন্দর। টিকে থাকুক পৌষ সংক্রান্তি, টিকে থাকুক সাকরাইন।