ইবি প্রতিনিধি: দুইমাস ধরে বন্ধ বকেয়া বেতন ভাতাদির দাবি আদায়ে মানববন্ধন করেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) অন্তর্ভুক্ত ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা।
শনিবার (২৭ জানুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে প্রশাসন ভবনের সামনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মুহ. মুজাম্মিল হক মোল্লাহ, সিনিয়র শিক্ষক মো: গোলাম মামুন, মোহা: গোলাম কিবরিয়া, মো: আব্দুল আলীম, আনজুমান আরা, ফেরদৌসী খাতুন, আফরোজা বেগম, এনায়েতুন পারভীন, মর্জিনা আফরিন, বুলবুল আহমেদ, মশিউর রহমান, মো: জিয়ারুল ইসলাম সহ অন্যান্য শিক্ষক-কর্মকতা-কর্মচারীবৃন্দ।
মানববন্ধনে শিক্ষার্থীদের হাতে "আমার সবাই পড়তে চাই, আমার শিক্ষকের বেতন চাই", "শিক্ষা নিয়ে গড়বো দেশ শেখ হাসিনার বাংলাদেশ", আমার শিক্ষকের বেতন চাই", "আমার শিক্ষকের বেতন দাও", "শিক্ষকদের বেতন নিয়ে তালবাহনা বন্ধ করো, করতে হবে", "আমার শিক্ষকের বেতন বন্ধ কেন" ইত্যাদি লেখার প্ল্যাকার্ড ছিল।
এ সময় কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী শিক্ষক আবদুল আলীম তাঁর বক্তব্যে বলেন , গত ডিসেম্বর মাস থেকে আজ জানুয়ারির ২৭ তারিখ কিন্তু এখনও আমরা বেতন পাইনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন কোনো জায়গা নাই যেখানে আমরা যায়নি।
মনে হচ্ছে আমরা ভিক্ষা চাইতে এসেছি। বাংলাদেশে সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত স্কুল কলেজে ঠিক মতো বেতনভাতা পাচ্ছে কিন্তু আমরা কেন পাচ্ছি না?যেসময়ে ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে ক্লাসরুমে থাকার কথা সেসময়ে মাঠে নামতে হচ্ছে। এটা শিক্ষকদের মান ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।
প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক মুহ. মুজাম্মিল হক মোল্লাহ বলেন, আমরা শিক্ষকরা সিন্ডিকেট থেকে নিয়োগ প্রাপ্ত। ১৯৯৬ সাল থেকে প্রতিষ্ঠিত হয়ে ২৮ বছর হয়েছে, এতদিন পর্যন্ত বেতন বন্ধ ছিলো না। হঠাৎ মঞ্জুরি কমিশনের কথা বলে দুই মাস ধরে বেতন বন্ধ রেখেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সবাই বেতন পাচ্ছে শুধু আমার বেতন পাচ্ছি না।
মঞ্জুরি কমিশন সারা বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল এন্ড কলেজ কে ২০ লক্ষ টাকা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে চালিয়ে নিতে বলেছে। অন্যান্য সকল বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল এন্ড কলেজ তাদের বেতন পেলেও আমরা ডিসেম্বর জানুয়ারিতে এখন পর্যন্ত বেতন পাইনি। আমাদের মোট ১২ জন শিক্ষক এবং ৩ জন কর্মচারী রয়েছে। প্রায় চারশতাধিক শিক্ষার্থী আমাদের। গত ১৭ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন বরাবর বেতনাদি স্থায়ী করার জন্য দরখাস্ত দিলেও কোনো সুরাহা পায়নি।
এ বিষয়ে আইআইইআর এর পরিচালক অধ্যাপক ড. মামুনুর রহমান বলেন, আমরা বেতন দেয়ার দায়িত্বে নেই আমরা শুধু ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে। তবুও আমরা আইআইইআর থেকে ধার হিসেবে তাদেরকে এতোদিন বেতন দিয়েছি।
তবে আমাদের ইন্সটিটিউটের অন্তর্ভুক্ত অন্যান্য প্রোগ্রামে যে খণ্ডকালীন শিক্ষক রয়েছে তাদের বেতন দিতে আমাদের দুই মাস ধরে স্কুলের বেতন বন্ধ রাখতে হয়েছে। নয়তো অন্যান্য প্রোগ্রাম চালাতে ব্যহত হচ্ছিলো। তবে স্কুলের শিক্ষকদের বেতন দেয়ার দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। আমরা ধার হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়কে এতোদিন টাকা দিয়েছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, ইউজিসির প্রতিনিধিদের বলেছি বেতন চালু রেখে কোন ব্যত্তয় থাকলে আমাদের জানাতে কিন্তু বেতন বন্ধ করে কিভাবে আমরা এদের চালাবো! আমরা কোথা থেকে দেব!
কে আমাকে ৯০ লাখ টাকা লোন দিবে! আমাকে মাত্র ২০ লাখ টাকা দিয়েছে, এতে ত আমি ২ মাসের বেশি বেতন দিতে পারব না! ইউজিসি বলেছিল এদের চাকরি হবে ইউজিসি কাঠামো অনুযায়ী হবে, কিন্তু বেতন হবে সরকারি শিক্ষকদের কাঠামো অনুযায়ী।
এখন তারাই বলছে যে, একজন স্কুলের শিক্ষক কিভাবে ৬০/৭০ হাজার টাকা বেতন পায়! আমরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কমিটি করে ২ সপ্তাহ সময় দিয়েছি বিষয়টি সমধান করার।
ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজের কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালে ইউজিসি কর্তৃক স্মারকলিপির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক এডুকেশন এন্ড রিসার্চের (আইআইইআর) অধীনে ইবি ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজের শুরু থেকে অদ্যাবধি নিয়োজিত জনবলকে আত্মীকরণ করা হয়। এছাড়াও বেতন কাঠামোও সরকারি স্কুল এন্ড কলেজের জনবলের বেতনকাঠামোর অনুরূপ হবে বলে অনুমোদন করা হয়।
প্রকাশক : মোহাম্মদ বদরুজ্জামান তালুকদার
সম্পাদক : খান মোহাম্মদ সালেক
Copyright © 2025 Daily Dhaka Press. All rights reserved.