এইচ এম বাবলু , বাউফল প্রতিনিধি: পটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলার দাশপাড়া ইউনিয়নের খাজুরবাড়িয়া গ্রামে ইউপি চেয়ারম্যানের দেওয়া ভূয়া ওয়ারিশ সনদপত্র দিয়ে জমি নামজারি (মিউটেশন) করিয়ে কয়েকটি পরিবারকে বাড়ি ছাড়া করার পায়তারা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এনিয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনারের(ভূমি) কাছে আবেদন করেও কোন সুফল পায়নি ওই পরিবারগুলো।
অনৈতিকভাবে চেয়ারম্যানের দেয়া ভূয়া ওয়ারিশসনদপত্র এবং সহকারী কমিশনারের এক গুয়েমির কারণেই হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ জানান ভূক্তভোগী পরিবারগুলো।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, উপজেলার দাসপাড়া ইউনিয়নের খাজুরবাড়িয়া গ্রামের ১২২ নং জেএলের ১২১৯ খতিয়ানের ৬৬০৪, ৭৩৪৬, ও ৭৩৪৭ এবং ১২২০ খতিয়ানের ৬৬০১, ৬৬০৪, ৬৬০৮ এবং ৬৬২৪ নং দাগের মোট ৫.৭৮ একর জমির পৈত্রিক মালিক যথাক্রমে গোকুল মন্ডল, সুধন্য মন্ডল, তপন মন্ডল এবং সুদেব মন্ডল।
সিএস, আরএস এবং এসএ খতিয়ানেও তাদের রেকর্ড ঠিক রয়েছে। পরিবারগুলো পূর্বপুরুষ থেকে ওই জমি ভোগ-দখল করে আসছেন। দীর্ঘদিন ধরে ওই বাড়িতে সুবল মিস্ত্রি নামে এক ব্যক্তি পরিবার নিয়ে ওকরাইত ( অন্যের জমিতে বসবাস) হিসেবে বসবাস করতেন। ২০২৩ সালের ফেব্রæয়ারি মাসে ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসেনের কাছ থেকে নিজেদের ওয়ারিশ দাবি করে ভূয়া ওয়ারিশ সনদপত্র নেন।
একই বছর মে মাসে তৎকালীন সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. বায়েজেদুর রহমানের মাধ্যমে নামজারি করিয়ে ২০২৭ নম্বর নতুন একটি খতিয়ান খোলেন এবং নিজেদের জমির মালিক দাবি করতে শুরু করেন। ভূয়া ওয়ারিশ সনদ ও নামজারির বিষয়দি জমির প্রকৃত মালিকেরা জানতে পারলে নামজারি বাতিল চেয়ে সহকারী কমিশনার প্রতীক কুমার কুন্ডুর কাছে আবেদন করেন।
সহকারী কমিশনার প্রতীক কুমার কালাইয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের উপসহকারী কর্মকর্তা মো. হামিদুল হক বাচ্চুকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। ২০২৩ সালের ৮ নভেম্বর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন তদন্ত কর্মকতা। তদন্ত প্রতিবেদনে (স্বারক নং ৭৯/কালা/তারিখ-৮/১১/২৩ খ্রি:) বলা হয়, সুবল মিস্ত্রিরা ভূয়া ওয়ারিশ সনদপত্র দিয়ে প্রতারণা করে নামজারি করিয়েছেন। তবে বিষয়টি আমলে না নিয়ে সহকারী কমিশনার প্রতীক কুমার নামজারি বহাল রাখেন।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, সুবল মিস্ত্রিরা দালালের টাকা দিয়ে চেয়ারম্যানের কাছ থেকে ভূয়া ওয়ারিশনামা দিয়েছেন। তা দিয়ে গোপনে জমি মিউটেশন করে। মিউটেশন বাতিলের আবেদন করা হলে, এসিল্যান্ড প্রতীক কুমার পৌরশহরের বিএনপির প্রভাশালী এক নেতার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ভূয়া মিউটেশন বহল রাখেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী কমিশনার(ভূমি) প্রতীক কুমার জানান, আবেদনকারীগণ কোন ওয়ারিশ সার্টিফিকেট দেখাতে পারেনি। তাই পূর্বের আদেশ বহাল রেখেছি। ‘তদন্ত প্রতিবেদনে ভূয়া ওয়ারিশ সনদপত্র দিয়ে নামজারি করা হয়েছে বলার পরেও কিভাবে এ নামজারি বহল থাকে’ এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।
সুদেব মন্ডল নামের এক ভুক্তভোগী বলেন, নিজ জমিতে পরবাস হয়ে পড়েছি। খেতে চাষাবাদ করতে পারছি না। ঠিকমত সংসারও চালাতে পারছি না। ভূয়া ওয়ারিশ নামা বাতিল করে প্রকৃত ওয়ারিশনামা দেওয়ার জন্য চেয়ারম্যানের কাছে বহুদিন ধরে ঘুরেও কাজ হচ্ছে না। চেয়ারম্যানের সঙ্গপাঙ্গরা এর জন্য ১লাখ টাকা দাবি করেছেন। টাকাও দিতে না পারায় ওয়ারিশনামাও পাচ্ছি না।
এবিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, আমাকে ভুল বুঝিয়ে সুবল গংরা ওয়ারিশ সার্টিফিকেট নিয়েছে। ওই সার্টিফিকেট আমি বাতিল করে দিব। কেনো দিচ্ছেন না এবং টাকা চাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওয়ারিশ সার্টিফিকেট দিয়ে দিব তবে আমি কোনো টাকা পায়সা চাইনি। কেউ চাইলে তার দায় আমার না।
প্রকাশক : মোহাম্মদ বদরুজ্জামান তালুকদার
সম্পাদক : খান মোহাম্মদ সালেক
Copyright © 2025 Daily Dhaka Press. All rights reserved.