Site icon Daily Dhaka Press

নিপীড়ক জনির তদন্ত রিপোর্টের তথ্য জানতে চাইলে মুখ ফিরিয়ে নেয় জাবি ভিসি

রাজিব রায়হান, জাবি প্রতিনিধি:

২০২২ সালের নভেম্বর মাসে ঘটনা। আজ ২০২৪ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি। সময় যাচ্ছে চলে কিন্তু জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান জনির বিচার হচ্ছে না।

তার বিরুদ্ধে তিন তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও এখন আলোর মুখ দেখে নি। তদন্ত কমিটি পরে অধিকতর তদন্ত কমিটি গঠন করেও শিক্ষকদের ছত্রছায়ায় থেকে গেছেন তিনি।

বর্তমানে জনি ৫ মাসের অধিক সময় ধরে ভিসি নূরুল আলমের পকেটে আশ্রয় নিয়ে আছে। তিনি অতি সযত্নে তাকে লালন পালন করছেন।

তাকে এ বিষয়ে সাংবাদিকরা বার বার প্রশ্ন করলেও তিনি নিশ্চুপ থেকেছেন । কোন আপডেট কখনও দেননি। এবার এক বহিরাগত এক দম্পতিকে ডেকে এনে স্বামীকে আটকে রেখে তার স্ত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত হয়েছে জাবি ছাত্রলীগের কয়েজন নেতা।

তাদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে নিপীড়ক মাহমুদুর রহমান জনির বিষয়ে ভিসিকে বারবার প্রশ্ন করা হলেও তিনি মুখ খোলেন নি। তিনি অসুস্থতার কথা বলে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।

নিপীড়কে বাচাঁতে যেন তিনি মরিয়া। নিপীড়কের বিরুদ্ধে একটি কথাও নয় এমন নীতি তিনি অবলম্বন করেছেন।

এর আগে গত বছরের ১০ আগস্ট সন্ধ্যায় ভিসি নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় স্ট্রাকচার্ড কমিটি গঠন করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষতা ও শৃঙ্খলা অধ্যাদেশ অনুযায়ী স্ট্রাকচার্ড কমিটি ৬ সদস্য বিশিষ্ট হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি সভাপতি ও রেজিস্ট্রার সদস্য সচিব হিসেবে থাকেন।

এই কমিটি কতদিনের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিবেন ও জনির বিচার শুরু করবে এমন কোন তথ্য উল্লেখ থাকেনা। তাই দীর্ঘ ৫ মাস অতিবাহিত হলেও এর কোন সুরাহা হয়নি।

এছাড়াও নিয়ম অনুযায়ী স্ট্রাকচার কমিটিতে আছেন জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক নুহু আলম, পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের সভাপতি মাহফুজা মোবারক, সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক লায়েক সাজ্জাদ এন্দেল্লাহ ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক আশরাফ-উল আলম।

এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির সদস্য জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক নুহু আলম বলেন, প্রথম দুইটি কমিটির তদন্ত রিপোর্ট পর্যালোচনা করে আমরা ৬টি আলোচনা সভা করেছি।

আমাদের কাজ চলমান। ‘মাহমুদুর রহমান জনিকে কেন অভিযুক্ত করা হবে না’ এমন রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে।

তিনি তার উত্তরও দিয়েছে। আগামী সিন্ডিকেটে এই বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা ছিল যা স্থগিত করা হয়েছে।

এ বিষয়ে দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, প্রশাসনের আশ্রয়ে মাহমুদুর রহমান জনি আজও ক্যম্পাসে। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ি তার নৈতিক স্থলক হয়েছে। তার বিচার আদৌ হবে কিনা আমরা জানি না।

এর বিষয়ে সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক লায়েক সাজ্জাদ এন্দেল্লাহ বলেন , বিষয়টি তদন্তধীন তাই এই বিষয়ে কোন মন্তব্য করা ঠিক হবে না। তবে তদন্তের কাজ চলমান।

ছাত্র ইউনিয়নের আহ্বায়ক আলিম মাহমুদ বলেন, আমরা দীর্ঘ বছর ধরে নিপীড়ক জনির বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আসছি । তদন্তের পর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু কোন ফল আমরা পাই নি । আমরা জানি না ভিসি লজ্জা পান কীনা। কিন্তু আমরা লজ্জা পাই তাকে নিয়ে।

আগে বিগত ২০১৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষক মাহমুদুর রহমান জনি ২০১২ সালে জাবি ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। তার বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক নারীর সঙ্গে ‘অনৈতিক’ সম্পর্ক স্থাপনের অভিযোগ।

২০২২ সালের নভেম্বর মাসে একই ডিপার্টমেন্টের ৪২তম ব্যাচের ছাত্রী ও সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত এক নারী শিক্ষকের সঙ্গে অফিসকক্ষে তোলা তার অন্তরঙ্গ একটি ছবি ফাঁস হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর দেয়ালে পোস্টারিং করা হয়।

এরপর জনির বিচারের দাবিতে আন্দোলন করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একাংশ। পরে গত ৩১ জানুয়ারির মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কমিটির রিপোর্ট পূর্ণাঙ্গ হয়নি মর্মে পুনরায় স্পষ্টীকরণ কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

চলতি বছর জানুয়ারিতেও একই বিভাগের ৪৩ ব্যাচের আরেক ছাত্রীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে জনির পক্ষে ‘দায়মুক্তি’ পত্র লেখানোর অভিযোগ ওঠে।

সবশেষ ৯ ফেব্রুয়ারি অভিযোগের ঘটনায় সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে জড়িত শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান বরাবর স্মারকলিপি দেয় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ।

Exit mobile version