
নিজস্ব সংবাদদাতা: টঙ্গীর তুরাগ তীরে আজ শুক্রবার শুরু হয়েছে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব।
মাওলানা সা’দের ছোট ছেলে মাওলানা ইলিয়াস বিন সা’দ কান্ধলভীর আ’মবয়ানের মধ্য দিয়ে ইজতেমা শুরু হয়। আগামী রোববার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে তা শেষ হবে।
ইজতেমায় ইতোমধ্যে ধর্মপ্রাণ মুসল্লির ঢল নেমেছে। আজ জুমার জামাতে অংশ নেবেন লাখো মুসল্লি। মাওলানা সা’দের বড় ছেলে মাওলানা ইউসুফ বিন সা’দ কান্ধলভী এতে ইমামতি করবেন।
এদিকে বুধবার দুপুর থেকেই জামাতবদ্ধ দেশি-বিদেশি মুসল্লিরা ইজতেমা ময়দানে আসতে শুরু করেন। দেশের ৬৪টি জেলার মুসল্লিরা তাদের জন্য নির্ধারিত খিত্তায় অবস্থান নিয়ে ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল রয়েছেন।
ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে বিশ্বের শতাধিক দেশের প্রায় ১২-১৪ হাজার বিদেশি মেহমান আখেরি মোনাজাতে অংশগ্রহণ করবেন বলে আয়োজক কমিটির শীর্ষ মুরব্বিরা আশা প্রকাশ করেছেন।
বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত অর্ধশতাধিক দেশের ৩ হাজার ২৬৩ জন বিদেশি মেহমান ময়দানে তাদের জন্য নির্ধারিত নিবাসে অবস্থান নিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার বয়ান করলেন যারা : বৃহস্পতিবার বাদ ফজর মুসল্লিদের উদ্দেশে এস্তেকবালি (স্বাগত) বয়ান করেন নিজামুদ্দিন মারকাজের মাওলানা শরিফ আহমেদ।
তার বয়ান বাংলায় অনুবাদ করেন বাংলাদেশের মাওলানা শেখ আব্দুল্লাহ মনসুর। বাদ জোহর বয়ান করেন পাকিস্তানের মাওলানা হারুনুর রশিদ। তার বয়ান বাংলায় অনুবাদ করেন বাংলাদেশের মাওলানা আজিম উদ্দিন।
বাদ আসর বয়ান করেন ইজতেমা আয়োজক কমিটির শীর্ষ মুরব্বি ওয়াসিফুল ইসলাম। বাদ মাগরিব বয়ান করেন ভারতের মাওলানা আব্দুস সাত্তার। তার বয়ান বঙ্গানুবাদ করেন বাংলাদেশের মাওলানা মুফতি জিয়া বিন কাশেম।
আসেননি মাওলানা সা’দ কান্ধলভী : ইজতেমা ময়দানে এবারও আসতে পারেননি তাবলিগ জামাতের শীর্ষ মুরব্বি মাওলানা সা’দ আহমদ কান্ধলভী। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইজতেমা আয়োজক কমিটির সদস্য হাজি মনির হোসেন।
তিনি যুগান্তরকে জানান, মাওলানা সা’দ সাহেবের বিষয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ে চার সদস্যবিশিষ্ট কমিটির আলোচনা হয়েছে। এখনো আশানুরূপ কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
ময়দানে মাওলানা সা’দের তিন ছেলে : ইজতেমায় মাওলানা সা’দের তিন ছেলে এসেছেন। তারা হলেন-মাওলানা ইউসুফ বিন সা’দ কান্ধলভী, মাওলানা সাঈদ বিন সা’দ কান্ধলভী ও মাওলানা ইলিয়াস বিন সা’দ কান্ধলভী।
পুলিশের ব্রিফিং : বিশ্ব ইজতেমায় বিদেশি মেহমানদের নিরাপত্তায় স্থাপিত গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের বিশেষ নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সামনে দুপুরে এক ব্রিফিংয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মাহবুব আলম বলেন, প্রথম পর্বের মতো দ্বিতীয় পর্বেও জিএমপির পক্ষ থেকে ৬ হাজার পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
পাশাপাশি র্যাব, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য, ট্যুরিস্ট পুলিশ, নৌপুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রায় ১৫ হাজার সদস্য মোতায়েন রয়েছে।
ধর্মমন্ত্রীর ব্রিফিং : দুপুরে ইজতেমা ময়দান পরিদর্শন করেন ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক খান। এ সময় তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি তাবলিগ জামাতের সবারই চিন্তা-চেতনা, উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য একটাই-তা হলো আল্লাহকে খুশি ও রাজি করা। তাবলিগ জামাতের কেউই বিশৃঙ্খলা করার মতো অসৎ চিন্তা মাথায় নিয়ে ময়দানে আসেন না। মাওলানা সাদ কান্ধলভীর বিষয়ে তিনি বলেন, মাওলানা সাদ সাহেবের পক্ষে তাবলিগ জামাতের যারা কাজ করছেন তারা চেষ্টা করছেন তাকে আনার জন্য।
সরকারের সঙ্গে তাদের কথা চলছে, আমরাও আলোচনা করছি। সমঝোতার মাধ্যমে হয়তো তাকে আনা সম্ভব হতে পারে। আমরা সেই চিন্তাটাই করছি।
ইজতেমায় মুশফিকুর রহিম : বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৫টায় ইজতেমা ময়দানে এসেছেন।
এ সময় তাকে অভ্যর্থনা জানান ইজতেমা আয়োজক কমিটির কাকরাইলের শূরা ওয়াসিফুল ইসলামের ছেলে মুফতি ওসামা ইসলাম ও ইজতেমা ময়দানের মিডিয়া সমন্বয়কারী মোহাম্মদ সায়েম।
মুশফিক ইজতেমা ময়দানে তিন দিন অবস্থান করে বয়ান শুনবেন এবং নফল ইবাদত, জিকির-আসকারে মশগুল থাকবেন।
তিন মুসল্লির মৃত্যু : ইজতেমায় তিন মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন-শেরপুর জেলা সদরের মৃত মহেজ উদ্দিনের ছেলে আবুল কালাম (৬৫), নেত্রকোনার কেন্দুয়া থানার কুতুবপুর গ্রামের মৃত সুলতানের ছেলে আব্দুল হেলিম (৬২) ও দিনাজপুর জেলার নবাবগঞ্জ থানার শেরনগর গ্রামের মৃত ইউসুফ উদ্দিনের ছেলে জহির উদ্দিন (৭০)। তারা উভয়ে বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যান।
ইজতেমা আয়োজক কমিটির শীর্ষ মুরব্বি প্রকৌশলী শাহ মোহাম্মদ মুহিবুল্লাহ বলেন, দেশ-বিদেশের কয়েক লাখ ধর্মপ্রাণ মেহমান ময়দানে নির্ধারিত খিত্তায় অবস্থান নিয়ে ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল রয়েছেন। রোববার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে ইজতেমা শেষ হবে, ইনশাআল্লাহ।