Site icon Daily Dhaka Press

হাতিমারা কৃত্রিম জলাশয় ও চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য

নিজস্ব সংবাদদাতা: প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ ও বন্যপ্রাণী রক্ষায় বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ এমেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট ১৯৭৪ এর সংশ্লিষ্ট ধারা অনুযায়ী ১৯৮৬ সালে গেজেট নোটিফিকেশন এর মাধ্যমে চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি চট্টগ্রামের বাঁশখালী, লোহাগাড়া ও সাতকানিয়া উপজেলা এবং কক্সবাজারের চকরিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত।

জীব বৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ এই পাহাড়ী অঞ্চলটি বিরল প্রজাতির এশিয়ান হাতির প্রজনন কেন্দ্র এবং অনন্য বৈশিষ্ট্য সমৃদ্ধ মা গাছের সুষ্ঠু সংরক্ষণের

জন্য ২০১২ সালে চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ইকুয়েটর পুরস্কারে ভূষিত হয়। এছাড়াও এ বনে বসবাস করে মায়া হরিণ, শুকর, বন্য কুকুর, বন্য ছাগল বা সম্বর, সজারু, খরগোশ, গেছো বাঘ, বাগডাস, বনমোরগ, মথুরা, কাঠ ময়ূর, ৩/৪ প্রজাতির বানর ও হনুমান, গুইশাপ, প্রায় দুই শতাধিক প্রজাতির পাখি ইত্যাদি। এ বনে আছে অতি মূল্যবান গর্জন, অর্জুন, চাপালিশ গামারি, হাতির খাদ্যোপযোগী বিভিন্ন প্রজাতির বাঁশ, পশুপাখির খাদ্যোপযোগী বিভিন্ন প্রজাতির ফলদ ও বনজ গাছ।

এতদসত্বেও, প্রয়োজনাতিরিক্ত পাহাড় কেটে রেল লাইন স্থাপন, বনের ভেতর অবৈধ বসতি প্রতিষ্ঠা, হাজার হাজার একর জমি বন্দোবস্ত ও

বেআইনি কেনাবেচা, পাহাড় কাটা, প্রাকৃতিক বন ও বন্যপ্রাণী নির্বিচারে নিধন করে অননুমোদিত ইটভাটায় সরবরাহ করা এবং সামাজিক

বনায়নসহ বিভিন্ন প্রকল্পের নামে সেখানে নেতিবাচক প্রভাবে প্রাকৃতিক ভারসাম্য হুমকির মুখে ঠেলে দেয়ার ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। এমনকি

হাতির চলাচলের রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা ও হাতি মেরে ফেলার মতো ঘটনা ঘটেছে এবং বনের বিশাল এলাকাজুড়ে বাঁধ দিয়ে কৃত্তিম

জলাশয় তৈরি করার মত গর্হিত কাজ চুনতিতে ঘটেছে।

উল্লেখ্য, গত ২৬ জানুয়ারি, ২০২৪ ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) এর উপদেষ্টা কমিটির সভাপতি সুলতানা কামালের নেতৃত্বে ধরা’র আহ্বায়ক

কমিটির সহ-আহ্বায়ক শারমীন মুরশিদ, ধরা’র আহবায়ক কমিটির সদস্য সচিব শরীফ জামিল, ধরা’র আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ফজলুল

কাদের চৌধুরী ও আব্দুল করিম চৌধুরী কিম এবং চুনতি রক্ষায় আমরা’র সমন্বয়ক সানজিদা রহমানের সমন্বয়ে একটি দল চুনতি রেঞ্জের হারবাং বিট অফিস, সাতগড় বিট অফিস, চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য রেঞ্জ, বিট সংলগ্ন রেললাইনসহ বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন ও

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেন। দুপুরে তাঁরা সাতগড় বিট অফিস চত্তরে তেজবল, গর্জন, হরিতকি গাছের চারা রোপন করেন।

বর্তমানে, সংরক্ষিত এই বনাঞ্চল বন্য প্রাণীদের নয় বরং তা ডাকাত ও অবৈধ মাদক ব্যবসায়ীদের অভয়াশ্রমে পরিণত হয়েছে। দুষ্কৃতকারীরা মূলত: রাত থেকে ভোরবেলা পর্যন্ত মাটি/পাহাড় কাটা, বালি উত্তোলন, গাছকাটা এ সমস্ত পরিবেশ বিধ্বংসী কাজ করে থাকে। এসময়ে স্থানীয় মানুষ বন বিভাগ ও ভূমি অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের যোগাযোগ করলেও দ্রুত ও কার্যকর সাড়া পান না। এখানে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা ও সক্ষমতা নেই। ফলে অপরাধীরা আরো প্রশ্রয় পায় এবং এসমস্ত অন্যায় কাজ নির্দ্বিধায় চালিয়ে যায়। বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য আইন ((ধারা: বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২, চতুর্থ অধ্যায়- অভয়ারণ্য সম্পর্কে বিধিনিষেধ ১৪।১ (ছ), (ট), (ঠ), (ড), (২)) এর বরখেলাপ করে অভয়ারণ্যের অভ্যন্তরে কি করে সামাজিক বনায়ন প্রকল্প, পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর বিদেশী উদ্ভিদ রোপন, গাছ কাটা, জল প্রবাহের গতি পরিবর্তন, নিকটবর্তী এলাকায় ইটভাটা স্থাপন ইত্যাদি করা হলো তা আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।

প্রতিনিধিদল পরিদর্শন শেষে ফিরে আসার পরে গত ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ তারিখে উক্ত জলাশয়, যাকে “হাতিমারা কৃত্তিম হ্রদ” নামে উল্লেখ করা হয়েছে, তার বাধ কেটে দেয়া হয়। আকস্মিকভাবে নিম্নবর্তী ছড়া, ঢালে, প্লাবন অঞ্চলে কিংবা সমতলে গড়ে ওঠা বসবাসকারীদের এই বাঁধ কেটে দেবার ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হতে হয়।

জন-সম্পৃক্ত ও বিজ্ঞানভিত্তিক একটি সমন্বিত পরিকল্পনার স্বল্পমেয়াদী, মধ্যমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী নির্মোহ এবং স্বচ্ছ বাস্তবায়নের মাধ্যমে চুনতি রক্ষায় দাবি জানাই। ইতোমধ্যে ঘটে যাওয়া সংশ্লিষ্ট ঘটনা ও পদক্ষেপসমূহের ন্যায্য বিশ্লেষণ ও দোষীদের দ্রুত শাস্তির দাবি জানিয়েছে ।

Exit mobile version