টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি : মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মি ও সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষে মর্টার শেল ও মুহুর্মুহু গুলির শব্দে কাঁপছে কক্সবাজারে টেকনাফের নাফ নদ সীমান্ত। আতঙ্ক বিরাজ করছে সীমান্তের লোকজনের মধ্যে।
আজ শুক্রবার ভোর থেকে টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা, সাবরাং ও সেন্টমার্টিন সীমান্তে ভারী মর্টার শেলের শব্দ পাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
টেকনাফ পৌরসভার নাফ নদের কাছাকাছি বসবাস করেন মোহাম্মদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘শুক্রবার ভোর থেকে গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। ভোরে অনেকের ঘুম ভেঙেছে ওপার থেকে আসা বিকট শব্দে। সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের বশিপাড়া (বকশিপাড়া) থেকে মুহুর্মুহু প্রচণ্ড গোলার বিকট শব্দ আসছে। ঘরবাড়ি কাঁপছে। অনেক সময় মনে হয় ভূমিকম্পন হচ্ছে।’
টেকনাফ-২ বিজিবি অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ সমকালকে বলেন, ‘সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে ব্যাপক গোলাগুলির খবর পেয়েছি। ফলে আমরা টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ, সেন্টমার্টিনসহ সীমান্তে টহল বৃদ্ধির পাশাপাশি নজরদারি বাড়িয়েছি। এছাড়া গতকাল (বৃহস্পতিবার) স্থানীয়দের মাধ্যমে শাহপরীর দ্বীপের ওপারে মিয়ানমারের মংডুতে হেলিকপ্টার ওড়ার খবর পেয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘সীমান্তের ওপারের গ্রামগুলোতে দেশটির জান্তা সরকার এবং আরাকান আর্মির মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ চলছে। দুই পক্ষই ভারী অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করছে। এতে সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী বাড়িঘর কেঁপে উঠছে।’
সীমান্তে নজর রাখেন এমন একজন সরকারি কর্মকর্তা বলেন, ‘টেকনাফ সীমান্তের ওপারে জান্তা সরকার এবং আরাকান আর্মির মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ চলছে। এতে সীমান্তের লোকজনের মাঝে ভয় কাজ করছে। বিকট শব্দে ভূমিকম্পের মতো অনুভূতি হচ্ছে।’
সীমান্ত এলাকার মানুষ বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সংঘাত চলছিল। মাঝপথে বন্ধ হলেও এক সপ্তাহ ধরে সীমান্ত আবার অশান্ত হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে টেকনাফ সীমান্তের হ্নীলা, সাবরাং ও সেন্টমার্টিনে নাফ নদের বিপরীতে মিয়ানমার সীমান্তে প্রতিদিনই গোলাগুলি-মর্টার শেলের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। প্রায়ই হ্নীলার জাদিমুড়া, দমদমিয়া, মৌলভীবাজার, ফুলের ডেইল সাবরাংয়ের নয়াপাড়া, মৌলভীপাড়া, নাজিরপাড়া, শাহপরীর দ্বীপের জালিয়া পাড়া, পৌরসভার জালিয়া পাড়া, চৌধুরী পাড়া, দক্ষিণ জালিয়া পাড় এলাকার নাফ নদের সীমান্তে থেমে থেমে ভারী গুলিবর্ষণের বিকট শব্দ শুনতে পান তারা।
শাহ পরীর দ্বীপ সীমান্তের বাসিন্দা মো. রাসেল বলেন, ‘নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করে নাই। তবে অনুপ্রবেশের সম্ভাবনা রয়েছে।’
সেন্টমার্টিন দ্বীপে বসবাসকারী মো. ইসহাক বলেন, ‘আজকের মতো এমন শব্দ আগে কখনো পাইনি। দ্বীপবাসী ভয়ে আছে।’
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, ‘ওপারের গোলার শব্দ আমার বাড়ি থেকে পাওয়া যাচ্ছে। সীমান্তের আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্তক অবস্থা রয়েছে। মানুষের মাঝে ভয় কাজ করছে। আমরা সীমান্তের সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর রাখছি।’