Site icon Daily Dhaka Press

জাবিতে নবীনদের জন্য অপেক্ষা করছে মাদক, গণরুম, যৌন নিপীড়ক!

রাজিব রায়হান, জাবি প্রতিনিধি : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন্ন ৫৩ ব্যাচের নবীন শিক্ষার্থীদের জন্য অপেক্ষা করছে মাদক, গণরুম, ও যৌন নিপীড়ক। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিরাপদ ক্যম্পাস গড়তে ইতিমধ্যে ব্যর্থ হয়েছে।

৫ কর্মদিবসের মধ্যে অছাত্রদের হল ছাড়তে বাধ্য করা আইন সিন্ডিকেট সভায় পাশ হলেও ১০ কর্মদিবস পার হলেও ছাত্রদের রুম লিস্ট এখনও করতে পারেনি প্রশাসন।

অন্যদিকে সাংবাদমাধ্যমে মাদক ব্যবসায়ী ছাত্রদের নাম ও রুম নম্বরসহ উঠে আসলেও প্রশাসন তাদের ব্যাপারে কোন ব্যবস্থা নেয় নি। এদিকে ৫২ ব্যাচের নবীন শিক্ষার্থীদের গেস্টরুম করার প্রমাণ পাওয়া গেছে।

গতকাল ১৮ ফেব্রুয়ারি শহীদ রফিক-জব্বার হল ও মীর মশাররফ হোসেন হলে গেষ্টরুম করার অভিযোগ উঠেছে। এর আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলেও নবীন শিক্ষার্থীদের গনরুম করার অভিযোগ পাওয়া যায়।

এদিকে যৌন নিপীড়ক শিক্ষক মাহমুদুর রহমান জনিকে শাস্তি দিতে প্রশাসন নানান টালবাহান শুরু করেছে। এই যৌন নিপীড়ক শিক্ষক এখন নিয়মিত ক্লাস পরিক্ষা নিচ্ছে।যা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কলঙ্কজনক বলে আখ্যা দিয়েছে ‘নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চ’।

পাঁচ দফা দাবিতে টানা ১৭ দিন ধরে আন্দোলন করে যাচ্ছে ‘নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চের ব্যানারে শিক্ষক- শিক্ষার্থীরা। আজ ১৯ তারিখও মশাল মিছিল করেছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সংগঠন ‘নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চ’।

নবীন শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ ক্যম্পাস গঠন করতে ব্যর্থ হলে তারা ভর্তি পরিক্ষা হতে দিবেন না। তাদের দাবি নবীন শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ ক্যাম্পাস গঠন করা না হওয়া পর্যুন্ত তারা আন্দোলন চলবে না।

সন্ধ্যা ৭টায় মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের পাদদেশ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সড়ক হয়ে উপাচার্যের বাসভবন প্রদক্ষিণ করে।

পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্ত্বরে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে মিছিলটি শেষ হয়। এতে প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থী অংশ নেন।

মঞ্চের পাঁচ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে- ধর্ষক ও তার সহায়তাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা; মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের হল থেকে বের করে গণরুমের অবসান ও নিয়মিত শিক্ষার্থীদের আবাসন নিশ্চিত করা র‌্যাগিং এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনা ; যৌন নিপীড়ক শিক্ষক মাহমুদুর রহমান জনির বিচার নিষ্পত্তিসহ ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সময়ে অপরাধে অভিযুক্তদের বিচারের আওতায় আনা; নিপীড়কদের সহায়তার অভিযোগে অভিযুক্ত প্রক্টর ও মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রাধ্যক্ষের অপরাধ তদন্ত করা এবং তদন্ত চলাকালে প্রশাসনিক পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করা; মাদকের সিন্ডিকেট চিহ্নিতপূর্বক জড়িতদের ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণাপূর্বক তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

মিছিল পরবর্তী সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী আরিফ সোহেল বলেন, ভর্তি পরীক্ষার জন্য শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা আসা শুরু করার আগেই ক্যাম্পাসকে তাদের জন্য নিরাপদ করতে হবে।

আমাদের পাঁচ দফা দাবি বাস্তবায়ন হলেই ক্যাম্পাস হবে তাদের জন্য নিরাপদ। দাবি বাস্তবায়ন না হলে আমরা ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত করতে বাধ্য হব এবং এর দায়ভার সম্পূর্ণ প্রশাসনকে নিতে হবে।

ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আলিফ মাহমুদ বলেন, যদি আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি সিন্ডিকেট সভায় নিপীড়ক শিক্ষক মাহমুদুর রহমান জনির উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত না করা হয়, তবে সিন্ডিকেট সভায় অবস্থানরত সকল সদস্যকে ঘেরাও করা হবে ।

কোনোভাবেই রেজিস্ট্রার অফিস থেকে বের হতে দেওয়া হবে না। পাশাপাশি ভর্তি পরীক্ষার আগেই আমাদের অন্যান্য দাবিগুলোও নিশ্চিত করতে হবে।

মঞ্চের সদস্য সচিব মাহফুজুর রহমান মেঘ বলেন, আমাদের যৌক্তিক দাবিগুলোর কোন ফয়সালা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দিতে পারেনি। প্রশাসন প্রমাণ করতে পারবে না আমাদের দাবিগুলোর একটি শব্দ অযৌক্তিক।

যেখানে নিপীড়ক শিক্ষক এখনো বিচারহীনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে, সেই তো মুস্তাফিজের মতো ধর্ষকের অনুপ্রেরণা জোগায়। আমরা আগামী সিন্ডিকেটে এসব নিপীড়ক, মাদক চোরা চালানকারীদের বিরুদ্ধে একটি দৃঢ় ঘোষণা চাই। তাদেরকে উপযুক্ত শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

সমাবেশে শিক্ষকদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ রেজাউল রকিব বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের এ পাঁচ দফা দাবির কোনো একটি যদি অযৌক্তিক হয় তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের জানাতে পারে।

আর যদি দাবি যৌক্তিক হয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আমাদের দাবিগুলো মেনে নিতে হবে। দ্রুত এর একটি সমাধান বের করতে হবে প্রশাসনকে।

মঞ্চের অন্যতম সংগঠক হাসিব জামানের সঞ্চালনায় এতে আরো বক্তব্য রাখেন কনজ কান্তি রায়, সোহাগী সামিয়া প্রমুখ।

Exit mobile version