Site icon Daily Dhaka Press

দুবাই মল ও বুর্জ খলিফা

ছবি- ডেইলি ঢাকা প্রেস

ছবি- ডেইলি ঢাকা প্রেস

খান মোহাম্মদ সালেক, দুবাই থেকে ফিরে-(পূর্ব প্রকাশিতের পর) 

-প্রকৃতি আর অধুনিক নগরায়নের সংমিশ্রণে এক মনোরম দৃশ্য উপভোগ করতে করতে বিকেলে আমরা পৌঁছে গেলাম ডাউন টাউনে যেখানে রয়েছে দুবাই মল ও বুর্জ খলিফাসহ অনেক অত্যাধুনিক স্থাপনা। দুবাই মলে গাড়ি পার্কিং-এর জন্য কোন জায়গা পাওয়া যাচ্ছিল না। বিশাল কার পার্কের এক তলা দোতলায় রেহান মেসবাহ কয়েকবার ঘুরে শেষ পর্যন্ত গাড়ি পার্ক করার সুযোগ পেল।

আগেই বলেছি এই সফরটি ছিল আমার ব্যক্তিগত বা পারিবারিক। আমার ভাগ্নি ডা. লাবনী খান ও ওর বর রেহান মেসবাহ আমাদের ইউএই সফর ঘিরে ১০ দিনের ছুটি নিয়েছিল। বড় আপা কামরুন খান, আর দুই ভাগ্নি বনানী খান ও ডা. ইবতেসাম খান দুবাই মলে আমাদের সাথে যোগ দিলেন।

তাবৎ দুনিয়ার কেনাকাটা পাগল মানুষের জন্য দুবাই মল একটি   স্বপ্নময় জায়গা। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ এই শপিং মল এক কোটি ২০ লাখ বর্গফুট জায়গার ওপর স্থাপিত। এখানে প্রায় ১২০০ দোকান ছাড়াও রয়েছে বিশ^সেরা ব্র্যান্ডের ফ্যাশন হাউজ, বিশাল বিশাল ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। এই মলের গোল্ড সৌক বা স্বর্নের বাজার বিশ্বের  স্বর্ন ক্রেতাদের প্রিয় জায়গা।

শুধু কেনাকাটার জন্যই নয়, পর্যটকদের জন্যও এটি একটি দর্শণীয় স্থান। এখানে রয়েছে ২০টি অভিজাত হোটেল, ২২টি সিনেপ্লেক্স কয়েকশ’ রেস্টুরেন্ট। বিনোদনের জন্য রয়েছে বিশাল একুরিয়াম, আন্ডার ওয়াটার জু, শিশুদের জন্য কিন্ডাজিয়া, দুবাই ফাউন্টেন, আইস রিংক ইত্যাদি যা পরিবার নিয়ে দেখার জন্য আকর্ষণীয়।

প্রায় দেড়শ’ ফুট লম্বা, ৬০ ফুট গভীর একুরিয়ামে প্রায় তিন হাজার প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ ও অন্যান্য প্রাণী রয়েছে, হাঙ্গর রয়েছে প্রায় ৪০০। কাঁচের প্রাচীরের ভেতরে পানিতে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায় এসব প্রাণী। একুরিয়ামের পানি  স্বচ্ছ এবং এসব প্রাণীর উপযোগী করে রাখার জন্য কর্মীরা সব সময় সচেতন থাকেন।

বিশাল একুরিয়ামে সামুদ্রিক প্রাণীর খাবার দেয়ার জন্য রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। একুরিয়াম টানেলের ভেতর দিয়ে দোতলায় রয়েছে আন্ডার ওয়াটার জু। এখানে রয়েছে পিরানহা, পেঙ্গুইন, কুমির, বড় টিকটিকি, সাপসহ অনেক কিছু যা পর্যটকদের জন্য বিশেষ আকর্ষণ।
দুবাই মলের প্রতিটি দোকান বা শো রুম তৈরি হয়েছে বিশাল জায়গা নিয়ে। এসবের ইন্টেরিয়র ডিজাইনও আকর্ষণীয় যা ক্রেতাদের কাছে টানে।

বিভিন্ন দেশের সেরা ব্র্যান্ডের পণ্য সাজানো রয়েছে থরে থরে। কিছু শো-রুম রয়েছে আলাদাভাবেই নির্দিষ্ট কোন দেশের যার ইন্টেরিয়র সেসব দেশের আদলে করা এবং শোভা পাচ্ছে সেসব দেশের নামি দামি কোম্পানরি পণ্য। প্রায় সব দোকানেই ক্রেতাদের আপ্যায়ন করা হয় এরাবিয়ান চা, স্ন্যাকস, খেজুর ইত্যাদি দিয়ে। দেশ বিদেশের ক্রেতারাও আসছেন পরিবার নিয়ে এবং পছন্দের পণ্য কিনে ঘরে ফিরছেন হাসিমুখে।

এই মলের রেস্টুরেন্টগুলোতেও নানা দেশের মানুষের ভীড় এবং বিক্রি হচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নানা পদের সুস্বাদু খাবার। দুবাই মলের পাশেই বুর্জ খলিফা যা এই নগরীর একটি বিস্ময়কর আকাশচুম্বী ভবন। দুই হাজার ৭২২ ফুট উঁচু এই ভবনটি বর্তমানে বিশে^র সবচেয়ে উঁচু ভবন। এখানে রয়েছে ২০০টি ফ্লোর এবং ১৬০টি আবাসিক ফ্লোর।

রয়েছে এক হাজার ৪৪টি এপার্টমেন্ট, ১৬০ কক্ষের একটি বিলাসবহুল হোটেল, সুইমিং পুলও রয়েছে একাধিক, ১২৪ তলায় রয়েছে প্রকৃতি ও আধুনিক নগরী দেখার জন্য ব্যবস্থা। অনেকগুলো লিফটের কোন কোনটির গতি ঘন্টায় ৪০ মাইল। ভবনটির স্থাপত্যশৈলি এতটাই আকর্ষণীয় যে, দিনে এবং রাতে এটি ভিন্ন রূপ ধারণ করে। দূর থেকে মনে হয় একটি বিশাল পেন্সিল আকাশ ছুঁয়েছে। বুর্জ খলিফাকে ঘিরে রয়েছে আকর্ষণীয় পার্ক, মাঠ, বাগান, হ্রদ ইত্যাদি। আশপাশে রয়েছে আরও কিছু হাই রাইজ বিল্ডিং যার বৈশিষ্ট ভিন্ন ভিন্ন।

সন্ধ্যা হওয়ার সাথে সাথে ডাউন টাউনের সকল ভবন আলো ঝলমল হয়ে উঠলো। দুবাই মলের পাশেই বিশাল জলাশয়ের পার ধরে হাজারো মানুষের ঢল। মানুষের ঢল নেমেছে আশ পাশের এলাকায়ও। বিশে^র প্রায় ২০০ দেশের মানুষের বাস এই দুবাই নগরীতে। তাদেরই অনেকে এসেছেন, কেউ পরিবার নিয়ে, দল বেঁধে এসেছেন অনেক বন্ধু, প্রেমিক-প্রেমিকাদেরও দেখা যাচ্ছে নির্দ্বিধায় ঘুরে বেড়াতে।

জলাশলের পাশেই সুউচ্চ বুর্জ খলিফা। থেমে থেমে যন্ত্র সঙ্গীত বাজছে। দিনটি ছিল ২ জানুয়ারী। তার এক মাস আগে ২ ডিসেম্বর ছিল সংযুক্ত আরব আমিরাতের জাতীয় দিবস। এই দেশটি স্বাধীনতা অর্জন করে আমাদের চেয়ে ১৪ দিন আগে ১৯৭১ সালের ২ ডিসেম্বর। ২ জানুয়ারীও দেশটির ৫২ বছর পূর্তির কিছু লেজার শো দেখানো হচ্ছিল।

যন্ত্র সঙ্গীত থেমে গেলেই মানুষ তৈরি হচ্ছেন লেজার শো দেখার জন্য। বুর্জ খলিফা ভবনটি জুড়ে লেজার শোতে দেখানো হচ্ছিল আধুনিক দুবাই নগরীর আকর্ষণীয় নানা দৃশ্য, প্রাকৃতিক দৃশ্য, বন্য প্রাণীসহ বনের নানা দৃশ্য এবং আরও কিছু আকর্ষণীয় দৃশ্য। পাঁচ মিনিটের এই লেজার শো থেমে থেমে দেখানো হচ্ছিল যা মন্ত্রমুগ্ধের মত উপভোগ করছিলেন হাজারো মানুষ।

লেজার শোতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রতিপাদ্য রাখা হয়। এবারের প্রতিপাদ্য ছিল আগামী প্রজন্মের নিরাপদ বসবাসের জন্য বণ্যপ্রাণী রক্ষা। লেজার শোর সাথে জলাশয়ে চলছিল বর্ণিল ওয়াটার ড্যান্স। মনোমুগ্ধকর দু’টি প্রদর্শণীই এক সাথে উপভোগ করছিলেন মানুষ।

দুবাই মল ও বুর্জ খলিফা ঘিরে কেনাকাটাসহ প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়াও অনেকে আড্ডা দিচ্ছেন, ঘুরে বেড়াচ্ছেন, খেলাধুলায় মেতে আছে শিশুরা। মধ্যরাত পর্যন্তই নারী-পুরুষ ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন নিরাপদেই। কোন পোষাকী নিরাপত্তা কর্মী দেখা না গেলেও গোটা দুবাই নগরীতেই মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয় রাত-দিন ২৪ ঘন্টা। (চলবে)

Exit mobile version