নিজস্ব প্রতিবেদক: গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার মালিবাতা বিশ্ববন্ধু সেবাশ্রম একটি অরক্ষিত জায়গা। সেবাশ্রমের পূজারী হাসিলতা বিশ্বাসের (৭০) হত্যাকান্ডের পর বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ঘটনার দু’দিন পর ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই সেবাশ্রমের কাউকে সেখানে পাওয়া যায়নি। সেবাশ্রমের সামনে এবং পেছনের দু’টি গেটই তালাবদ্ধ ছিল। ভেতরে কোন লোকজন দেখা যায়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সেবাশ্রমের ১৭টি শাখার প্রধান এই কেন্দ্রে কখনোই কেউ থাকেন না। একমাত্র নিহত পূজারী হাসিলতা বিশ্বাস সেখানে পূজার্চনা ও দেখাশোনা করতেন এবং রাতেও তিনি একাই থাকতেন। কোন লোকজন না থাকায় মাদকসেবীদের নিয়মিত ও নিরাপদ আড্ডাস্থল ছিল অরক্ষিত সেবাশ্রমটি।
আশপাশের লোকজন, পরিবারের সদস্য এবং হাসিলতাকে দেখাশোনাকারী স্থানীয় হোমিও ডাক্তার প্রাণ কৃষ্ণ বিশ্বাস জানান, এই সেবাশ্রমে মাঝেমধ্যে কিছু অনুষ্ঠান হয়। তখন বিপূল লোক সমাগম হয় এবং সেবাশ্রমের আশপাশের এলাকায়ও মেলা বসে।
এই আয়োজন নিয়ে আয়োজকদের মধ্যে কখনো কখনো বিভক্তি দেখা দিলেও আয়োজন বন্ধ হয়নি।
এসময় ঢাক ঢোল বাজানো নিয়ে আশপাশের এলাকার অনেকেই আপত্তি করে থাকেন। তবে এসব ঘটনা হত্যাকান্ডের কারণ বলে তারা মনে করেন না।
সদর উপজেলারই নিজরা গ্রামে নিহতের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িটি শোকে স্তব্ধ। তার ছেলে হরিদাস বিশ্বাস জানান, তার মা ছিলেন নিরামিসভোজী এবং বাবার মৃত্যুর পর থেকেই তিনি বিভিন্ন আশ্রমে থাকতেন।
গত প্রায় তিন বছর ধরে মালিবাতা বিশ্ববন্ধু সেবাশ্রমে থাকতে শুরু করেন। তিনি অন্যের হাতের রান্না কখনো খেতেন না। মাঝে মধ্যে বাড়িতে আসতেন এবং নিজেই রান্না করে খেয়ে সবার খোঁজ খবর নিয়ে আবার চলে যেতেন। বাবা বিপিন বিশ্বাসের মৃত্যুর পর থেকে তাকে বহু চেষ্টা করেও বাড়িতে রাখা যায়নি।
বাড়ির নারী সদস্যরা জানান, লাশ দেখে তারা ধারণা করছেন তার ওপর পাশবিক অত্যাচারের পর তাকে হত্যা করা হয়েছে। একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে এমন হত্যাকান্ড তারা কোনভাবেই মেনে নিতে পারছেন না। তারা এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। তাদের ধারণা মাদকসেবীরা সেখানে টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করার সময় তাদের চিনে ফেলার কারণে এই হত্যাকান্ড ঘটতে পারে।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনিচুর রহমান জানান, সেবাশ্রমে কোন লোক না থাকায় মাদকসেবীরা নিয়মিত সেখানে আড্ডা দিত বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তারা সেবাশ্রমের টাকা এবং ওই পূজারীর অলংকার লুট করার সময় তাদের চিনে ফেলে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তার শরীর রক্তাক্ত থাকলেও শরীরে কোন আঘাতের চিহ্ন ছিল না। শ্বাসরোধ করে তাকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। হত্যার আগে অত্যাচারের বিয়টি ডাক্তারী পরীক্ষার রিপোর্ট পেলেই বলা যাবে। সেবাশ্রমের জমি দখল করার জন্য সুপরিকল্পিতভাবে এই হত্যান্ড ঘটানো হতে পারে কিনা সেই বিষয়টিও তিনি উড়িয়ে দেননি। তিনি জানান, এই ঘটনায় জড়িত থাকার সন্দেহে ৫ জনকে আটক করা হয়েছে। ঘটনার পর দু’জন চৌকিদারকে ওই সেবাশ্রম প্রহরা দেয়ার জন্য বলা হয়েছে।
বেসরকারী সংস্থা জনউদ্যোগের কুইক রেসপন্স টিম গত মঙ্গলবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঘটনার শাস্তি দাবি করে। টিমের সদস্যরা দেশবন্ধু সেবাশ্রম পরিদর্শন শেষে নিহতের বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলেন।
পরে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনিচুর রহমানের সাথে দেখা করে ঘটনা পরবর্তি আইনী ব্যবস্থা সম্পর্কে অবহিত হন।
সন্ধ্যায় গোপালগঞ্জ প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সাথে মত বিনিময় করেন তারা। প্রতিনিধি দলে ছিলেন জনউদ্যোগের সদস্য সচিব তারিক হোসেন মিঠুল, কিউরিয়াস টিভির প্রধান সম্পাদক ও ‘ডেইলি ঢাকা প্রেসের’ সম্পাদক খান মোহাম্মদ সালেক, সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী জীবনানন্দ জয়ন্ত, মুক্তি অনলাইনের পরিচালক শরিফ উল আনোয়ার সজ্জন, আহমেদ তালাত তাহজীব, মাহমুদা হাই শিখা ও আনোয়ারুল ইসলাম বাবু।
এ সময় গোপালগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি আলিমুজ্জামান বিটু ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মিরাজুল ইসলামসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
গত ২ মার্চ সেবাশ্রমের পূজারী হাসিলতা বিশ্বাস দুর্বৃত্তদের হাতে নিহত হন। ওই রাতে আশ্রমে তিনি একাই ঘুমাচ্ছিলেন।
সকালে স্থানীয় হোমিও চিকিৎসক ও ওই পূজারীর দেখাশোনাকারী প্রাণ কৃষ্ণ বিশ্বাস আশ্রমের প্রধান গেট খোলা এবং সব আলো জালানো দেখে ভেতরে ঢুকে হাসিলতার হাত পা বাঁধা মরদেহ দেখতে পান।
এসময় তার শরীর রক্তাক্ত ছিল এবং মুখে গামছা গুঁজে রাখা ছিল। থানায় খবর দেয়া হলে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে।