নিজস্ব সংবাদদাতা: বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশনের উদ্যোগে আজ ১১ মার্চ ২০২৪ইং রোজ সোমবার সকালে সেগুনবাগিচাস্থ ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে “টেলিযোগাযোগ খাতে বাজার প্রতিযোগিতা, মুঠোফোন গ্রাহকের স্বার্থ সুরক্ষায় করণীয়” শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভাপতির বক্তব্যে মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, একসময় সিটিসেল বাজারে মনোপলি করতো। এরপর গ্রামীণ টেলিকম ইনকামিং এবং আউটগোয়িং উভয়কলে ১০ টাকা করে চার্জ নিত।
আবারো সেই পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ। একটি অপারেটর ৫২ শতাংশ বাজার দখল করে আছে আর রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ৩.৫ শতাংশ বাজার দখল করে আছে। এই বৈষম্যের কারণেই নতুন করে বিদেশী বিনিয়োগ বা দেশী বিনিয়োগ আসতে চাচ্ছে না টেলিকম খাতে।
আরো বক্তব্য রাখেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ, সংগঠনের উপদেষ্টা ড. কামরুজ্জামান, এড. বেলাল প্রমুখ।
মূল প্রবন্ধে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের সাবেক পরিচালক মোঃ খালেদ আবু নাছের বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে চারটি মোবাইল ফোন অপারেটর রয়েছে।
এই অপারেটরদের বর্তমানে যে গ্রাহক সংখ্যা ও রেভিনিউ মার্কেট শেয়ার রয়েছে তার ভিত্তিতে এইচএইচআই (হারফেন্ডাল-হার্শম্যান ইনডেক্স)সূচক অনুসারে বাজার প্রতিযোগিতায় খুবই একপেশে কর্তৃত্বপূর্ণ একটি অপারেটরের উপস্থিতি নির্দেশ করে। এইচএইচআই সূচক হলো বাজার প্রতিযোগিতার অবস্থা পরিমাপে বহুল ব্যবহৃত একটি পদ্ধতি।
বর্তমানে এ খাতে গ্রাহকের ভিত্তিতে প্রথম অবস্থানে থাকা গ্রামীণফোনের মার্কেট শেয়ার ৪৩.২%, দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা রবি আজিয়াটার ৩০.৬%, বাংলালিংকের ২২.৮% এবং চতুর্থ অপারেটর টেলিটকের ৩.৪%। রেভিনিউয়ের দিক থেকে গ্রামীণফোনের বাজার হিস্যা প্রায় ৫০%।
বাজার প্রতিযোগিতা পরিমাপের আরেকটি সূচক কনসেনট্রেশন রেশিও। বর্তমানে মোবাইল সেবার বাজারের সিআর-৩ তথা প্রথম তিন অপারেটরের মার্কেট শেয়ারের সমষ্টি গ্রাহকভিত্তিতে ৯৬.৬% আর রেভিনিউ ভিত্তিতে ৯৮.৫%।
এই অবস্থা নির্দেশ করে, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ না করা হলে অদূর ভবিষ্যতে এই বাজার মনোপলির দিকে ধাবিত হবে। সর্বশেষ অবস্থানে থাকা তিনটি অপারেটরের জন্য এই বাজারে টিকে থাকা তাই বেশ কঠিন।
একই সাথে টেলিযোগাযোগ খাতের বিনিয়োগও সংকটের মুখে পড়বে। এই অবস্থা একটি বিপদজনক পরিস্থিতির সংকেত দেয় যেখানে বাজার প্রতিযোগিতা ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
যার ফলশ্রুতিতে গ্রাহক স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হবে, উদ্ভাবনী সেবার প্রসার বাজারে হ্রাস পাবে এবং সার্বিকভাবে তা মোবাইলভিত্তিক সেবার অর্থনৈতিক অবদানে নেতিবাচক প্রভাব রাখবে।
এই পরিস্থিতির নিরসনে নিয়ন্ত্রক সংস্থার অতিসত্ত্বর ত্বড়িৎ ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি । বর্তমানে মোবাইল টেলিযোগাযোগ খাতের বাজার প্রতিযোগিতা নিয়ন্ত্রণে যে সব নীতিমালা ও আইন-কানুন রয়েছে সেগুলো নিয়ে নতুন করে ভাবনার অবকাশ রয়েছে।
এই দেশে প্রতিযোগিতা আইন রয়েছে-সেটি ভঙ্গ করে কোনো অপারেটর যদি ক্রস সাবসিডি, প্রতিযোগিতা ভঙ্গকারী মূল্য নির্ধারণ করে অথবা খুচরা পর্যায়ের বিক্রেতাদের প্রতিযোগিতাবিরোধী অফার দেয় তাহলে সেসব নিয়ন্ত্রণে বিধান রয়েছে কিন্তু এর যথাযথ প্রয়োগ হচ্ছে না।
এই সব প্রতিযোগিতা বিরোধী কার্যক্রম মনিটরিং এবং প্রতিরোধ করতে একটি নীতিমালা ইতিমধ্যে ২০১৮ সালে বিটিআরসি প্রণয়ন করেছে, যা এসএমপি রেগুলেশন (সিগফিক্যান্ট মার্কেট পাওয়ার) ২০১৮ নামে পরিচিত।
এই এসএমপি বিধিমালার ভিত্তিতে বিটিআরসি ২০১৯ সালে ২০টি নিয়ন্ত্রণমূলক বিষয় নির্ধারণ করেছিল। যার মধ্যে মাত্র ৩টি বিষয় প্রয়োগ করা হয়েছে ২০২০ সালে, বাকিগুলো এখনো আলোর মুখ দেখে নি বলে বলেছেন।
প্রকাশক : মোহাম্মদ বদরুজ্জামান তালুকদার
সম্পাদক : খান মোহাম্মদ সালেক
Copyright © 2025 Daily Dhaka Press. All rights reserved.