
গাজীপুর প্রতিনিধি:সিলিন্ডারের ছিদ্র থেকে বের হওয়া গ্যাসে আগুন লেগে অন্তত ৩২ জন দগ্ধ হয়েছেন। এর মধ্যে ৩০ জনকে রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার তেলিরচালা এলাকায় আজ বুধবার সন্ধ্যায় ওই ঘটনা ঘটে।
অগ্নিদগ্ধ ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন ফারজানা আক্তার, মহিদুল ইসলাম, শিশু নীরব, নারগিস আক্তার, জহিরুল ইসলাম, শিল্পী আক্তার, শিশু নূর নবী, শাপলা বেগম, মো. সোলাইমান, মো. আকাশ, কুটি মিয়া, সুমন মিয়া, মোতালেব হোসেন। তাৎক্ষণিভাবে বাকিদের নাম জানা যায়নি।
এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার তেলিরচালা টপস্টার কারখানার পাশে শফিকুল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ী জমি ভাড়া নিয়ে কলোনি তৈরি করে ভাড়া দিয়েছেন।
ওই বাড়িতে থাকা সিলিন্ডারের গ্যাস শেষ হয়ে গেলে পাশের একটি দোকান থেকে শফিকুল নিজেই একটি গ্যাস সিলিন্ডার কিনে আনেন।
সেই সিলিন্ডার লাগানোর সময় সিলিন্ডারের চাবি খুলে গিয়ে পাশের চুলা থেকে আগুন ধরে যায়। তখন ওই ব্যক্তি গ্যাস সিলিন্ডারটি ছুড়ে মারেন। এ সময় আশপাশের উৎসুক নারী, পুরুষ ও শিশুদের শরীরে আগুন লেগে যায়। এতে অন্তত ৩২ জন দগ্ধ হয়েছেন।
পরে আশপাশের লোকজন আগুন নিভিয়ে তাঁদের উদ্ধার করে কোনাবাড়ী এলাকার কয়েকটি হাসপাতালে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। পরে তাঁদের শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গাজীপুরের কোনাবাড়ী কলেজের উল্টো পাশে টপস্টার কারখানা।
ওই কারখানার পশ্চিম পাশে টিনের বেড়া দিয়েছে গড়ে উঠেছে শতাধিক ঘরবাড়ি। সেখানে বিভিন্ন শিল্পকারখানার শ্রমিকেরা বসবাস করেন।
ওই বাড়িতে থাকা সিলিন্ডারের গ্যাসের ছিদ্র থেকে আগুন ধরে যায়। এতে দগ্ধ হয়েছেন অন্তত ৩২ জন। ঘটনার পর থেকে সেখানে ভিড় করতে থাকেন মানুষ।
স্থানীয় বাসিন্দা দুলাল মিয়া বলেন, তাঁদের পাশের বাড়িতে একটি সিলিন্ডার ছিদ্র হয়ে গ্যাস বের হচ্ছে, এ খবর পেয়ে সেখানে লোকজন জড়ো হন। একপর্যায়ে আগুন ধরে যায়। সঙ্গে সঙ্গে সেখানে থাকা ওই ৩২ জন দগ্ধ হন।
বাড়ির মালিক শফিকুল ইসলাম জানান, সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়নি। সিলিন্ডারের ত্রুটির কারণে গ্যাস বের হতে থাকে। হঠাৎ পাশের চুলা থেকে সিলিন্ডারে আগুন ধরে যায়।
কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক সাইফুল আলম বলেন, দগ্ধ ব্যক্তিদের উদ্ধার করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
খবর পেয়ে রাত আটটার দিকে কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাউছার আহাম্মেদ, কালিয়াকৈর থানার ওসি এ এফ এম নাসিমসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
ইউএনও কাউছার আহম্মেদ বলেন, ‘স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে যতদূর জানতে পেরেছি, একটি গ্যাস সিলিন্ডার লিকেজ হয়ে পাশের চুলা থেকে আগুন ধরে যায়।
তখন বাড়ির মালিক আতঙ্কিত হয়ে সিলিন্ডারটি ছুড়ে মারেন। এ সময় পথচারী ও স্থানীয় বাসিন্দাসহ ৩০ জনের মতো দগ্ধ হয়েছেন বলে জানতে পেরেছি।’
কালিয়াকৈর থানার ওসি এ এফ এম নাসিম বলেন, স্থানীয় দোকান থেকে সিলিন্ডার পরিবর্তন করে নিয়ে এসে লাগানোর সময় পাশের চুলা থেকে আগুন ধরে যায়। আগুনে দগ্ধ হয়ে ৩০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। ঘটনাটির তদন্ত করা হবে। এতে কারও গাফিলতি থাকলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
খবর পেয়ে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ছুটে আসেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন। তিনি চিকিৎসকদের দগ্ধ ব্যক্তিদের দ্রুত চিকিৎসা দেওয়ার নির্দেশ দেন।