জীবনই অভিজ্ঞতা, আর অভিজ্ঞতাই জীবন। অভিজ্ঞতাসমষ্টির নাম জীবন আর জীবনকে খণ্ড খণ্ড করে দেখলে এক-একটি অভিজ্ঞতা। এক-একটি অভিজ্ঞতা যেন আমার আপনার এক এক ফোঁটা চোখের জলের রুদ্রাক্ষ। সব কটা গাঁথা হয়ে যে তসবি-মালা হয়- তারই নাম আমার আপনার জীবন। জীবনে আশরাফুল মাখলুকাত সৃষ্টির সেরা জীব, তারা জীবনে অনেক ভুলভ্রান্তি করে কিন্তু অনুশোচনা করে সময় ফুরিয়ে আসলে। আমাদের সমাজ নামক যন্ত্রে বাঙালি আর কিছু পারুক না পারুক, বাজে তর্কে খুব মজবুত। বাংলাদেশে `cold blooded` সমালোচনা হয় কিন্তু কাজের ফলাফল শূন্য। ভিন্ন ভিন্ন শাস্ত্রে সব পাওয়া যায়– কোনো কিচ্ছুর অনটন নেই, কিন্তু কেউ তো তা মেনে চলে না বাস্তব জীবনবোধের তাগিদে।
আমাদের পরিবেশের রক্ষায় প্রত্যক্ষভাবে মনের অভাববোধ আছে। পরিবেশ ও বৃক্ষরোপণ নিয়ে সবাই অভিজ্ঞ, কিন্তু হাতে-কলমে গুরুত্বহীন এই অভিজ্ঞতার রূপায়নে। এই কারণে পরিবেশের বিপন্ন হওয়ার জল আর চোখের জল একই কারণে ঝরে না। পরিবেশ বিপন্ন হওয়ার পরে তার পরিণতি যখন দুর্যোগ হয়ে হানা দেয় তখন তা মানুষের চোখের জল হয়ে ঝরে। তখন তার মর্ম বুঝতে পারে বসুন্ধরার মানবজাতি।
পরিবেশ আমাদের বেঁচে থাকার জন্য খুবই জরুরি একটি বিষয়। মানুষ পরিবেশ দ্বারা প্রভাবিত হয়, পরিবেশ খারাপ হলে মানুষের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। আবার পরিবেশ ভালো হলে মানুষের ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।
গ্রামের মানুষের কথায় বলতে হয়- যে পরিবেশকে ভালোবাসতে জানে সে সত্যিই ভালোবাসার মানে বোঝে। পরিবেশ ধ্বংসের মানে হলো নিজের সন্তানের ভবিষ্যৎ ধ্বংস করে ফেলা। আমাদের মনে রাখতে হবে- পরিবেশ কারোর ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয় যে, সে তা ধ্বংস করব বরং সবারই দায়িত্ব একে রক্ষা করা আগামীর প্রজন্মের জন্য।
ছোটবেলায় শুনে আসা স্লোগান- ‘গাছ লাগান পরিবেশ বাচান’ একটু ঘুরিয়ে বলতে হয়- ‘গাছ লাগান পরিচর্যা করুন জনগণকে পরিবেশ বাঁচাতে উদ্বুদ্ধ করুন, পরিবেশ দূষণ ও ধ্বংস প্রতিহত করুন। আমাদের সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো পরিবেশ।’
আমাদের শৈশবের প্রাইমারি ও হাইস্কুলে সমাজবিজ্ঞান বইয়ে লেখা কিছু কথা যতটুকু আজও মনে পড়ে তা তুলে ধরলাম, আপনিও কল্পনা করুন। আমাদের সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো পরিবেশ। আমাদের পরিবেশকে সুন্দর ও স্বচ্ছ রাখতে আমাদের সবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা উচিত। পরিবেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকলে মানুষের রোগ বালাই কম হয়। আর পরিবেশ অপরিষ্কার অপরিচ্ছন্ন থাকলে রোগবালাইসহ আমাদের অনেক ধরনের সমস্যা দেখা দেয়।
ক্লাসে ম্যাডাম ও স্যার আরও বিভিন্ন সচেতনতামূলক জ্ঞানী-জ্ঞানী কথা বলতেন। গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে স্কুলে হবি (শখ) কী জিজ্ঞেস করলে বাড়ির উঠানে শখের বাগান করার কথা অনেকেই বলত। কারণ একটা শিক্ষার্থী সে সময় ভালো লাগা থেকে সৃষ্টিশীল চিন্তায় তাদের অনুভূতিগুলো বলত। এখনকার চিত্র একটু ভিন্ন, পরিবর্তন ইতিবাচক হলেই হয়।
আজকের ২০২৩ সালের পরিবেশ দিবসে আপনি আমি সৃষ্টিশীল কিছু চিন্তা করি, তারপর পরিকল্পনা করি, তারপর তার বাস্তব রূপয়ান করি। যার যার কর্মসংস্থানে কেউ অফিসের বস, কেউ ছোট পদে, কেউ নেতা, কেউ শিক্ষক, কেউ আমলা, কেউ শিক্ষার্থী, কেউ সমাজসেবী। কেউ চাকরিজীবী, কেউ দিনমজুর, কৃষক, শ্রমিক; সবাইকে পরিকল্পিত ধরিত্রী গঠন এগিয়ে আসতে হবে পরিবেশের বন্ধু হয়ে। শুধু মুখের বুলি নয়, প্রয়োজন সৃজনশীলতার বাস্তব রূপায়ন।
আসুন দুর্যোগ দুর্বিপাকে নয়, সুসময়ে পরিবেশের সাথে আত্মিক বন্ধনে সুন্দর নিরাপদ পরিবেশ রক্ষায় সোচ্চার হই। জয় হোক বাঙালির, সোনার বাংলায় ইতিবাচক পরিবেশে।
লেখক: উপশিক্ষা ও পাঠচক্র বিষয়ক সম্পাদক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ