ভারত নাকি দক্ষিণ আফ্রিকা। শিরোপা ছুঁয়ে দেখা থেকে কয়েক হাত দূরে দুটি দল। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনাল জিতবে কোন দল? ক্রিকেট বিশ্বে সর্বত্রই একই আলোচনা। দুটি দলই সাফল্যের জন্য করছে দীর্ঘ অপেক্ষা।
সেই ২০০৭ সালের পর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতা হয়নি ভারতের। আর দক্ষিণ আফ্রিকা তো জিতেনি কোনও ফরম্যাটের বিশ্বকাপই। এবার দুটো দলই কোনও ম্যাচ না হেরে ফাইনালে কোয়ালিফাই হয়েছে।
ফাইনাল ম্যাচে সবার চোখের সমানে, মাঠের লড়াইয়ের ভেতর থাকে অন্য আরেক লড়াই। সেই লড়াইয়ে যে দল এগিয়ে থাকবে, বিশ্বকাপে চুমু দেবে তারাই। এমন ৫টি লড়াই গড়ে দিতে পারে আজকের ফাইনালের ভাগ্য।
রোহিত শর্মা-মার্কো ইয়ানসেন
সুপার এইটে অস্ট্রেলিয়ার পর সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বিস্ফোরক ব্যাটিং করেছেন রোহিত শর্মা। দুই ম্যাচেই করেন ঝড়ো ফিফটি। মার্কো ইয়ানসেন পুরো বিশ্বকাপে নিষ্প্রভ থাকলেও আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৩ উইকেট নিয়ে হয়েছেন ম্যাচ সেরা। বাঁহাতি পেসারের বিপক্ষে রোহিত শর্মার দূর্বলতা আছে কিছুটা। ইয়ানসেনের বিপক্ষে ৯ টি-টোয়েন্টি ইনিংসে অবশ্য একবারই আউট হয়েছেন রোহিত।
জাসপ্রিত বুমরা-কুইন্টন ডি কক
দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে এবারের বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ২০৪ রান করেছেন কুইন্টন ডি কক। স্ট্রাইক রেট ১৪৩.৬৬। যুক্তরাষ্ট্রের পর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পেয়েছেন ফিফটি। জাসপ্রিত বুমরা করছেন অন্য গ্রহের বোলিং। এবারের বিশ্বকাপে ১৩ উইকেট নিয়েছেন কেবল ৪.১২ ইকোনমি রেটে।
ঋষভ পন্ত- কেশব মহারাজ
তিন নম্বরে ব্যাট করছেন পন্ত। এই বিশ্বকাপে ১৭১ রান করেছেন ১২৯.৫৪ স্ট্রাইক রেটে। কেশব মহারাজ ৯ উইকেট নিয়েছেন ৬.০৮ ইকোনমি রেটে। দুজনের লড়াইটা উপভোগ্য হওয়ার কথা।
বিরাট কোহলি-কাগিসো রাবাদা
বিরাট কোহলি বিশ্বকাপ জুড়েই ছন্দহীন। আইপিএলে সর্বোচ্চ রান করে আসা এই কিংবদন্তি পুরো বিশ্বকাপে করেছেন কেবল ৭৫ রান। তবে সবাই জানে ফাইনালে কোহলির একটি ইনিংসে গড়ে দিতে পারে ম্যাচের ভাগ্য। আর তাকে থামাতে মুখিয়ে থাকবেন ৫.৮৮ ইকোনমিতে ১২ উইকেট নেওয়া কাগিসো রাবাদা।
হেনরিখ ক্লাসেন-কুলদীপ যাদব
স্পিনে সময়ের অন্যতম সেরা ব্যাটার হেনরিখ ক্লাসেন। আইপিএল মাতিয়ে আসা ক্লাসেনের জন্য বড় পরীক্ষা হতে পারে ভারতের কুলদীপ যাদব। শেষ কয়েকটা ম্যাচে ভারতকে জেতাতে বড় ভূমিকা রেখেছেন কুলদীপ। সেমিফাইনালেও নিয়েছিলেন ৩ উইকেট।
ভারতেই বাজি কপিল-গাভাস্কার-সৌরভের
২০১৩ সালে আইসিসি ট্রফি। ২০১১ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপ। মাঝে সঙ্গী শুধুই হতাশা। একের পর এক টুর্নামেন্টের ফাইনালে পৌঁছেও হারতে হয়েছে ভারতকে। আজ (২৯ জুন) টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে কি শিরোপা খরা কাটবে ভারতের। নাকি সাত মাস আগের ওয়ানডে বিশ্বকাপের মত এবারও সঙ্গী হবে হতাশা।
ভারতীয় কিংবদন্তি সুনীল গাভাস্কার ‘পিএমজি’তে নিজের কলামে লিখেছেন, ‘‘গত দুটি বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন ছিল অস্ট্রেলিয়া আর ইংল্যান্ড। তাদের হারিয়ে এবার ফাইনালে ভারত। এটা বাড়তি আত্মবিশ্বাস জোগাবে রোহিত শর্মাদের। ওয়ানডে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালেও দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়েছিল ভারত। ওরা তাই ফাইনালে এগিয়ে।’’
১৯৮৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক কপিল দেবও ফেবারিট বলছেন ভারতকেই। তবে দলকে বাড়তি চাপ নিতে নিষেধ করলেন তিনি, ‘‘আকুতি থাকা ভালো তাই বলে ট্রফি আনতেই হবে এমন চাপ তৈরি করা উচিত নয়। গত ওয়ানডে বিশ্বকাপেও সবাই ধরে নিয়েছিল ভারত জিতবে। সেদিন ট্রাভিস হেড একাই গুঁড়িয়ে দেয় সব স্বপ্ন। হেডের মতো অনেকেই কিন্তু আছে দক্ষিণ আফ্রিকায়। তারপরও আমি এগিয়ে রাখছি ভারতকে।’’
ভারতীয় সাবেক অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলিও ফেবারিট বললেন ভারতকে, ‘‘ফাইনালে ওঠা গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যেক টুর্নামেন্টের ফাইনালে ওঠে ভারত। এর কৃতিত্ব দিতে হবে। সাত মাস আগে ওয়ানডে বিশ্বকাপেও ভারত সেরা দল ছিল। অপরাজিত ছিল। আশা করব এবার ভাগ্য সঙ্গ দেবে। সাত মাসের মধ্যে দুটি বিশ্বকাপ ফাইনাল হারলে বার্বাডোসের সমুদ্রে ঝাঁপ দেবে রোহিত!’’
‘চোকার্স’ বদনাম মেটাতে চান মারক্রাম, পন্টিংয়ের দাওয়াই
দক্ষিণ আফ্রিকা নামের সঙ্গেই মিশে আছে বদনামটা। বারবার বড় মঞ্চে ভেঙে পড়ায় তাদের ডাকা হয় চোকার্স। এবার সেই বদনাম মিটিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে বিশ্বকাপ শিরোপা জেতাতে চান অধিনায়ক এইডেন মারক্রাম।
প্রথমবার কোনও বিশ্বকাপের ফাইনালে পৌঁছে খালি হাতে ফিরতে চান না মারক্রাম, ‘‘আমাদের নিয়ে অনেক বলা হয়েছে এতদিনে। ফাইনাল জিতে অভিশাপটা কাটাতে চাই।’’ ফাইনালের জন্য নিজের দলের পাশাপাশি সাবেকদেরও কৃতিত্ব দিলেন মারক্রাম, ‘‘ফাইনাল খেলতে পারাটা অসাধারণ। এই সফরে আমাদের সাবেকরাও অনেক সাহায্য করেছেন। তাদের অবদান ভোলা যাবে না।’’
দক্ষিণ আফ্রিকা এবারই কোনও বিশ্বকাপের ফাইনালে। তাদের সহস জোগালেন অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি রিকি পন্টিং। মারক্রামের দলকে জানালেন বিশ্বকাপ জয়ের ফর্মুলা, ‘‘দক্ষিণ আফ্রিকা এ পর্যন্ত অসাধারণ ক্রিকেট খেলেছে। ওদের বাড়তি কিছু করার দরকার নেই। লক্ষ্য একটাই হওয়া উচিত, ফাইনালে নিজেদের সেরাটা খেলা। অনেক দলই বলে থাকে, ফাইনাল আর দশটা ম্যাচের মত খেলতে চান। এটা আসলে চাপ লুকানোর চেষ্টা। সেই চাপটা কাটাতে হবে স্বাভাবিক ক্রিকেট খেলে।’’
মারক্রামের মতো বিশ্বকাপ জিততে মরিয়া রাহুল দ্রাবিড়ও। এই ম্যাচ শেষে ভারতের কোচের দায়িত্ব ছাড়বেন তিনি। রোহিত শর্মারা অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন তিনি রাজি হননি। ফাইনালের চব্বিশ ঘণ্টা আগে ব্রডকাস্টার চ্যানেল তাই প্রোমো চলছে অনবরত-‘ডু ইট ফর দ্রাবিড়’।
দ্রাবিড় সংবাদ সম্মেলনে জানালেন,‘‘ এটা খুব ভালো ব্যাপার যে আমরা ধারাবাহিকভাবে দারুণ ক্রিকেট খেলছি। তিনটে ফরম্যাটেই আমরা ফাইনালে খেলেছি। সব কৃতিত্ব ক্রিকেটারদের দিতে হবে। আশা করি ভাগ্য এবার আমাদের সঙ্গে থাকবে।’’
বৃষ্টির কারণে ফাইনাল না হলে কী হবে
এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বৃষ্টি প্রতিপক্ষের চেয়ে কোনও অংশে কম যাচ্ছে না। ম্যাচে নামার আগে বৃষ্টির হিসাব মাথায় রাখতে হচ্ছে। সেমিফাইনালে কয়েক দফার বৃষ্টিতে ম্যাচ বন্ধ রাখতে হয়েছিল। ফাইনালেও আছে বৃষ্টির চোখরাঙানি। বৃষ্টিতে বার্বাডোসের শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচ না হলে কী হবে, সেই কৌতূহল নিশ্চয় অনেকের আছে।
এবারের বিশ্বকাপের ফাইনালে মুখোমুখি হচ্ছে ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা। ভারত তৃতীয়বার উঠেছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে, অন্যদিকে যেকোনও বিশ্বকাপের ফাইনালে প্রথমবার জায়গা পেয়েছে প্রোটিয়ারা। বাংলাদেশ সময় ২৯ জুন (শনিবার) রাত সাড়ে ৮টায় ফাইনালে মুখোমুখি হবে দল দুটি।
বৃষ্টি এলে কী হবে?
ভারত-ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে বৃষ্টি বাগড়া দিয়েছিল। তবে এই ম্যাচের জন্য ছিল না রিজার্ভ ডে। তবে ফাইনালে রাখা হয়েছে রিজার্ভ ডে। বৃষ্টির কারণে খেলা না হলে ম্যাচ গড়াবে পরের দিন। অর্থাৎ, বাংলাদেশ সময় ৩০ জুন।
ফাইনালের সময় বেড়েছে
ফাইনালের নির্ধারিত দিনেই খেলা শেষ করার লক্ষ্য আইসিসির। এ কারণে ম্যাচ শেষ করতে যোগ করা হয়েছে অতিরিক্ত ১৯০ মিনিট। অর্থাৎ, বৃষ্টি বাগড়া দিলে ওভার কাটা শুরু হবে ৩ ঘণ্টা ১০ মিনিট পর থেকে।
ফল নির্ধারণে কত ওভার দরকার?
ফাইনালের সময় বাড়ানোর হয়েছে। কিন্তু দেখা গেল, এই সময়েও খেলা শেষ করা সম্ভব হচ্ছে না। তখন ওভার কাটা শুরু হবে। সেক্ষেত্রে ফল নিষ্পত্তি করতে দুই দলকে অন্তত ১০ ওভার করে খেলতে হবে। ভারত ১০ ওভার ও দক্ষিণ আফ্রিকা ১০ ওভার ব্যাটিং-বোলিং করবে। নির্ধারিত দিনে ১০ ওভারের ম্যাচ শেষ করা না গেলেই ফাইনাল চলে যাবে রিজার্ভ ডে’তে।
এরপরও খেলা শেষ না হলে?
নিধারিত দিনের পর রিজার্ভ ডে’তেও খেলা শেষ করা গেল না। তাহলে কী হবে? সেমিফাইনালে নিয়ম ছিল, সুপার এইটে যে দলের পয়েন্ট বেশি ছিল, খেলা শেষ না হলে তারা চলে যাবে ফাইনালে। তবে ফাইনালে এই নিয়ম নেই। টুর্নামেন্টের আগের অংশের কোনও ফল কাজে আসবে না শিরোপা নির্ধারণী মঞ্চে।
বৃষ্টিতে ম্যাচ পরিত্যক্ত ঘোষণা হলে যৌথভাবে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হবে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে। ম্যাচ টাই হওয়ার পর বৃষ্টির কারণে সুপার ওভার না হলেও যৌথ চ্যাম্পিয়ন হবে দল দুটি।
বৃষ্টির সম্ভাবনা
বার্বাডোসের আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, ফাইনালের দিনে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অ্যাকুওয়েদারের পূর্বাভাস হলো, ম্যাচ চলাকালীন বৃষ্টির সম্ভাবনা ২০ থেকে ৪৭ শতাংশ। এমনকি রিজার্ভ ডে’তেও বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রকাশক : মোহাম্মদ বদরুজ্জামান তালুকদার
সম্পাদক : খান মোহাম্মদ সালেক
Copyright © 2025 Daily Dhaka Press. All rights reserved.