রেজাই রাব্বী: কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে চলমান পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে গত বুধবার রাত থেকে ফোর-জি মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রয়েছে। এরপর গত বৃহস্পতিবার ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটসেবাও বন্ধ হয়ে যায়। যা গতকাল মঙ্গলবার রাতে আংশিক চালু হয়। এর মাঝে গত শুক্রবার দিবাগত রাত থেকে জারি করা হয়েছে কারফিউ। দেশজুড়ে পঞ্চম দিনের মতো চলছে কারফিউ। দেশে চলমান কারফিউ ও সহিংসতার কারণে গত ৫ দিন ধরে মানুষ পুরোপুরি ইন্টারনেটের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
অথচ ইন্টারনেট ছাড়া মানুষ এখন এক মুহূর্তও চিন্তা করতে পারেন না। জরুরি নাগরিকসেবা, তথ্য আদান-প্রদান, যোগাযোগ সবকিছুই হচ্ছে ইন্টারনেটের মাধ্যমে। বিশেষ করে তরুণ সমাজ ইন্টারনেট ছাড়া যেন কিছুই বোঝে না। ইন্টারনেটের যুগে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, অনলাইন গেম, ইউটিউব, নেটফ্লিক্সের মতো বিভিন্ন বিনোদন প্ল্যাটফরমে মানুষ এতটাই আসক্ত যে, অবসর সময়ের পুরোটাই ইন্টারনেট দুনিয়ায় বুঁদ হয়ে থাকেন।
এবার ৫ দিন ইন্টারনেট সুবিধা না থাকায় বহুদিনপর দেশের মানুষ যান্ত্রিক সময় থেকে অপ্রত্যাশিত একান্তে কিছুটা সময় উপভোগ করার সুযোগ পেয়েছেন। সব মিলিয়ে এক অন্যরকম জীবন কাটাচ্ছেন দেশের মানুষ। কারফিউ এবং সাধারণ ছুটি ঘোষণা করায় স্কুল-কলেজ-ভার্সিটি বন্ধ। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘরের বাইরে তেমন বের হচ্ছেন না। করোনা মহামারির সেই গৃহবন্দির সময় মানুষ ঘরে থাকলেও ইন্টারনেটের মাধ্যমে ঘরের বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করতেন, অফিস করতেন, এমনকি তখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্লাসও ছিল অনলাইনে।
তবে এবার ইন্টারনেট না থাকায় গৃহবন্দি মানুষের চিত্র ভিন্ন। ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় অনলাইন প্ল্যাটফরমে ও দেশের বাইরে যোগাযোগ বন্ধ থাকলেও গৃহবন্দি ব্যাচেলররা তাদের দ্বিতীয় পরিবারের সঙ্গে উপভোগ করছেন সুন্দরতম মুহূর্ত। ব্যাচেলররা অনেকে তাদের মেস মেম্বারদের দ্বিতীয় পরিবার বলেও আখ্যা দিয়ে থাকেন।
চলুন জানা যাক চলমান কারফিউতে ইন্টারনেট ছাড়া ব্যাচলরদের সময় কাটছে কীভাবে-
-
গল্পে আড্ডায় কাটছে সময়
-
খেলছেন লুডু, দাবা ও কার্ড
-
মোবাইল ফোন রেখে মেতেছে নানান সৃজনশীল কাজে
সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ শিক্ষার্থী কাজী রাতুল। রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় একটি ফ্ল্যাট বাসাভাড়া নিয়ে থাকেন ৬ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী। তিনি আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে নানা সহিংসতায় দেশে কারফিউ জারি করা হয়। যদিও এর আগে কারফিউয়ের সঙ্গে পরিচিতি নেই। তবে মনে পড়ছে করোনা মহামারির সেই লকডাউনের সময়ের কথা। করোনা মহামারিতে পরিবারের সঙ্গে গৃহবন্দি সময় কাটিয়েছি আর এখন কারফিউতে বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছি।
আইইএলটস-এর প্রস্তুতিরত শিক্ষার্থী ফাহিম। তিনি জানান, উচ্চ শিক্ষার জন্য দেশের বাইরে যাওয়ার ইচ্ছায় সারাদিনই বাসায় পড়াশোনা করি। তাই কারফিউ আমার জীবনযাত্রায় প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। তবে, ১৯৭১ সালে মানুষ কিসের জন্য রেডিও নিয়ে বসে থাকতো, তা আমরা বুঝতে পারছি এখন!
রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী ফয়সাল আহমেদ। তিনি একজন গণমাধ্যম কর্মী তবে তার কর্মস্থল অনলাইনভিত্তিক হওয়ায় ইন্টারনেট না থাকায় বাসায় অবসর সময় পার করছেন। তিনি বলেন, কারফিউয়ের কারণে মাঝেমধ্যে বাসায় রান্নার জন্য কাজের বুয়া আসছেন না, তাই সবাই মিলে একসঙ্গে রান্না করি এবং সুন্দরতম মুহূর্ত উপভোগ করি।
মেডিকেল পড়ুয়া শিক্ষার্থী শাহরিয়া মাহমুদ বলেন, সবাই একসঙ্গে থাকলেও অনলাইন প্ল্যাটফরমে ব্যস্ত থাকায় বন্ধুদের সঙ্গে গল্প-আড্ডার সুযোগ হতো না। চলমান কারফিউয়ের কারণে সবাই বাসায়। তাই ইন্টারনেট না থাকার কারণে গত কয়েকদিন ধরে ছাদে বসে হাসি-আড্ডা-গান, দেশের খবর জানার জন্য পুরোনো দিনের মতো একসঙ্গে গোল হয়ে বসে রেডিও এবং পত্রিকার পাতায় ডুবে থাকা ও রাতভর লুডু, দাবা, কার্ড ইত্যাদি খেলে পার হচ্ছে সময়।
ফ্রিল্যান্সার নিহাল বলেন, ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় কাজে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। ইন্টারনেট ছাড়া আমরা অচল এটা ঠিক। তবুও ভালো লাগছে ব্যস্ততার মধ্যেও সবাই একসঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ পেয়ে।
ডেইলি ঢাকা প্রেস/রেজাই রাব্বী/২৪ জুলাই, ২০২৪