উর্বশী এহসান : এখন বর্ষাকাল। দেশের নদ-নদী, নালা, খাল-বিল পানিতে ভাসছে। ভারী বৃষ্টির কারণেও শহর বা গ্রামের ডোবাগুলো পানিতে পূর্ণ। এটা সাঁতার না জানা মানুষের জন্য একটু আতঙ্কের বিষয় বৈকি। আর সাঁতার না জানা শিশুদের জন্য এমন সময় বেশি ভয়ের। পাশাপাশি অভিভাকদের জন্যও উদ্বেগের।
এক পরিসংখ্যান বলছে, দেশে বছরে প্রায় ১৪ হাজার শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। এ হিসাবে গড়ে প্রত্যেক দিন ৪০ শিশু পানিতে ডুবে প্রাণ হারায়। এ তথ্য নিঃসন্দেহে মনে শঙ্কার উদ্রেক করে। যদি একটু সতর্ক থেকে ব্যবস্থা নেওয়া যায় তবে এ দুঃখজনক ও বিয়োগান্ত ঘটনা এড়ানো সম্ভব। প্রধানত ও সবার আগে যে বিষয়টি ভাবা জরুরি সেটা হলো শিশুকে সাঁতার শেখানো।
সাঁতার এমন একটা কৌশল বা অভ্যাস যা একবার শিখলে সারা জীবনে কেউ ভোলে না। সাঁতার শিশুকে শুধু পানিতে ডুবে যাওয়া থেকে বাঁচায় না, শিশুর শরীরের পেশি সক্রিয়ভাবে কাজ করতেও সাহায্য করে। পাশাপাশি শরীরের মাংসপেশির শক্তি বাড়ানো, পেশির সংকোচন-প্রসারণ ক্ষমতা বাড়াতেও ভূমিকা রাখে।
এক গবেষণায় দেখা গেছে, মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও সাঁতারের প্রভাব অপরিসীম। শিশুরা নদী খাল-বিল ডোবা পুকুরের পানিকে ভয় পায়। এটা অনেকটা স্বাভাবিক। অভিভাবকদের ধৈর্য সহকারে শিশুকে পানিতে নামানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
অভিভাবকদের নিজ- উদ্যোগে সাঁতার শেখানোর ব্যবস্থা করা উচিত। একবার পানির ভয় কেটে গেলে যেকোনো জায়গায় সাঁতারের জন্য সে প্রস্তুত থাকবে। একেবারে ছোট বাচ্চাদের চৌবাচ্চা বা ফোলানো পুলে নামিয়ে পেটের নিচে হাত দিয়ে বা কিকপ্যাডের মাধ্যমে পানিতে ভাসিয়ে রাখার চেষ্টা করা যেতে পারে।
পানির সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে হবে। পানিতে শরীর শিথিল রাখতে হবে। লম্বা দম নিয়ে পানির মধ্যে নাক মুখ ডুবিয়ে দম ছাড়তে হবে। পানিতে নামার আগে ওয়ার্মআপ করে নিতে হবে। ভারী খাবার খেয়ে সাঁতারে নামা যাবে না।
চার থেকে পাঁচ বছর হলেই শিশুদের সাঁতার শেখানো শুরু করা যায়। তার আগে বাড়িতে ছোট সুইমিংপুল বা গামলায় বসিয়ে কিংবা কোলে নিয়ে পানির সঙ্গে শিশুকে খেলার সুযোগ করে দেওয়া যেতে পারে। বয়সে একটু বড় শিশুদের সাঁতারের গুরুত্ব বোঝাতে হবে। এই বিদ্যা জানা থাকলে পুকুর-নদী-খাল-বিল যেখানেই পড়ুুক, বিপদ থেকে রক্ষা পাবে শিশু।