সারাদেশে ছাত্র-নাগরিকদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হামলা করে খুনের প্রতিবাদ ও ৯ দফা দাবিতে আগামীকাল শনিবার সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিল এবং পরদিন রোববার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ‘সর্বাত্মক অসহযোগ’ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
শুক্রবার (২ আগস্ট) রাতে আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মাহিন সরকার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন। সারাদেশের আপামর জনসাধারণকে অলিতে-গলিতে, পাড়ায় পাড়ায় সংগঠিত হয়ে কর্মসূচি সফল করার আহ্বান জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক রিফাত রশিদ ফেসবুক লাইভে এসে একই ঘোষণা দেন এবং সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘এই খুনি সরকারের সাথে আলোচনার সকল পথ বন্ধ হয়ে গেছে। সারাদেশে আজ (শুক্রবার) আমাদের ছয়জন ভাইকে শহীদ করা হয়েছে। কতজন আহত হয়েছেন এখনো পর্যন্ত জানি না। সুতরাং আগামীকালকের মধ্যে আমাদের নয় দফা দাবি মানতে হবে। অন্যথায় সারাদেশে অসহযোগ আন্দোলনের শুরু হবে। প্রত্যেকটি পাড়া মহল্লা স্কুল কলেজসহ প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে গণকমিটি করে আন্দোলন চালিয়ে নেওয়া হবে।’
গার্মেন্টস এবং প্রবাসী আয়কে সরকারের খুঁটি আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘সরকারের দুটি খুঁটি হলো গার্মেন্টস শিল্প এবং রেমিটেন্স। প্রবাসী ভাইয়েরা এবং গার্মেন্টস শ্রমিকেরা আপনারা কেউ এ সরকারকে সহযোগিতা করবেন না। কোনো গার্মেন্টস শ্রমিকেরা আপনারা গার্মেন্টসে যাবেন না। প্রবাসীরা এক টাকাও দেশে পাঠাবেন না।’
এদিকে এই আন্দোলনের আলোচিত ছয় সমন্বয়ক ডিবি কার্যালয় থেকে ছয় দিন পর ছাড়া পাওয়ার পর শুক্রবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, তারা আন্দোলন স্থগিতের যে ভিডিবার্তা ডিবি কার্যালয় থেকে দিয়েছিলেন তা তাদের ইচ্ছাধীন ছিল না। এটা পুলিশ জোর করে দিয়েছিল। তারাও জানান, আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
শুক্রবার (২ আগস্ট) ৬ সমন্বয়কের স্বাক্ষরিত বিবৃতিটি পাঠান সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার। এতে আরও স্বাক্ষর করেন নাহিদ ইসলাম, সারজিস আলম, হাসনাত আব্দুল্লাহ, আসিফ মাহমুদ, নুসরাত তাবাসসুম।
বিবৃতিতে বলা হয়, আন্দোলন ও নেতৃত্বকে ছত্রভঙ্গ করতেই ১৯ জুলাই থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের গুম, গ্রেফতার, নির্যাতন ও হয়রানি করা হচ্ছে। এর ধারাবাহিকতায় ‘নিরাপত্তার’ নামে ছয় সমন্বয়ককে সাতদিন ধরে ডিবি হেফাজতে জোরপূর্বক আটকে রাখা হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও ডিবিপ্রধান নিরাপত্তার কথা বললেও আমাদেরকে আন্দোলন থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখার জন্যই ডিবি হেফাজতে রাখা হয়েছিল।
আন্দোলন প্রত্যাহার করে ডিবি অফিস থেকে প্রচারিত ছয় সমন্বয়কের ভিডিও স্টেটমেন্টটি আমরা স্বেচ্ছায় দেইনি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনো সিদ্ধান্ত ডিবি অফিস থেকে আসতে পারে না। সারাদেশের সব সমন্বয়ক ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ব্যতীত কোনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে গৃহীত হবে না।
পরিবারকে ডেকে আনার প্রসঙ্গে বলা হয়, ডিবি অফিসে আমাদের জোর করে খাবার টেবিলে বসিয়ে ভিডিও করা হয়। আমাদের ছেড়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে পরিবারকে ডেকে ১৩ ঘণ্টা বসিয়ে রাখা হয় এবং মিডিয়ায় মিথ্যা স্টেটমেন্ট দেওয়ানো হয়। আমাদের শিক্ষকরা দেখা করতে আসলে, দেখা করতে দেওয়া হয়নি।
সমন্বয়কদের অনশন প্রসঙ্গে বলা হয়, অন্যায়ভাবে সমন্বয়কদের আটক, সারাদেশে শিক্ষার্থীদের গ্রেফতার ও নির্যাতনের প্রতিবাদে গত ৩০ জুলাই রাত থেকে সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও আবু বাকের ডিবি অফিসে আটক অবস্থায় অনশন কর্মসূচি শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে সে খবর জানামাত্র সারজিস আলম, হাসনাত আব্দুলাহ ও নুসরাত তাবাসসুমও অনশন শুরু করেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে সরাসরি দায়ী করে আরও বলা হয়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশেই আমাদের অন্যায়ভাবে আটকে রাখা হয়েছিল। সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ছাত্র-নাগরিকের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। সরকার এখনো শিক্ষার্থীদের ওপর দমননীতি অব্যাহত রেখেছে এবং সারাদেশে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের গ্রেফতার ও নির্যাতন করছে এবং শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা প্রদান করছে।