নিজস্ব প্রতিবেদক: ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে নিহতদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘তরুণ বিপ্লবীরা দেশের মানুষের মনে নতুন বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন জাগিয়ে দিয়েছে, তা পূরণে আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।’ বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) গণঅভ্যুত্থানের একমাস পূর্তি উপলক্ষে পাঠানো এক বার্তায় এসব কথা বলেন ড. ইউনূস।
তিনি ফ্যাসিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে নিহত সাহসী তরুণ, শ্রমিক, দিনমজুর, সাংবাদিক ও অন্যান্য পেশাজীবীদের স্মরণ করে গভীর শ্রদ্ধা জানান। ড. ইউনূস বলেন, ‘ছাত্র বিপ্লবে নিহতদের স্মরণ করছি এবং শ্রদ্ধা জানাই।
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে। আজ গণঅভ্যুত্থানের একমাস পূর্ণ হলো।
ড. ইউনূস বলেন, ‘আমরা দ্বিতীয় স্বাধীনতার প্রথম মাস উদযাপন করছি। ইতিহাসের অন্যতম গৌরবময় বিপ্লবের জন্য শত শত ছাত্র ও সর্বস্তরের মানুষ সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছে। আমি আহত হাজার হাজার মানুষকে সম্মান জানাই, যারা প্রাণঘাতী আঘাতের শিকার হয়ে চিরজীবনের জন্য পঙ্গু হয়েছেন বা চক্ষু হারিয়েছেন।’
তিনি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নৃশংস গণহত্যার অভিযোগ তুলে বলেন, ‘ছাত্র-জনতা ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসান ঘটিয়েছে। শেখ হাসিনা দুর্নীতিগ্রস্ত রাষ্ট্র ও ভঙ্গুর অর্থনীতি রেখে পালিয়ে গেছেন। আমাদের বাংলাদেশকে পূর্ণ গৌরবে প্রতিষ্ঠিত করার দায়িত্ব এখন আমাদের।’
শহীদদের আত্মত্যাগে উদ্বুদ্ধ হয়ে নতুন যুগের সূচনা করতে চান বলে উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, ‘গত মাসে আমাকে অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। আমি আবু সাঈদ, মুগ্ধ এবং সমস্ত শহিদদের আত্মত্যাগে উদ্বুদ্ধ হয়ে এই দায়িত্ব গ্রহণ করেছি।’
তরুণদের বিপ্লবের নায়ক উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, ‘তোমরা তোমাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের শপথ নিয়েছিলে। শহর ও গ্রামীণ জনপদের দেয়ালে আঁকা তোমাদের স্বপ্নগুলো এখনও আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। বিপ্লবের সময়, তুমি পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে উদ্বিগ্ন রাত কাটিয়েছো এবং দিনে শাসন প্রতিহত করতে রাস্তায় নেমেছিলে।’
শিক্ষার্থীদের ক্লাস ও ক্যাম্পাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, ‘আমি জানি তোমাদের পড়াশোনার অনেক ক্ষতি হয়েছে। এখন সময় পড়াশোনায় ফেরার। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় খোলা হয়েছে। আমি তোমাদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি, কারণ বিপ্লবের সুফল অর্জনে আমাদের একটি সুশিক্ষিত ও দক্ষ প্রজন্ম দরকার।’
তিনি বলেন, ‘গত এক মাসে অন্তর্বর্তী সরকার গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের কাজ শুরু করেছে। আমাদের প্রথম কাজ হল জুলাই ও আগস্টের হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করা। জাতিসংঘের নেতৃত্বে স্বাধীন তদন্ত শুরু হয়েছে।’
ড. ইউনূস জানান, ‘আন্তর্জাতিক মানের ট্রাইব্যুনাল গঠনের প্রয়াসে শীর্ষ আইন বিশেষজ্ঞদের সাথে কথা বলেছি। খুনিদের প্রত্যর্পণ ও দুর্নীতিবাজদের দেশ ফিরিয়ে আনতে বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠানের সাথে আলোচনা করছি। শহীদ ও আহতদের চিকিৎসার জন্য একটি ফাউন্ডেশন গঠনের প্রক্রিয়া চলছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বলপূর্বক গুমের প্রতিটি ঘটনা তদন্তের জন্য কমিশন গঠন করছি। গুম সংস্কৃতি শেষ করার জন্য আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।’
মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের পরিবারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, ‘আমি শহীদ পরিবারের সদস্যদের রাজধানীতে আমন্ত্রণ জানাবো এবং তাদের সঙ্গে দেখা করব। আমরা শহীদদের স্বপ্নের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করব না।’
তিনি শেষ করেন, ‘আমরা একতা ও সমন্বয়ের মাধ্যমে স্বৈরাচার দ্বারা সৃষ্ট ক্ষত পূরণ করবো। শহীদদের রক্ত ও আহতদের আত্মত্যাগকে ব্যর্থ হতে দেবো না। তাদের স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ আমরা গড়বো।