ঢাকা : ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভোটের মাঠ সাজাচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। আসন্ন নির্বাচনে শতাধিক আসনে অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতাদের প্রাধান্য দিতে চান দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এরই মধ্যে বিভিন্ন আসনে তরুণ নেতাদের নির্বাচনের বিষয়ে প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজ নিজ নির্বাচনী আসনে এখন বেশ সক্রিয়। তারা জনসংযোগের পাশাপাশি যোগ দিচ্ছেন সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলোয়। তারেক রহমানের নির্দেশে বগুড়া-৫ সংসদীয় আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন।
শেরপুর-ধুনট উপজেলা নিয়ে বগুড়া-৫ সংসদীয় আসন। এ আসনে একাধিক হেভিওয়েট প্রার্থী থাকলেও দল বিরোধী কর্মকাণ্ডের কারণে তারা নমিনেশন পাওয়ার দৌড়ে পিছিয়ে পড়েছেন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেরপুর-ধুনট আসনে বিএনপির হ্যাভিওয়েট প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ। তিনি এই আসনে একাধিকবার সংসদ সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হয়েছেন। এলাকার বর্ষীয়ান নেতাদের মাঝে তিনি অন্যতম।
ধানের শীষের অন্যতম দাবিদার ছিলেন গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ। কিন্তু ২০০৭ সাল থেকে তিনি একাধিক বিতর্কিত কর্মকাণ্ড ঘটিয়েছেন। ১/১১ এর দুঃসময়ে খালেদ জিয়া এবং তারেক জিয়ার বিরুদ্ধে গিয়ে সংস্কারপন্থীদের দলে যোগ দেন তিনি।
২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রচারণা চালান। এতো কিছুর পরেও বিএনপির হাইকমান্ড তাকে আবার সুযোগ দিয়ে বগুড়া সদর থেকে নির্বাচিত করে আনেন। দায়িত্ব দেওয়া হয় বগুড়া জেলা বিএনপির। কিন্তু সংসদে দাঁড়িয়ে নিজেকে সাবেক ছাত্রলীগের কর্মী হিসাবে পরিচয় দিয়েছেন।
ডা. জাফর উল্ল্যাহ চৌধুরীর গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে গিয়ে নতুন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিলেন গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ। এই অপরাধের কারণে বগুড়া জেলা আহ্বায়কের পদ থেকে সরিয়ে দেয় বিএনপির হাইকমান্ড। এসব কারণে গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ আগামী নির্বাচনে নমিনেশন পাবেন না, এটা প্রায় নিশ্চিত। এজন্য তার ছেলেকে সামনে আনার চেষ্টা করছেন। কিন্তু সেখানেও তিনি ব্যর্থ। কারণ নেতা হিসাবে তিনি এখনো গ্রহণযোগ্যতা পাননি।
শেরপুর-ধুনটের আরেকজন হ্যাভিওয়েট প্রার্থী হচ্ছেন, শেরপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি জানে আলম খোকা। শেরপুর-ধুনটে তার উল্লেখযোগ্য জনসমর্থন রয়েছে। সদ্য বিলুপ্ত শেরপুর পৌরসভার মেয়র ছিলেন তিনি। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে পৌর মেয়র নির্বাচিত হন তিনি। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করার কারণে জানে আলম খোকাকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়।
অনেকে বলে থাকেন, সাবেক সংসদ সদস্য ও বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতির মজিবুর রহমান মজনু আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে হারিয়ে খোকাকে মেয়র নির্বাচিত করেছিলেন। তবে, বহিষ্কৃত হাওয়ার কারণে জানে আলম খোকা নির্বাচনে নমিনেশন পাচ্ছেন না, সেটা একরকম নিশ্চিত।
গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ এবং জানে আলম খোকার দুর্বল অবস্থানের কারণে এবং তারেক রহমানের নির্দেশ পাওয়ায় নির্বাচনে নমিনেশন পাওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে আছেন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাবেক নির্বাচিত সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন। জিয়া পরিবারের বাইরে বগুড়ার মানুষ হিসাবে বিএনপির সহযোগী সংগঠনের সর্বোচ্চ পদে অধিষ্ঠিত হওয়া একমাত্র ব্যক্তি হচ্ছেন ফজলুর রহমান খোকন।
তিনি বর্তমানে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং বগুড়া জেলা কমিটির সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রী নেয়া খোকন শেখ হাসিনার দুঃশাসনের সময়ে কারা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের দ্বারা শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। কিন্তু শহীদ জিয়ার আদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি। আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেরপুর-ধুনট আসনে (বগুড়া-৫) বিএনপির নমিনেশন পেতে যাচ্ছেন শেরপুরের সন্তান ফজলুর রহমান খোকন, এটা প্রায় নিশ্চিত।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ফজলুর রহমান খোকন বলেন, সাড়ে ১৫ বছরের অচলায়তন ভেঙেছে। তাই দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় পর নির্বাচনে অংশ নিতে যাচ্ছে বিএনপি। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে কাজ করছি। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-৫ (শেরপুর-ধুনট) আসন থেকে ধানের শীষের প্রার্থী হতে চাই। দলীয় মনোনয়ন পেলে শেরটুর-ধুনটবাসীর উন্নয়নে নিজেকে নিয়োজিত রাখতে চাই।
২০১৯ সালে দীর্ঘ ২৮ বছর পর ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচন করে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। ওই নির্বাচনে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি হন ফজলুর রহমান খোকন। তিনি ঢাবির সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ছিলেন। তিনি সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন।
ফজলুর রহমান খোকনের জীবনবৃত্তান্ত ঘেঁটে জানা গেছে, খোকন পল্লী উন্নয়ন একাডেমি ল্যাবরেটরি হাইস্কুল থেকে ২০০০ সালে এসএসসি, শেরপুর ডিগ্রি কলেজ থেকে ২০০২ সালে এইচএসসি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০০৮ সালে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে অনার্স এবং ২০১০ সালে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন তিনি।
২০০৩-০৪ সেশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের আবাসিক ছাত্র হিসেবে রাজনীতিতে পদার্পণ তার। ২০০৫ সালের ছাত্রদলের এই হল শাখা কমিটির সহদফতর সম্পাদকের দায়িত্ব পান। রাজনৈতিক কারণে ২৩টি মামলার শিকার হন তিনি। চারবার তাকে কারাবরণ করতে হয়েছে।