একথা ধ্রুব সত্যি যে নিজে কোন কিছু চর্চা না করে অন্যকে উপদেশ দেয়াটা বোকামি। আর এ বোকামি আমরা হরহামেশাই করে থাকি বলে যে ম্যাসেজ আমরা অন্যকে উদ্দেশ্য করে দেই তা বেশিদিন স্থায়ী হয় না। সেভাবেই নিজেরা শুদ্ধ বাংলা ভাষার চর্চা না করে শুধু নতুন প্রজন্মকে যদি উপদেশ দিয়ে যাই বাংলাকে প্রধান্য দিতে হবে বা শুদ্ধ বাংলা চর্চা করতে হবে তা আসলে কোন কাজেই আসবে না। নিজেকে নিজ মাতৃভাষায় সমৃদ্ধ করাটা আগে জরুরি। তবে সেটা অন্যের মাঝে বিলি করা সম্ভব এবং তা দীর্ঘস্থায়ী হবে। শুধু ব্যকরণগত শিক্ষাই যে প্রকৃত ভাষার চর্চা তা নয় বাংলা ভাষা কে গুরুত্ব দেয়া, অবমাননা হতে না দেয়া, সুন্দরভাবে বলতে পারা সব কিছুই ভাষা চর্চার মধ্যে পড়ে।
শুদ্ধ বাংলা ভাষা চর্চা আমাদের সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যিক পরিচিতির অঙ্গ। এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং অনুপ্রেরণামূলক বার্তা। নতুন প্রজন্মের মাঝে বাংলা ভাষার প্রতি ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা তৈরি করা জরুরি, যাতে তারা ভাষার শুদ্ধতা বজায় রেখে বিশ্বে নিজেদের পরিচিতি প্রতিষ্ঠা করতে পারে। আমাদের ভাষার সৌন্দর্য, ইতিহাস, সাহিত্য, এবং সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে জানানো এবং চর্চা করা প্রজন্মের দায়িত্ব।
শুদ্ধ বাংলা ভাষা চর্চা একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ, যা আমাদের ভাষার সৌন্দর্য এবং গুণগত মান বজায় রাখতে সহায়ক। বাংলার সাহিত্য, সংস্কৃতি, এবং ঐতিহ্যকে সঠিকভাবে ধারণ ও প্রচারের জন্য শুদ্ধ ভাষার চর্চা অপরিহার্য। এটি আমাদের ভাষার প্রকৃত স্বরূপ এবং ভাবগত গভীরতা বজায় রাখতে সহায়ক। আমার দৃষ্টিকোণ থেকে চর্চার কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিকে তুলে ধরলাম পাঠকের জন্য।
শুদ্ধ বাংলা ভাষা চর্চার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ:
১.ভাষার নিয়ম মেনে কথা বলা ও লেখা: শুদ্ধ ভাষা চর্চার প্রথম এবং গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো ভাষার গ্রামার (ব্যাকরণ) এবং শব্দভাণ্ডারের সঠিক ব্যবহার। প্রাত্যহিক কথাবার্তায় সঠিক উচ্চারণ এবং প্রমিত শব্দ ব্যবহার করা উচিত।
২. বাংলা সাহিত্য পাঠ ও চর্চা: শুদ্ধ বাংলা ভাষার চর্চায় বাংলা সাহিত্য অধ্যয়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নজরুল ইসলাম, সুকুমার রায়, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সহ বাংলার বিশিষ্ট সাহিত্যিকদের লেখা পড়া আমাদের ভাষার সৌন্দর্য এবং শুদ্ধতা ধরে রাখতে সাহায্য করে।
৩.শব্দভাণ্ডার বৃদ্ধি: নতুন শব্দ শেখা এবং সেগুলি সঠিকভাবে ব্যবহার করা শুদ্ধ বাংলা ভাষার চর্চায় সহায়ক। যত বেশি নতুন শব্দ শিখব, তত ভাষায় বৈচিত্র্য ও গভীরতা আসবে।
৪.ভাষার সঠিক উচ্চারণ: বাংলা ভাষার সঠিক উচ্চারণের গুরুত্ব অনেক বেশি। বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন উচ্চারণ থাকতে পারে, তবে শুদ্ধ উচ্চারণ চর্চা আমাদের ভাষাকে আরও প্রাঞ্জল এবং সুগম করে তোলে।
৫.লেখালেখি এবং ভাষার চর্চা: নিয়মিত বাংলা লেখা এবং ভাষার চর্চা করা প্রয়োজন। এটি শুধুমাত্র লেখা দক্ষতা বাড়াবে, বরং শুদ্ধ ভাষার ব্যবহারেও সাহায্য করবে।
৬.টেকনোলজির মাধ্যমে ভাষা চর্চা: বর্তমানে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম, ব্লগ, সোশ্যাল মিডিয়া, ডিজিটাল বই ইত্যাদি মাধ্যমে বাংলা ভাষার চর্চা করা সহজ হয়েছে। বিভিন্ন বাংলা ওয়েবসাইট, ইউটিউব চ্যানেল এবং অ্যাপের মাধ্যমে ভাষা শেখা এবং চর্চা করা যায়।
৭.বাংলা ভাষার সঠিক রীতি অনুসরণ: ভাষার রীতি-নীতি এবং বিভিন্ন প্রকারের ভাষিক পরিস্থিতি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা উচিত। যেমন- আঞ্চলিক ভাষার পরিবর্তে মূল বাংলা ভাষার ব্যবহার, কথ্য ভাষা এবং লিখিত ভাষার মধ্যে পার্থক্য চেনা, প্রমিত শব্দ ও বাক্য গঠন ইত্যাদি।
শুদ্ধ বাংলা ভাষা চর্চা শুধু ভাষার বিকাশে সহায়ক নয়, এটি আমাদের সাংস্কৃতিক পরিচিতি এবং ঐতিহ্য রক্ষায়ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নতুন প্রজন্মের মধ্যে এই চর্চাকে প্রতিষ্ঠিত করা আমাদের সবাইকে দায়িত্ব হিসেবে পালন করতে হবে। নিজ নিজ দায়িত্ববোধ থেকে কাজ করলে বিষয়টি অনেক সহজ হয়ে যায়। তাহলেই বাংলা ভাষাকে বিশ্বের দরবারে মার্জিতভাবে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব। শুরুটা নিজ থেকে এবং পরিবার থেকেই শুরু করতে হবে।
প্রকাশক : মোহাম্মদ বদরুজ্জামান তালুকদার
সম্পাদক : খান মোহাম্মদ সালেক
Copyright © 2025 Daily Dhaka Press. All rights reserved.