নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের এক বৈঠকে অংশ নিতে ভারতে এসে জঙ্গিবাদের কথা তুলে অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশ নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের উদ্বেগের কথা জানালেন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন গোয়েন্দা প্রধান তুলসি গ্যাবার্ড।
ভারতে এসে দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালে সঙ্গে বৈঠক করার মধ্যে সোমবার এনডিটিভিকে একটি বিশেষ সাক্ষাৎকার দেন তুলসি, সেখানেই বাংলাদেশের প্রসঙ্গ আসে।
এনডিটিভি জানিয়েছে, সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের গভীর উদ্বেগের কথা তুলে ধরেছেন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা প্রধান। বিশ্বজুড়ে ইসলামী জঙ্গিগোষ্ঠীকে পরাভূত করতে ট্রাম্পের অঙ্গীকারে কথাও বলেছেন তিনি।
বাংলাদেশ নিয়ে তুলসি বলেন, “দুর্ভাগ্যজনকভাবে দীর্ঘদিন ধরে চলা নিপীড়ন, হত্যাকাণ্ড, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের হয়রানি যুক্তরাষ্ট্র সরকার এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশাসনের উদ্বেগের বড় ক্ষেত্র।”
বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতনের ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে আসছে ভারত।
গত মাসে যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাওয়া ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠকেও বাংলাদেশ প্রসঙ্গ আলোচনায় এসেছিল। এখন তুলসি সরাসরি উদ্বেগের কথা জানালেন।
অভ্যুত্থানের পর নানা ঘটনায় বাংলাদেশে ইসলামী চরমপন্থিদের উত্থানের আশঙ্কা পশ্চিমা দেশগুলোর বিভিন্ন মহল থেকে করা হচ্ছে।
তবে অভ্যুত্থানের পর নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের রক্ষায় জোরাল পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি জঙ্গি উত্থানের শঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের প্রসঙ্গ ধরে ইসলামী সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর উত্থান ঠেকানোকে ট্রাম্প প্রশাসনের গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেন তুলসি।
যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা প্রধান বলেন, “বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসনের আলোচনা সবে শুরু হয়েছে। তবে আলোচনায় এটি (জঙ্গিবাদ) উদ্বেগের কেন্দ্রে থাকবে।”
‘ইসলামী খিলাফত’ প্রতিষ্ঠার কথা যারা বলছে, তাদের যুক্তরাষ্ট্র কোন চোখে দেখে, সাক্ষাৎকারে তা তুলে ধরেন তুলসি গ্যবার্ড। তিনি বলেন, “ইসলামী জঙ্গি গোষ্ঠীর যে হুমকি, বিশ্বজুড়ে তাদের যে তৎপরতা, তার মূলে রয়েছে ইসলামি খেলাফত প্রতিষ্ঠার এই আদর্শিক অবস্থান।
“এটা অবশ্যই অন্য যে কোনও ধর্মের মানুষকে প্রভাবিত করে। কেননা যখন একটি বাদে অন্যগুলোকে অগ্রহণযোগ্য বলা হয়; তখন তারাও সন্ত্রাস ও সহিংসতার পথ খুঁজে নিতে পারে।”
তাই এই ধরনের ইসলামী সন্ত্রাসবাদের বিস্তার ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্র সক্রিয় জানিয়ে তুলসি বলেন, “যে ধরনের আদর্শ চরমপন্থার বিস্তা ঘটায়, সন্ত্রাসবাদের উন্মেষ ঘটায়, তাকে পরাভূত করে মানুষকে সন্ত্রাসের শিকার হওয়া থেকে বাঁচাতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অঙ্গীকারাবদ্ধ।”
ইউএস ডিরেক্টর অব ন্যাশনাল ইন্টিলিজেন্সের (ডিএনআই) পরিচালকের দায়িত্ব নেওয়ার পর মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে যোগ দিয়ে এবার ভারতে এলেন তুলসি। দিল্লিতে অন্তত ২০টি দেশের নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের এক বৈঠকে যোগ দেন তুলসি। পাশাপাশি রাইসিনা সংলাপেও তিনি অংশ নেবেন।
৪৩ বছর বয়সী তুলসি গ্যাবার্ড যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদের প্রথম হিন্দু সদস্য। তিনি আমেরিকান সামোয়া অঞ্চলে জন্মগ্রহণকারী যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নাগরিক হিসাবেও কংগ্রেস সদস্য হন। দেশটির সেনাবাহিনীতেও কাজ করেছেন তুলসি গ্যাবার্ড।
এক সময় ডেমোক্রেটিক পার্টিতে ছিলেন তুলসি। ২০২০ সালে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার জন্য জো বাইডেনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ব্যর্থ হন। এরপর ২০২২ সালে তিনি ডেমোক্রেটিক পার্টি ছাড়েন।
গত বছরের আগস্টে তুলসি গ্যাবার্ড আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্ট পদে রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্পকে সমর্থন করেন। এরপর অক্টোবরে উত্তর ক্যারোলাইনায় ট্রাম্পের এক সমাবেশে রিপাবলিকান পার্টিতে যোগদানের ঘোষণা দেন।
এরপর গত জানুয়ারিতে ট্রাম্প প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার পর তুলসিকে ডিএনআই প্রধানের দায়িত্ব দেন। গত ফেব্রুয়ারিতে মোদী যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পর প্রথম বৈঠকটি তুলসির সঙ্গেই করেছিলেন।
প্রকাশক : মোহাম্মদ বদরুজ্জামান তালুকদার
সম্পাদক : খান মোহাম্মদ সালেক
Copyright © 2025 Daily Dhaka Press. All rights reserved.