কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ বন্দুকধারী হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর দক্ষিণ এশিয়ার দুই চিরবৈরী প্রতিবেশী—ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। হামলার দায় গোপন না রেখে নয়াদিল্লি সরাসরি ইসলামাবাদের দিকে আঙুল তুলেছে। এর প্রতিক্রিয়ায় একের পর এক কূটনৈতিক ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ নিয়েছে।
এসব পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে সিন্ধু পানি বণ্টন চুক্তি স্থগিত, সীমান্ত বন্ধ, কূটনীতিক বহিষ্কার এবং পাকিস্তানি নাগরিকদের সব ধরনের ভিসা বাতিলের মতো নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত।
পাকিস্তান পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় পিছিয়ে নেই। ভারতের এসব পদক্ষেপকে ‘আগ্রাসী’ আখ্যা দিয়ে দেশটি ওয়াগা সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের সভাপতিত্বে ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির জরুরি বৈঠকে সামরিক ও কূটনৈতিক পরিকল্পনা পুনর্বিবেচনার কথা জানানো হয়েছে। সীমান্তজুড়ে বাড়ানো হয়েছে নজরদারি ও নিরাপত্তা প্রস্তুতি।
বর্তমান পরিস্থিতি দেখে অনেকেই ১৯৯৯ সালের কারগিল যুদ্ধ বা ২০০১ সালের পার্লামেন্ট হামলার পর ভারতের 'অপারেশন পরাক্রম'-এর সময়কার টানাপোড়েনের কথা স্মরণ করছেন। এবারো সীমান্তে সেনা সমাবেশ, যুদ্ধমঞ্চে কূটনৈতিক সরণি ও পরোক্ষ সংঘাতের ইঙ্গিত স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। কাশ্মীরে বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতা ও সন্ত্রাসবাদকে কেন্দ্র করে ফের অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।
সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, উভয় দেশই পারমাণবিক অস্ত্রসজ্জিত। যদিও এখন পর্যন্ত কোনো পক্ষই পরমাণু যুদ্ধের হুমকি প্রকাশ্যে দেয়নি, তবুও উত্তেজনার এই ধারা অব্যাহত থাকলে ‘ভুল হিসাব’ কিংবা ‘অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী সিদ্ধান্ত’ যে কোন মুহূর্তে ভয়াবহ পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে পারে। এমন প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক মহলের নিরপেক্ষ ও কার্যকর মধ্যস্থতা সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে।
এ সংকট শুধু ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না—তবে দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতাও এতে চরম ঝুঁকির মুখে পড়েছে। আঞ্চলিক বাণিজ্য, সীমানা নিরাপত্তা, শরণার্থী প্রবাহ এবং কৌশলগত ভারসাম্য—সবই প্রশ্নের মুখে। পরিস্থিতি যদি আরও অবনতির দিকে এগোয়, তবে এর অভিঘাত ছড়িয়ে পড়বে বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, নেপাল এমনকি চীন ও ইরানের ভূরাজনীতিতেও।
এ মুহূর্তে দুই দেশের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, উত্তেজনার পথ থেকে সরে এসে আলোচনার টেবিলে ফেরা। একে অপরকে দোষারোপ নয়, বরং আঞ্চলিক শান্তি রক্ষা এবং সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার স্বার্থে দ্বিপাক্ষিক সংলাপ ও কূটনৈতিক দূরদর্শিতা দেখানোই এখন সবচেয়ে জরুরি।
ডেইলি ঢাকা প্রেস / ২৪ এপ্রিল ২০২৫/ জেডআরসি
প্রকাশক : মোহাম্মদ বদরুজ্জামান তালুকদার
সম্পাদক : খান মোহাম্মদ সালেক
Copyright © 2025 Daily Dhaka Press. All rights reserved.