ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাতের কারণে এবারের আইপিএল স্থগিত ঘোষণা করেছে ভারতীয় ক্রিকেট নিয়ন্ত্রণ বোর্ড বা বোর্ড অব কন্ট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়া (বিসিসিআই)। শুক্রবার (০৯ মে) বিসিসিআইয়ের একটি সূত্র ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসকে খবরটি নিশ্চিত করেছে।

বৃহস্পতিবার (০৮ মে) ভারতের জম্মুসহ সীমান্তবর্তী কয়েকটি এলাকায় মিসাইল হামলা চালায় পাকিস্তান। এয়ার রেইড সতর্কতার অংশ হিসেবে এরপর ধর্মশালায় স্টেডিয়ামের আলো নিভিয়ে দেওয়া হয় এবং পাঞ্জাব কিংস ও দিল্লি ক্যাপিটালসের মধ্যকার ম্যাচটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

ধর্মশালা স্টেডিয়াম পাঠানকোট থেকে ১০০ কিলোমিটারের কম দূরত্বে অবস্থিত, যেখানে মিসাইল হামলার কারণে এয়ার রেইড সতর্কতা জানানো হয়। এরপর বিসিসিআই আইপিএল স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছে হিন্দুস্তান টাইমস।

হিন্দুস্তান টাইমসকে বিসিসিআইয়ের সেই সূত্র বলেছেন, ‘আমরা অনির্দিষ্টকালের জন্য আইপিএল স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। খেলোয়াড়দের নিরাপত্তাই আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। এ কারণে আমরা টুর্নামেন্টটি এখন বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। টুর্নামেন্টটি পরে শুরু করা যাবে কি না, আর করলে সেটা কখন, এ বিষয়ে আমরা পরে সিদ্ধান্ত নিব। এ মুহূর্তে জাতীয় স্বার্থ আমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’

ইএসপিএনক্রিকইনফো জানিয়েছে, বিসিসিআই আইপিএল স্থগিত করার বিষয়ে দ্রুতই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবে। আইপিএল চেয়ারম্যান অরুণ ধুমাল, বিসিসিআই সচিব দেবজিৎ সাইকিয়া এবং অন্যান্য অফিশিয়ালরা ফোনে আলোচনার পর টুর্নামেন্টটি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেন। সবগুলো ফ্র্যাঞ্চাইজি দলকে এই সিদ্ধান্ত ইতমধ্যে জানানো হয়েছে। দলগুলোও খেলোয়াড় ও সাপোর্ট স্টাফদের ছেড়ে দিতে শুরু করেছে এবং তাঁরা পরবর্তী সম্ভাব্য ফ্লাইটে ভারত ছাড়বেন।

ধর্মশালায় বৃহস্পতিবার (০৮ মে) দিল্লি–পাঞ্জাব ম্যাচে প্রথম ইনিংস চলাকালীন ম্যাচটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ধর্মশালা ও আশপাশের অঞ্চলের বিমানবন্দর বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

ইএসপিএনক্রিকইনফো জানিয়েছে, শুক্রবার (০৯ মে) সকালে আইপিএল কর্তৃপক্ষের বিশেষ ট্রেনের মাধ্যমে দিল্লি ক্যাপিটালস ও পাঞ্জাব কিংসের খেলোয়াড়েরা দিল্লিতে গিয়েছেন। ক্রিকবাজের খবর অনুযায়ী, খেলোয়াড়, সাপোর্ট স্টাফ ও সম্প্রচারের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ গোপনীয়তার মধ্য দিয়ে যাওয়া হয়।

সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে সংবাদমাধ্যমটি জেনেছে, ধর্মশালায় হোটেল থেকে তাঁদের বাসে উঠতে বলা হয়। বাস থেকে কোথায় নেমে তাঁরা দিল্লি যাওয়ার ট্রেনে উঠবেন, সে বিষয়ে কিছু বলা হয়নি তাদের।

ভারতের সংবাদমাধ্যম ‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’কে এক খেলোয়াড় জানিয়েছেন, দিল্লি ও পাঞ্জাব দুই দলের মধ্যেই ‘ভীতি’ ছড়িয়ে পড়েছিল। বিশেষ করে বিদেশি ক্রিকেটাররা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েন। অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যম সিডনি মর্নিং হেরাল্ড আগেই জানিয়েছে, আইপিএলে খেলা অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটাররা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন এবং তাঁরা দেশে ফিরতে ‘প্রস্তুত।’

ভারতের সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজির বিদেশি খেলোয়াড়েরা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। শুক্রবার (০৯ মে) লক্ষ্ণৌয় লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসের বিপক্ষে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর ম্যাচ ছিল।

নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা থাকায় রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুও লক্ষ্ণৌ থেকে নিজেদের হোম ভেন্যুতে ফিরতে চেয়েছে। টাইমস অব ইন্ডিয়া আরও জানিয়েছে, আইপিএল স্থগিত হওয়ার পর দলগুলোর নিজ নিজ হোম ভেন্যুতে ফেরার প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

বেঙ্গালুরু খেলোয়াড়দের নিয়ে লক্ষ্ণৌ থেকে উড়াল দেবে। বৃহস্পতিবার (০৮ মে) রাতে আহমেদাবাদে পৌঁছানো মুম্বাই ইন্ডিয়ানসও সেখান থেকে হোম ভেন্যুতে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছে। দিল্লিতে অবস্থান করা গুজরাট টাইটানসের ভ্রমণ পরিকল্পনা এখনো জানা যায়নি।

ধর্মশালায় বাতিল হওয়া ম্যাচটিসহ এবারের আইপিএলে এখন পর্যন্ত ৫৮টি ম্যাচ হয়েছে। গ্রুপ পর্বে এখনো ১২টি ম্যাচ বাকি। লক্ষ্ণৌ ও বেঙ্গালুরুতে দুটি, আহমেদাবাদে তিনটি এবং হায়দরাবাদ, দিল্লি, চেন্নাই, মুম্বাই ও জয়পুরে একটি করে ম্যাচ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। প্লে–অফে দুটি ম্যাচ হায়দরাবাদ, একটি ইডেন গার্ডেনে এবং ফাইনাল ইডেনেই অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।

ডেইলি ঢাকা প্রেস/ ০৯ মে ২০২৫/ জেডআরসি