বিশেষজ্ঞ ও নাগরিক সমাজের সমালোচনার মুখেও কালোটাকা সাদা করার সুযোগ ফের বহাল রাখল অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তবে এবার এই সুযোগ শুধু ফ্ল্যাট বা অ্যাপার্টমেন্ট কেনার ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ থাকবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
সোমবার (২ জুন) ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এ সিদ্ধান্ত তুলে ধরা হয়।
দুটি শর্তে কালোটাকা সাদা
অপ্রদর্শিত অর্থ সাদা করতে হলে তা অবশ্যই বৈধ উৎস থেকে অর্জিত হতে হবে এবং কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে আসা হলে সেই অর্থ বৈধতা পাবে না। বাজেটে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে—
১. অর্থ যদি মানি লন্ডারিং, দুর্নীতি, সন্ত্রাসবাদের অর্থায়ন, চাঁদাবাজি বা মাদক কারবার থেকে আসে, তাহলে তা সাদা করা যাবে না।
২. অর্থের উৎস যদি নিজেই অবৈধ হয়— যেমন ঘুষ বা চুরি— তাহলে সেটিও কর দিয়ে বৈধ হবে না।
পুনরায় সুযোগ, তবে করহার বাড়িয়ে
আওয়ামী লীগ সরকারের সময় যেসব ঢালাও সুযোগ ছিল, তা গত বছর বাতিল করে বর্তমান সরকার। তবে এবারের বাজেটে ফ্ল্যাট বা ভবন কেনার শর্তে ফের সুযোগ দেওয়া হলো, যদিও করহার আগের চেয়ে বাড়ানো হয়েছে।
কোথায় কত কর দিতে হবে?
ঢাকা (গুলশান, বনানী, বারিধারা, মতিঝিল, দিলকুশা):
২০০০ বর্গফুটের বেশি: প্রতি বর্গফুটে ২,০০০ টাকা
২০০০ বর্গফুট বা তার নিচে: প্রতি বর্গফুটে ১,৮০০ টাকা
ঢাকার অন্যান্য অভিজাত এলাকা ও চট্টগ্রামের নির্দিষ্ট অঞ্চল:
(ধানমন্ডি, উত্তরা, মহাখালী, বসুন্ধরা, সেগুনবাগিচা, নিকুঞ্জ, পাঁচলাইশ, খুলশী, আগ্রাবাদ ইত্যাদি)
২০০০ বর্গফুটের বেশি: প্রতি বর্গফুটে ১,৮০০ টাকা
২০০০ বর্গফুট বা তার নিচে: প্রতি বর্গফুটে ১,৫০০ টাকা
অন্যান্য সিটি করপোরেশন এলাকায়:
১৫০০ বর্গফুটের বেশি: প্রতি বর্গফুটে ৭০০ টাকা
১৫০০ বর্গফুট বা তার নিচে: প্রতি বর্গফুটে ৬০০ টাকা
জেলা সদরের পৌর এলাকায়:
১৫০০ বর্গফুটের বেশি: প্রতি বর্গফুটে ৩০০ টাকা
১৫০০ বর্গফুট বা তার নিচে: প্রতি বর্গফুটে ২৫০ টাকা
গ্রাম বা অন্যান্য এলাকায়:
১৫০০ বর্গফুটের বেশি: প্রতি বর্গফুটে ১৫০ টাকা
১৫০০ বর্গফুট বা তার নিচে: প্রতি বর্গফুটে ১০০ টাকা
ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রেও অঞ্চলভেদে প্রতি বর্গফুটে কর:
৫০ থেকে ৯০০ টাকা পর্যন্ত নির্ধারণের প্রস্তাব রয়েছে।
সুশীল সমাজ ও বিশেষজ্ঞদের সমালোচনা
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “কালোটাকা সাদা করার সুযোগ অসাংবিধানিক, অনৈতিক ও বৈষম্যমূলক। এটি দুর্নীতিকে উৎসাহিত করে এবং সংবিধানের ২০(২) অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করে।”
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান ড. আবদুল মজিদ বলেন, “বিদেশে অর্থ পাচার ঠেকাতে এই উদ্যোগ কিছুটা কার্যকর হলেও এটি নীতিগতভাবে অনুচিত। সামাজিক ন্যায্যতার পরিপন্থী এই সিদ্ধান্ত ছাত্র-জনতার আন্দোলনের দাবির বিরুদ্ধেও যায়।”
ফিরে দেখা: কত টাকা সাদা হলো?
এনবিআর সূত্র জানায়, বিগত বছরগুলোতে সব মিলিয়ে প্রায় ৪৭ হাজার কোটি টাকা ‘অপ্রদর্শিত অর্থ’ হিসেবে ঘোষণা দিয়ে বৈধ করা হয়েছে।
প্রকাশক : মোহাম্মদ বদরুজ্জামান তালুকদার
সম্পাদক : খান মোহাম্মদ সালেক
Copyright © 2025 Daily Dhaka Press. All rights reserved.