Site icon Daily Dhaka Press

ফের শুরু হচ্ছে করোনা পরীক্ষা, স্কুল-কলেজে ৫ সতর্কতা

ভারতসহ একাধিক দেশে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশেও সতর্কতা জোরদার করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে হাসপাতালগুলোতে করোনা পরীক্ষা চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তবে আপাতত এ পরীক্ষা হবে সীমিত পরিসরে।

অন্যদিকে এই পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলার নির্দেশ দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)।

বুধবার (১১ জুন) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার (সিডিসি) লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক হালিমুর রশীদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

অধ্যাপক হালিমুর রশীদ বলেন, প্রাথমিকভাবে যেসব মেডিক্যাল কলেজ ও জেলা হাসপাতালে আরটি-পিসিআর ল্যাব রয়েছে, সেখানেই এই পরীক্ষা শুরু হবে বলে জানা গেছে।

গত ৫ জুন দেশে করোনায় একজনের মৃত্যু হয়। আশঙ্কাজনক না হলেও দেশে এ রোগের প্রকোপ বাড়ছে। এ পরিস্থিতিতে করোনার সম্ভাব্য বিস্তার বন্ধে এর পরীক্ষার সরঞ্জাম বাড়ানো এবং আবার টিকা দেওয়া শুরুর কথা বলছেন জনস্বাস্থ্যবিদেরা।

অধ্যাপক হালিমুর রশীদ বলেন, আগামী ১০ দিনের মধ্যে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা আবার চালু করা যাবে।

প্রাথমিকভাবে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ, মুগদা জেনারেল হাসপাতাল, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগীয় শহরের হাসপাতালগুলোয় পরীক্ষা চালু হবে। যেসব হাসপাতালে আরটি-পিসিআর ল্যাব রয়েছে, শুধু সেখানেই শুরুতে এই সুবিধা মিলবে।

আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) তথ্য অনুযায়ী, গত এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহে দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন একজন। কিন্তু গত মে মাসের শেষ সপ্তাহে এতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় ২৫-এ।

আইসিডিডিআরবির গবেষকেরা করোনার নতুন একটি ধরন শনাক্তের কথা বলছেন। এর নাম এক্সএফজি। এর পাশাপাশি এক্সএফসি ধরনটিও পাওয়া গেছে। দুটিই করোনার শক্তিশালী ধরন অমিক্রনের জেএন-১ ভ্যারিয়েন্টের উপধরন।

করোনার সংক্রমণ রোধে হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা কিটের মজুতের কথা বলছেন জনস্বাস্থ্যবিদেরা। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। রাজধানীর বড় তিন হাসপাতাল- ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গত রবিবার পর্যন্ত খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেসব জায়গায় করোনা পরীক্ষার কোনো কিট নেই।

আইসিডিডিআরবি’র কোভিড-১৯ নজরদারি ডেটা বিশ্লেষণ অনুযায়ী, মে মাসে সংক্রমণের হার তীব্রভাবে বেড়েছে। মে মাসে পরীক্ষা করা এক হাজার ৪০৯টি নমুনার মধ্যে নয় দশমিক ৫১ শতাংশ কোভিড-১৯ পজিটিভ এসেছে; যা জানুয়ারি ২০২৩ এর পর সর্বোচ্চ।

আইসিডিডিআরবি জানিয়েছে, গত মাসে কোভিড রোগীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। তবে তাদের বিজ্ঞানীরা জোর দিয়ে বলেছেন, বর্তমানে জনসাধারণের বড় ধরনের উদ্বেগের কোনো কারণ নেই এবং কোভিড-১৯-এর সাধারণ সতর্কতাগুলো মেনে চলার গুরুত্ব তুলে ধরেছেন।

আইসিডিডিআরবি এবং আইইডিসিআরের যৌথভাবে পরিচালিত হাসপাতাল-ভিত্তিক ইনফ্লুয়েঞ্জা নজরদারি গবেষণায় দেখা গেছে এপ্রিল মাসে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রথমবারের মতো দুটি নতুন ওমিক্রন সাব-ভ্যারিয়েন্ট এক্সএফজি এবং এক্সএফসি শনাক্ত হয়েছে।

সোমবার প্রকাশিত আইসিডিডিআরবি’র এক প্রতিবেদন অনুসারে, গবেষণায় অংশ নেওয়া হাসপাতালগুলোতে পরীক্ষা হওয়া রোগীদের প্রায় সাত শতাংশের মধ্যে নতুন ধরনের করোনা ভাইরাস মিলেছে। বছরের শুরুর দিকে যখন সংক্রমণ প্রায় ছিলই না, তার তুলনায় এই হার অনেক বেশি।

এদিকে, গত ৪ জুন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে যেন সব স্থল, নদী ও বিমানবন্দরগুলোতে স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং নজরদারি ব্যবস্থা আরো জোরদার করা হয়। এর উদ্দেশ্য হলো, করোনাভাইরাসের নতুন উপধরন – বিশেষ করে ওমিক্রন এলএফ.৭ (LF.7), এক্সএফজি (XFG), জেএন.১ (JN.1), এবং এনবি.১.৮.১ (NB.1.8.1) – যেগুলো ভারতসহ বেশ কিছু প্রতিবেশী দেশে শনাক্ত হয়েছে, সেগুলোর সংক্রমণ রোধ করা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছে, সব প্রবেশপথে থার্মাল স্ক্যানার বা ডিজিটাল হ্যান্ডহেল্ড থার্মোমিটার ব্যবহার করে শরীরের তাপমাত্রা মাপতে হবে। পাশাপাশি, স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য পর্যাপ্ত মাস্ক, গ্লাভস এবং ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) মজুত নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া, জনসচেতনতা বাড়াতে এবং ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে সংক্রমণ প্রতিরোধের নির্দেশিকা প্রচার করতে হবে।

এ ছাড়া খুব প্রয়োজন না হলে ভারতসহ যেসব প্রতিবেশী দেশে করোনাভাইরাসের নতুন ধরনের সংক্রমণ বেড়েছে, সেখানে ভ্রমণ করা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। গত ৬ জুন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মাস্ক ব্যবহারের নির্দেশিকা জারি করেছে। এরপর বাংলাদেশ রেলওয়ে এবং মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষও যাত্রীদের মাস্ক পরার অনুরোধ জানিয়েছে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে মেনে চলতে হবে যেসব নির্দেশনা:
১. হাত ধোয়া: নিয়মিতভাবে সাবান ও পানি দিয়ে অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

২. জনসমাগম এড়ানো: অপ্রয়োজনীয় ভিড় এড়িয়ে চলা এবং বাইরে গেলে অবশ্যই মাস্ক পরিধান করতে হবে।

৩. দূরত্ব বজায় রাখা: আক্রান্ত ব্যক্তির কাছ থেকে অন্তত তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।

৪. স্পর্শ না করা: অপরিষ্কার হাত দিয়ে চোখ, মুখ ও নাক স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

৫. হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার: হাঁচি বা কাশির সময় টিস্যু অথবা কনুই দিয়ে মুখ ঢেকে নেওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত নির্দেশনাসমূহ:
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দেশের আন্তর্জাতিক প্রবেশপথগুলোতে থার্মাল স্ক্যানার ও ডিজিটাল থার্মোমিটারের সাহায্যে যাত্রীদের শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করতে হবে। স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য পর্যাপ্ত মাস্ক, গ্লাভস এবং পিপিই (ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম) সংরক্ষণের ওপরও গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। যদি কারও মধ্যে করোনার উপসর্গ দেখা দেয়, তাহলে তাকে ঘরে অবস্থানের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। উপসর্গ গুরুতর হলে নিকটস্থ হাসপাতালে যেতে বলা হয়েছে।

প্রয়োজনে আইইডিসিআরের হটলাইন নম্বর ০১৪০১-১৯৬২৯৩–এ যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

করোনার নতুন রূপ কতটা বিপজ্জনক হবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়, তবে সাবধানতা ও সচেতনতাই হতে পারে আমাদের সুরক্ষার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। তাই স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসাসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি মানা এখন সময়ের দাবি।

সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এখনই সচেতন ও প্রস্তুত হতে হবে—নিজেদের এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য।

বাংলাদেশে ২০২০ সালের ৮ মার্চ প্রথম কোভিড-১৯ শনাক্ত হয় এবং এর দশ দিন পর প্রথম মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। এরপর থেকে দেশে ২০ লাখ ৫১ হাজারের বেশি আক্রান্ত ও ২৯ হাজার ৪৯৯ জনের মৃত্যু হয়েছে; যার মধ্যে ২০২১ সাল ছিল সবচেয়ে প্রাণঘাতী।

Exit mobile version