পাহাড় আর সীমান্ত ঘেরা পাকিস্তানের উত্তরের প্রত্যন্ত জনপদ—উত্তর ওয়াজিরিস্তান। সেখানেই রক্তাক্ত হলো আরেকটি দিন।
শনিবার (২৮ জুন) দুপুরে একটি সামরিক বহরে আত্মঘাতী গাড়ি বোমা হামলায় নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ১৬ জন সেনা সদস্য। আহত হয়েছেন বহু মানুষ—যাদের মধ্যে রয়েছেন বেসামরিক নাগরিক, স্থানীয় সরকার কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্য।
হামলার তীব্রতায় কেঁপে ওঠে পুরো এলাকা। বিস্ফোরণের চাপ এতটাই ছিল যে দুইটি বাড়ির ছাদ ধসে পড়ে, নিচে চাপা পড়ে ছয় শিশু। স্থানীয়রা জানান, অনেককে ধ্বংসস্তূপ থেকে জীবিত টেনে বের করে আনা হয়েছে, কিন্তু কারও চোখে আর কোনো কথা নেই—শুধু স্তব্ধতা।
একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘গাড়ির শব্দটা শুনেই মনে হচ্ছিল অস্বাভাবিক। তার পর মুহূর্তেই একটা বিস্ফোরণ, আকাশ কালো ধোঁয়ায় ঢেকে যায়। মানুষ চিৎকার করে ছুটছিল।’
এই নির্মম হামলার দায় স্বীকার করেছে হাফিজ গুল বাহাদুরের নেতৃত্বাধীন তালেবানপন্থি একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী। এটি পাকিস্তানি তালেবানের অংশ বলেই পরিচিত। এই গোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তানি বাহিনীকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়ে আসছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আফগানিস্তানে তালেবান পুনরাবির্ভাবের পর থেকেই পাকিস্তানে জঙ্গি তৎপরতা উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে।
ইসলামাবাদ বারবার অভিযোগ করে আসছে—এইসব হামলার পেছনে রয়েছে আফগান ভূখণ্ডে অবস্থানরত জঙ্গি শিবিরগুলো। কিন্তু তালেবান প্রশাসন বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছে।
পাকিস্তানের জন্য এক ভয়াবহ পরিসংখ্যান সামনে এনেছে এএফপি। সংস্থাটি জানিয়েছে, ২০২৫ সালের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত খাইবার পাখতুনখোয়া ও বেলুচিস্তানে প্রায় ২৯০ জন নিহত হয়েছেন সন্ত্রাসী হামলায়, যাদের অধিকাংশই দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য। এই অস্থিরতার মাঝে সেনাবাহিনী, পুলিশ, সাধারণ নাগরিক—কেউই নিরাপদ নয়। বারবার ছিন্নভিন্ন হয়ে যাচ্ছে নিরাপত্তার স্বপ্ন।
১৬ জন সেনা সদস্যের প্রাণ গেছে একদিনে। ছয় শিশু আহত, বাড়িঘর ধ্বংস। কিন্তু সেই পুরনো প্রশ্নটা আবারও সামনে আসে—এই রক্তচক্র আর কতদিন চলবে?
সীমান্তের ওপারে তালেবান, ভেতরে জঙ্গিগোষ্ঠীর আস্তানা, দুর্বল গোয়েন্দা নজরদারি আর রাজনৈতিক অস্পষ্টতা—সব মিলিয়ে পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত যেন আবারও হয়ে উঠছে ভয় আর অস্থিরতার ভূগোল।
প্রকাশক : মোহাম্মদ বদরুজ্জামান তালুকদার
সম্পাদক : খান মোহাম্মদ সালেক
Copyright © 2025 Daily Dhaka Press. All rights reserved.