এননটেক্স গ্রুপকে ঋণ দেওয়ার নামে ২৯৭ কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল বারকাতকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
শুক্রবার (১১ জুলাই) শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জুয়েল রানা এই আদেশ দেন। এদিন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ শাহজাহান মিরাজ আসামিকে আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন।
আবেদনে বলা হয়, আসামির বিরুদ্ধে পরস্পর যোগসাজশে প্রতারণা, জালিয়াতি, মিথ্যা রেকর্ডপত্র তৈরি করে খাঁটি হিসেবে ব্যবহার, অপরাধজনক অসদাচরণ ও বিশ্বাসভঙ্গ করেছেন। ব্যাংক কর্তৃক মর্টগেজ নেওয়া জমিতে বাস্তবে কোনো ভবন/স্থাপনা/কারখানা না থাকা সত্ত্বেও ঋণগ্রহীতা মালিক হওয়ার পূর্বেই এই জমিতে স্থাপনা দেখিয়ে বিভিন্ন পন্থায় ২৯৭ কোটি ৩৮ লাখ ৮৭ হাজার ২৯৬ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে মামলা করা হয়েছে।
মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন রয়েছে। আসামির জামিন মঞ্জুর করা হলে আত্মগোপন করতে পারেন এবং সাক্ষীদের ও তদন্ত কাজকে প্রভাবিত করতে পারেন। এমন অবস্থায় তাকে তাকে আটক রাখা প্রয়োজন।
আসামিপক্ষের আইনজীবীরা তার জামিন চেয়ে শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষ এর বিরোধিতা করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত তার জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ শাহজাহান মিরাজ বলেন, “আসামির তিন দিনের রিমান্ড আবেদন ছিল। তবে এই আদালতের রিমান্ড বিষয়ে শুনানির করার এখতিয়ার না থাকায় তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পরে সিনিয়র আদালতে এই রিমান্ড আবেদনের ওপর শুনানি হবে।”
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে ধানমন্ডির ৩ নম্বর সড়ক এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।
এর আগে, এননটেক্স গ্রুপের নামে ২৯৭ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান এবং অধ্যাপক আবুল বারাকাতসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত ২০ ফেব্রুয়ারি মামলাটি দায়ের করেন দুদকের উপপরিচালক মো নাজমুল হোসাইন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে জনতা ব্যাংক থেকে ২৯৭ কোটি ৩৮ লাখ ৮৭ হাজার ২৯৬ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। আসামিদের বিরুদ্ধে ঋণের অর্থ সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজশে জাল-জালিয়াতি ও মানিলন্ডারিংয়ের মাধ্যমে আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।
গভর্নর থাকাকালে আতিউর রহমান ও আবুল বারাকাত পরস্পর যোগসাজশে জালিয়াতির মাধ্যমে এননটেক্স গ্রুপের ২২টি প্রতিষ্ঠানকে ওই বিপুল পরিমাণ অর্থ ঋণ হিসেবে পাইয়ে দেন। পরবর্তী সময়ে আতিউর রহমান ও তার সহযোগীরা বিভিন্ন অনৈতিক কৌশল ব্যবহার করে সেই অর্থ আত্মসাৎ করেন।
মামলার আসামিরা হলেন সাবেক ডেপুটি গভর্নর-২ আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান, সাবেক সহকারী পরিচালক মোছাম্মৎ ইসমত আরা বেগম, জনতা ব্যাংকের সাবেক পরিচালক ড. জামাল উদ্দিন আহমেদ, মো. ইমদাদুল হক, নাগিবুল ইসলাম দীপু, ড. আর এম দেবনাথ, মো. আবু নাসের, সঙ্গীতা আহমেদ ও সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. নিতাই চন্দ্র নাথ, ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও আব্দুছ ছালাম আজাদ, সাবেক উপ-মহাব্যবস্থাপক আজমুল হক, সাবেক এজিএম অজয় কুমার ঘোষসহ প্রমুখ।
আবুল বারকাত ঢাকা বিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান ছিলেন। পাশাপাশি তিনি হিউম্যান ডেভলপমেন্ট রিসার্চ সেন্টার নামের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানেরও অবৈতনিক প্রধান উপদেষ্টা।
প্রকাশক : মোহাম্মদ বদরুজ্জামান তালুকদার
সম্পাদক : খান মোহাম্মদ সালেক
Copyright © 2025 Daily Dhaka Press. All rights reserved.