“সবাই বলে দুইটা বাচ্চা বেইচা দিতে, মা হয়ে কি বেঁচতে পারি?”- কান্নাজড়ানো কণ্ঠে এমনই প্রশ্ন করছিলেন মাত্র ২০ বছর বয়সী এক অসহায় মা, নাছিমা আক্তার।
এক মাস আগে শেরপুরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে জন্ম দেন তিন সন্তানের- দুই ছেলে ও এক মেয়ে। কিন্তু দুধ, খাবার আর ওষুধের অভাবে তিন সন্তানের কঙ্কালসার অবস্থা।
স্বামী লিখন মিয়া ঢাকায় রিকশা চালান। সংসার চলে খুব কষ্টে। সিজারে সন্তান জন্ম দিতে হয়েছে, খরচ হয়েছে ৪০ হাজার টাকা। এই টাকা জোগাড় করতে হয়েছে ধারদেনা করে। এখন ঋণের চাপ, আবার তিন নবজাতকের খাবার, চিকিৎসা- সব মিলে পরিবারটি দিশেহারা।
নাছিমার পরিবার থাকে শেরপুর সদর উপজেলার লসমনপুর ইউনিয়নের দিঘলদী মোল্লাপাড়া এলাকায়। একটি জরাজীর্ণ টিনের ঘরে বসবাস করে তারা। সেই ঘরের এক পাশে হাঁড়িপাতিল, অন্য পাশে মুরগির খোপ। এমন অবস্থায় বেঁচে থাকা যেমন কষ্টের, তেমনি তিনটি নবজাতককে নিয়ে টিকে থাকাও কঠিন।
শিশুর দাদি খোরশেদা বেগম বলেন, “খাওয়ার অভাবে তিনটা বাচ্চা শুকায়া গেছে। পুষ্টির অভাবে মা নাছিমাও অসুস্থ। ওষুধ কেনারও সামর্থ্য নাই।”
লিখনের বড় ভাই খোকন বলেন, “ভাই ঢাকায় কাম করতে গেছে, আমি নিজের সংসার চালাইতে পারি না, এই তিনটা বাচ্চা আর নাসিমারে নিয়ে কী করুম?”
স্থানীয় ইউপি সদস্য শাহ আলম বলেন, “গরীবের ঘরে তিন সন্তান যেন বোঝা হয়ে গেছে। ঠিকভাবে পরিচর্যা না হলে বড় বিপদ হতে পারে। আমরা ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে সাহায্য করার চেষ্টা করব।”
শেরপুর সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আরিফুর রহমান জানান, এমন শিশুদের জন্য সেল্টার হোমে রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। পরিবার চাইলে সরকারি নিয়ম অনুসারে সহায়তা করা যাবে। শিশুর পরিবারের আবেদন পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এখন দরকার এই অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়ানো। সরকারের পাশাপাশি সমাজের সামর্থ্যবান মানুষরা এগিয়ে এলে তিনটি নিষ্পাপ শিশুর জীবন বাঁচতে পারে।