
ইবি প্রতিনিধি: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আল কুরআন এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী শহিদ সাজিদ আব্দুল্লাহ হত্যার বিচারহীনতার ১০০ দিন পূর্তিতে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে 'অন্ধের তদন্ত যাত্রা' নামক প্রতীকী লাশ মিছিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
রোববার (২৬ অক্টোবর) বেলা ১২ টার দিকে শাহ আজিজুর রহমান হল সংলগ্ন পুকুর পাড় থেকে মিছিলটি শুরু হয়। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রশাসন ভবনের সামনে যেয়ে শেষ হয়।
এতে শাখা ছাত্রদলের আহবায়ক সাহেদ আহম্মেদ, সদস্য সচিব মাসুদ রুমি মিথুন, সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক আনোয়ার পারভেজ, ছাত্রশিবির সেক্রেটারি ইউসুফ আলী, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন সভাপতি ইসমাইল হোসেন রাহাত, তালাবায়ে আরাবিয়ার সেক্রেটারি শামীম হোসেন, খেলাফত ছাত্র মজলিশ সভাপতি সাদেক খান, শিক্ষার্থী বোরহান উদ্দিন, রেজাউল রাকিব সহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, ১০০ দিন পেরিয়ে গেলেও আমাদের প্রশাসন সাজিদের খুনিদের গ্রেফতার করতে পারেনি। বিগত ১০০ দিনে প্রশাসন শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের সাথে বিচারের নামে তামাশা করেছে, বিচারের নামে টালবাহানা করেছে। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হত্যা হলে ৭ দিনের মধ্যে খুনিরা বেরিয়ে যায় অথচ সাজিদের বেলায় ১০০ দিন পেরিয়ে গেলেও তারা কোন পদক্ষেপ নেয় নাই। প্রতিবাদের এমন কোন ভাষা নাই যেভাবে সাজিদ হত্যার বিচার চাওয়া হয়নি কিন্তু তবুও প্রশাসন দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ নেয়নি। খুনিদের গ্রেফতারের দাবি জানানো হলেই নামমাত্র সিআইডির কয়জনকে নিয়ে এসে একটি বুঝ দিয়ে দেয়। আমাদের মনে হচ্ছে, এই প্রশাসন অন্তর দিয়ে চায়না যে সাজিদের হত্যার বিচার হোক।
ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের বোরহান উদ্দিন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিচারহীনতার সেঞ্চুরি করেছে, তারা ডাবল সেঞ্চুরি করতে চায় কিনা, তারা এটাকে টেস্ট ম্যাচ মনে করেছে কিনা সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত না। ১০০ দিনেও তারা এমন কোন পদক্ষেপ নিতে পারে নাই যাতে মনে হবে যে বিচারের কোন অগ্রগতি হয়েছে। শীঘ্রই বলতে তারা কতদিন বোঝায় তার জবাব তারা দেয়না। প্রশাসন জানে শিক্ষার্থীদের সামনে মূলা ঝুলিয়ে দিতে। প্রশাসন এতোটাই নির্লজ্জ যে, নিয়মিত কাউন্টডাউন বোর্ডে দিন গণনা হলেও তারা পদক্ষেপ নেয়নি।
ইসলামী ছাত্র আন্দোলন সভাপতি ইসমাইল হোসেন রাহাত বলেন, আমরা নিন্দা জানাচ্ছি, আমরাই ক্লাস বাদ দিচ্ছি, মানববন্ধন করছি, প্রতিবাদ জানাচ্ছি কিন্তু মনে হয় আমাদের সময় নষ্ট করা, ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করা, এতে এদের কিছুই আসে যায় না। এরা শিক্ষার্থীদের শিক্ষার্থীদের হিসেবে মূল্যায়ন করে কিনা তা ভাবতে কষ্ট হয়। যদি শিক্ষার্থী হিসেবে ভাবতেন, আপনার সন্তান হিসেবে ভাবতেন তাহলে আপনারা এটা বিচার করতেন। এই ১০০ দিন আপনাদের জন্য লজ্জ্বার। একটা হত্যা তো ঠেকাতে পারলেন না এমনকি তা বিচারের আওতায়ও আনতে পারলেন না। সিআইডি ঘটনার খুবই কাছাকাছি চলে গেছেন। তারা সাসপেক্ট করছেন কিন্তু শুনলাম প্রশাসন তাদের ধরার অনুমতি দিচ্ছেনা। কেন? কোন জুজুর ভয়ে প্রশাসন তাদেরকে গ্রেপ্তার করার অনুমতি দিচ্ছেনা আমরা তা জানতে চাই।
ছাত্রশিবির সেক্রেটারি ইউসুফ আলী বলেন, আজকে ১০১ দিন হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত খুনিদের গ্রেফতার দেখতে পাইনি। প্রশাসন যদি মনে করে যে আমরা সাজিদকে ভুলে যাব তাহলে আপনারা ভুল ভাবছে। আমরা যখন রাজপথে নেমেছি তখন সাজিদ হত্যার বিচারের শেষ না দেখা পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরব না। আপনারা যতই টালবাহানা করুন আমরা সাজিদকে ভুলছি না। সাজিদের হত্যার বিচার না হলে কেওই নিজেদের নিরাপদ মনে করছে না। অতিদ্রুত সাজিদের খুনিদের গ্রেফতার করার ব্যবস্থা করুন।
শাখা ছাত্রদলের আহবায়ক সাহেদ আহম্মেদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অথর্বের ভূমিকায় আছে। সিআইডি প্রশাসন ড্রেস পড়ে মডেলিং করে আমাদের দেখাচ্ছে যে আমরা কাজ করছি। আজকের বসাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং সিআইডির সাথে আমাদের শেষ বসা। আজকের পরে তাদের আর সময় দেওয়া হবে না৷ আমাদের তাদের অগ্রগতির ব্যাপারে স্পষ্ট করে জানাতে হবে। কোন যদি, কিন্তুর কথা চলবে না। প্রতিটি শিক্ষার্থীর মধ্যে আতঙ্ক কাজ করছে কখন কাকে মেরে ফেলা হয়। যতক্ষণ না সাজিদের খুনিদের ফাসির দড়িতে ঝুলতে দেখব ততদিন শিক্ষার্থীরা এই আন্দোলন চালিয়ে যাবে।
প্রকাশক : মোহাম্মদ বদরুজ্জামান তালুকদার
সম্পাদক : খান মোহাম্মদ সালেক
Copyright © 2025 Daily Dhaka Press. All rights reserved.