ঢাকা : এক দফা দাবিতে সরকারকে আল্টিমেটাম দিয়ে অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ থেকে চূড়ান্ত আন্দোলনে নামতে যাচ্ছে বিএনপি। তবে ২০ থেকে ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত দুর্গাপূজার সময় দলটি বড় কোনো কর্মসূচি রাখবে না। তাই শারদীয় দুর্গাপূজা শুরুর দুয়েক দিন আগে ১৭-১৮ অক্টোবরের দিকে ঢাকায় বড় সমাবেশ থেকে সরকারকে আল্টিমেটাম দিতে পারে দলটি।
দাবি না মানলে পূজার পর থেকে শুরু হবে চূড়ান্ত ধাপের আন্দোলন, যা চলবে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত। অবশ্য সরকার দাবি না মানলে আন্দোলনের কর্মসূচি তফসিলের পরেও অব্যাহত থাকবে।
গত ০২ অক্টোবর রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে চূড়ান্ত আন্দোলন পরিকল্পনা নিয়ে এ আলোচনা হয়। এ বৈঠকের আগে আন্দোলনের কর্মসূচি কী হতে পারে, সে সম্পর্কে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক জোট ও দলগুলোর পরামর্শও নিয়েছে বিএনপি।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, মার্কিন ভিসানীতিকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে আন্দোলনকে চূড়ান্ত লক্ষ্যে নিয়ে যেতে চায় বিএনপির হাইকমান্ড। এর মধ্যে ঢাকায় যুব ও ছাত্র কনভেনশন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বরাবর স্মারকলিপি দেওয়ার কর্মসূচিও রয়েছে। সরকারকে আল্টিমেটাম দেওয়ার আগে চলতি মাসে পর্যায়ক্রমে এসব কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে। এর ফাঁকে ফাঁকে বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচিও চলতে থাকবে।
এক দফা দাবিতে গত ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া চূড়ান্ত আন্দোলনের প্রথম ধাপে এখন রোডমার্চ ও সমাবেশের কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি। কাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম অঞ্চলে রোডমার্চের মধ্য দিয়ে এ পর্যায়ের কর্মসূচি সমাপ্ত হবে। এরই মধ্যে রাজধানী ও এর আশপাশের জেলায় বিএনপির আটটি সমাবেশ হয়েছে। রোডমার্চ হয়েছে চারটি। এছাড়া ঢাকায় মহিলা সমাবেশ, শ্রমিক কনভেনশন ও কৃষক সমাবেশ হয়েছে। আজ বুধবার ঢাকায় পেশাজীবী কনভেনশন অনুষ্ঠিত হবে।
বৈঠকে বিএনপি নীতিনির্ধারকরা এসব কর্মসূচির মূল্যায়ন করেছেন। তারা মনে করছেন, এসব কর্মসূচিতে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নিয়েছে। পাশাপাশি উল্লেখযোগ্য অংশগ্রহণ ছিল সাধারণ মানুষেরও। শ্রমিক কনভেনশনের মধ্য দিয়ে এক দফার চলমান আন্দোলনে আগামীতে শ্রমিকশ্রেণির অংশগ্রহণ আরও বাড়বে। এতে আন্দোলন আরও বেগবান হবে। এ ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। চলমান কর্মসূচি শেষ হওয়ার পর ‘সরকার পতনের চূড়ান্ত ধাপের কর্মসূচি’ নিয়ে আরও শক্তভাবে মাঠে নামবেন তারা।
আন্দোলনের কর্মসূচির ব্যাপারে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা গণতন্ত্রের বাইরে যেতে পারি না। আমরা গণতান্ত্রিকভাবে যাব, নিয়মতান্ত্রিকভাবে যাব। এরপরও যদি কেউ বাধা দেয়, সেই বাধাও আমরা গণতান্ত্রিকভাবে অতিক্রম করব।’
স্থায়ী কমিটির সভায় খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। সভায় দলের নীতিনির্ধারকরা বলেছেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসাকে ‘দাবার ঘুঁটি’ হিসেবে ব্যবহার করে সরকার বিএনপিকে কাবু করতে চায়। তবে চেয়ারপারসন কোনো ধরনের ঘুঁটি হিসেবে ব্যবহার হবেন না। অবশ্য সরকার বিএনপির ব্যাপারে তার পরিবারের কাছে কী ধরনের শর্ত দিয়েছে, সে ব্যাপারে সুস্পষ্ট কোনো ধারণা দিতে পারেনি বা দেয়নি সূত্রটি।
তবে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল গত ১ অক্টোবর কিশোরগঞ্জে দলের রোডমার্চ সমাপনী সমাবেশে বক্তব্যে এ বিষয়টি তুলে বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে শর্ত দেওয়া হয়েছিল, তিনি যদি চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে চান, তাহলে বিএনপিকে আগামী জাতীয় নির্বাচনে আসতে হবে।
বিএনপি এর উত্তর দেওয়ার আগেই হাসপাতাল থেকে খালেদা জিয়া তা প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ‘তার জীবনে গণতন্ত্রের জন্য কোনো শর্ত নেই। ভোটের অধিকারের জন্য, এই দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য কোনো শর্ত নেই। কোনো শর্ত খালেদা জিয়ার নামের সঙ্গে যায় না এবং আমরাও তা মানি না।’