নিজস্ব সংবাদদাতা : ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ সামনে রেখে আজ থেকেই ঢাকার ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে মিছিল নিয়ে রাজপথে থাকবে ক্ষমতাসীন দল।
২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ সামনে রেখে আজ বৃহস্পতিবার থেকেই ঢাকার রাজপথে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। রাজপথ নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিএনপির কর্মসূচির আগের দুই দিন, অর্থাৎ আজ ও আগামীকাল রাজধানীর ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে মিছিল-সমাবেশ করবে ক্ষমতাসীন দল। ঢাকা জেলার পাঁচ উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়ন এবং তিনটি পৌরসভার ওয়ার্ডেও মিছিল-সমাবেশের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
দলীয় সূত্র থেকে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের কাছে খবর হচ্ছে, বিএনপির প্রচুর নেতা-কর্মী ইতিমধ্যে ঢাকায় অবস্থান নিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ভয় ধরানোর জন্য আজ থেকেই মিছিল–সমাবেশের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সরকার ও আওয়ামী লীগসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, শেষ পর্যন্ত ২৮ অক্টোবর বিএনপি ও আওয়ামী লীগ কারোরই সমাবেশ করার অনুমতি না–ও মিলতে পারে। এ ক্ষেত্রে বিএনপির সঙ্গে ঢাকার ভেতরে পাড়া-মহল্লায় এবং প্রবেশমুখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মুখোমুখি অবস্থান তৈরি হবে। এমন পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগকেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি পাড়া-মহল্লায় অবস্থান নিতে হবে। এই প্রস্তুতির অংশ হিসেবেও আগের দুই দিন ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে মিছিল করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবীর ও ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পনিরুজ্জামান; তিনজনই আজ থেকে মিছিল করার কথা নিশ্চিত করেন। তাঁরা বলেন, ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত যেকোনো মূল্যে রাজপথ নিয়ন্ত্রণে রাখার অংশ হিসেবে এই মিছিল-সমাবেশ।
২৮ অক্টোবর ঘিরে আওয়ামী লীগ দফায় দফায় প্রস্তুতি সভা করছে। গতকাল বুধবার ঢাকার দুই মহানগর ও আশপাশের উপজেলার নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে প্রস্তুতি সভা হয় তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে। এতে ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতারাও এসেছিলেন। সভায় নেতা ও জনপ্রতিনিধিরা ২৮ অক্টোবর কে কত লোকজন নিয়ে আসবেন, সে অঙ্গীকার করেছেন। এর মধ্যে ২ হাজার থেকে কেউ কেউ ৫০ হাজার পর্যন্ত লোক নিয়ে আসবেন বলে জানিয়েছেন।
বিএনপি-জামায়াত রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে—এমন আশঙ্কার কথা জানিয়ে সতর্ক ও দলের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
গতকালের এই সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তৃতা করেন। ওবায়দুল কাদের দলের নেতাদের ২৭ অক্টোবর রাতে না ঘুমানোর পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, ‘২৭ তারিখ থেকে চোখে ঘুম থাকবে না। প্রয়োজনে নির্ঘুম রাত কাটাতে হবে। যেখানে আমার অস্তিত্বের প্রশ্ন, সেখানে ঘুম দিয়ে কী করব? বারে বারে না, এবারই এদের (বিএনপি) চিরতরে পরাজিত করতে হবে।’
সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান নেতা-কর্মীদের মোটা লাঠিতে ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে আসার আহ্বান জানান।
আমার বাড়িতে ডাকাতি হতে পারে—এমনটা জানার পর নিশ্চয় বসে থাকব না। সতর্ক হব, পুলিশকে জানাব। আওয়ামী লীগ সেই সতর্কতাই অবলম্বন করছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্র বলছে, বিএনপি ২৮ অক্টোবর রাজপথে বসে না পড়লেও অনেক নেতা-কর্মীকে ঢাকায় রেখে দেবে। এরপর তারা সচিবালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ঘেরাও কর্মসূচি দিতে পারে। এভাবে টানা চলতে পারে বিএনপির ঢাকা অচল কর্মসূচি। বিএনপি দীর্ঘ সময় এভাবে চলতে থাকলে প্রশাসন ও সরকারের বিভিন্ন সংস্থার মনোবলে চিড় ধরতে পারে। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদেরও কিছুটা হতোদ্যম হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এমন আশঙ্কা থেকে বিএনপিকে প্রথম দিনই কোণঠাসা করে ফেলতে আওয়ামী লীগ ও সরকার নানা পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি নিচ্ছে।
সারা দেশে সতর্ক থাকতে কেন্দ্র থেকে বার্তা
২৮ অক্টোবরের সমাবেশ ও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সারা দেশে দলের জেলা, মহানগর, উপজেলা ও পৌরসভা পর্যায়ের নেতাদের কাছে বিশেষ বার্তা পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক, দপ্তর ও উপদপ্তর সম্পাদকেরা মুঠোফোনে খুদে বার্তা (এসএমএস) ও ওয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে নেতাদের কাছে এই বার্তা পাঠিয়েছেন। এতে বিএনপি-জামায়াত রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে—এমন আশঙ্কার কথা জানিয়ে সতর্ক ও দলের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পনিরুজ্জামান ও খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হারুনুর রশীদ এমন সাংগঠনিক বার্তা পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। হারুনুর রশীদ বলেন, বিএনপি-জামায়াত আন্দোলনের নামে অরাজকতা করতে পারে। এ জন্য তাঁদের রাজপথে সতর্ক পাহারায় থাকতে বলা হয়েছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত তাঁরা রাজপথ সতর্ক পাহারায় রাখবেন।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্র বলছে, বিএনপি ঢাকার পাশাপাশি জেলা-উপজেলাকে লক্ষ্যবস্তু বানাতে পারে। ঢাকায় সুবিধা না করতে পারলে জেলা-উপজেলা অচল করার চেষ্টা করবে। এ কারণে জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের সতর্ক করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা রাজপথে থাকলে বিরোধী সুবিধা করতে পারবে না বলে মনে করেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, ‘আমার বাড়িতে ডাকাতি হতে পারে—এমনটা জানার পর নিশ্চয় বসে থাকব না। সতর্ক হব, পুলিশকে জানাব। আওয়ামী লীগ সেই সতর্কতাই অবলম্বন করছে।’ তিনি বলেন, আগামী দুই দিন ঢাকায় ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে মিছিল করার মূল লক্ষ্য ঢাকাবাসীকে আশ্বস্ত করা যে ঢাকায় কেউ অরাজকতা করতে পারবে না। এর মাধ্যমে ২৮ অক্টোবরের আগে দলীয় নেতা-কর্মীদের একটা মহড়াও হয়ে যাবে।