ময়মনসিংহ প্রতিনিধি জুয়েল মিয়া: ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শয্যার ৬ গুণ শিশু ভর্তি, ৩৬ দিনে মৃত্যু ৮২।
শীত শুরু না হতেই ময়মনসিংহে বেড়েছে শীতজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব। এ সময়টাতে নিউমোনিয়া, শ্বাসতন্ত্রের নানা রোগ ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নির্ধারিত শয্যার বিপরীতে রোগী ভর্তি থাকছে প্রায় ছয়গুণ। মেঝে, বারান্দা, এমনকি লিফটের সামনেও বিছানা পেতেছেন রোগীর স্বজনরা। ফলে উপযুক্ত চিকিৎসা সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন দায়িত্বরত চিকিৎসক-নার্স।
ময়মনসিংহ বিভাগসহ আশপাশের অঞ্চলের মানুষের চিকিৎসা সেবার ভরসাস্থল ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এ হাসপাতালের ৩০ ও ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের তিনটি ইউনিট শিশুদের চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত। শিশু ওয়ার্ডের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দুটি ওয়ার্ডে তিনটি ইউনিটে মোট ৬০ জন রোগী ভর্তির জন্য অনুমোদিত শয্যার ব্যবস্থা আছে। কিন্তু প্রতিদিনই রোগী ভর্তি থাকছে প্রায় ৩৫০-৪০০ জন। চলতি মাসের সোমবার পর্যন্ত ভর্তি হয়েছে ৬৩১ জন শিশু। গত ২৪ ঘণ্টায় দুইজনসহ এ মাসে সোমবার বার পর্যন্ত চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে ১২ শিশুর। গেল অক্টোবর মাসে ৪ হাজার ৩৮০ শিশুকে ভর্তি করা হয় এবং মৃত্যু হয় ৭০ শিশুর। অর্থাৎ ১ অক্টোবর থেকে ৩৭দিনে শিশু ওয়ার্ডে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৮২ জন শিশুর।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, প্রকৃতি শীতল হতে শুরু করায় শিশুদের নিউমোনিয়া, ব্রংকিওলাইটিস, অ্যাজমা, ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দিচ্ছে। এছাড়া শীতের সময় ভাইরাসের বিচরণের কারণে শিশুদের ভাইরাসজনিত রোগের প্রাদুর্ভাবও দেখা দিয়েছে। তবে রোগীদের মধ্যে নিউমোনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যাই বেশি। জনবলের তুলনায় রোগীর সংখ্যা বেশি থাকায় সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
শিশু ওয়ার্ডের জ্যেষ্ঠ স্টাফ নার্স শাহানারা বলেন, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুরা বারান্দায়-মেঝেতে রাখতে হয়। ওয়ার্ডের শয্যার পাশে অক্সিজেনের ব্যবস্থা আছে। কিন্তু বারান্দা ও মেঝেতা থাকা রোগীদের অনেক সময় অক্সিজেনের প্রয়োজন হলেও তা দিতে বিলম্ব হয়। অক্সিজেনের বেশকিছু লাইনও বিকলও হয়ে রয়েছে। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের বিভাগীয় প্রধান ডা. মো. জামশেদ আলম বলেন, রোগীর আনুপাতিক হারে চিকিৎসক ও নার্স নেই। রোগীর চাপ ক্রমান্নয়ে বাড়ায় সবাইকে সমান সেবা দেওয়া সম্ভব হয় না। পরিস্থিতি সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, পরিবেশে তাপমাত্রা কমে শীতের আগমন ঘটে তখন ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এ সময় নিউমোনিয়া ও ব্রংকিউলাইটিস বেশি হয়। এ সময় অভিভাবকদেরকে শিশুদের প্রতি বেশি যত্নশীল হতে হবে। যদি শ্বাসকষ্ট হয় এবং শ্বাসপ্রশ্বাস দ্রুত বেড়ে গেলে বা অন্যান্য লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
এদিকে এক হাজার শয্যার ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটিতে অন্য ওয়ার্ডগুলোর চিত্রও প্রায় অভিন্ন। সোমবার পুরো হাসপাতালে রোগী ভর্তি ছিলো ৩ হাজার ৬৭৩ জন। কিন্তু হাসপাতালটিতে চিকিৎক, নার্স ও তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির জনবলের সংকট রয়েছে। তীব্র সংকটের মধ্যে চিকিৎসক-নার্সরা অতিরিক্ত দায়িত্বপালন করছে।
হাসপাতালে ৪৭৩ জন চিকিৎকের মধ্যে আছেন ৩৮১ জন। ৯২ জন চিকিৎসকের পদ শূণ্য। ১ হাজার ১১৪ জন নার্সের মধ্যে ৪৭ জনের পদ শূন্য। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ৬৯৬ জন কর্মীর মধ্যে ৩০৫ টি পদেই কর্মী শূন্য। জনবল সংকটের মধ্যেও সেবা চালিয়ে যেতে হচ্ছে হাসপাতালটির।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. জাকিউল ইসলাম বলেন, শয্যার প্রায় চারগুণ রোগী প্রতিদিন ভর্তি থাকে। চিকিৎসক-নার্স সংকটের বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এর মধ্যে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করে চিকিৎসা সেবা চালু রাখতে হচ্ছে। রোগী বেশি থাকায় বাড়তি লোকবলও দরকার। সেবার মান অক্ষুণ্ন রাখতে দ্রুত জনবল দেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে। তবে এ সংকটের মধ্যেও আমরা সর্বোচ্চটা দিয়ে রোগীদের চাহিদামতো সেবা দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি।