** দীর্ঘ প্রতিক্ষার পরে ১১ নভেম্বর উদ্বোধন হচ্ছে কক্সবাজার রেলস্টেশন **
তাহজীবুল আনাম,কক্সবাজার : যুগযুগ বছর অপেক্ষার পর অবশেষে স্বপ্নের দুয়ার খুলে যাচ্ছে কক্সবাজারবাসীর জন্যে। দীর্ঘ প্রতিক্ষার অবসান ঘটিয়ে এবার ঢাকা, চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি রেল আসবে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে। এর ফলে কক্সবাজারের পর্যটনশিল্প ও অর্থনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে।
রেলের বদৌলতে সৃষ্টি হবে বহু মানুষের কর্মসংস্থান৷ফলে পাল্টে যাবে এই অঞ্চলের মানুষের জীবনমান। এছাড়াও দূর-দূরান্ত থেকে কক্সবাজারে ভ্রমণে আসা পর্যটকদের ভোগান্তি ও যাতায়াত খরচ অনেকটা কমে যাবে। রেলস্টেশন ও লাইনের কাজ প্রায় সম্পন্ন, তাছাড়াও রেললাইন ছাড়াও কক্সবাজারে চলমান রয়েছে আরও বহু মেগা প্রকল্পের কাজ। প্রায় ৮৮ হাজার কোটি টাকার ২০টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সেই লক্ষ্যে আজ শনিবার (১১ নভেম্বর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজারে আগমন করতে যাচ্ছেন। এদিন সকালে কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা চান্দেরপাড়া এলাকায় নির্মিত আইকনিক রেলস্টেশন চত্বরে দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন প্রকল্পের রেল চলাচলের উদ্বোধন ও সুধী সমাবেশে বক্তব্য রাখবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
উদ্বোধনের পর কক্সবাজার আইকনিক রেল স্টেশনের টিকিট কাউন্টার থেকে টিকিট কাটবেন এবং পতাকা উড়াবেন ও হুইসেল বাজাবেন। তারপর প্রধানমন্ত্রী লাল সবুজের ট্রেনে চড়ে রামু পর্যন্ত ভ্রমণ করবেন। এরপর রামু থেকে হেলিকপ্টার যোগে মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়িতে যাবেন প্রধানমন্ত্রী।
সেখানে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর চ্যানেলের উদ্বোধন এবং ১ম টার্মিনালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাতারবাড়ি টাউনশিপ মাঠে মহেশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় ভাষণ দেবেন এবং মাতারবাড়ি ১২শ’ মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ ২০টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন তিনি।
লিংক রোড়ের বাসিন্দা আবুল কালাম বলেন, রেল চালু হলে আমাদের জন্য বহুমাত্রিক সুযোগ সৃষ্টি হবে৷ তা হচ্ছে, ঢাকা চট্টগ্রাম যেতে আমাদের বাসে যে টাকা খরচ হতো সেটি অনেকটা কমে যাবে। রেল নিয়ে বাসের চেয়ে কম খরচে ঢাকা, চট্টগ্রাম যাওয়া যাবে বলে আমি শুনেছি। এছাড়াও রেল স্টেশন ঘিরে স্থানীয় অনেক মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
ব্যবসায়ী মোনাফ মিলাত বলেন, কক্সবাজারের সবজি, মাছ ও অন্যান্য পণ্য সহজেই কম খরচে বহন করা গেলে এখানকার ব্যবসায় অনেক পরিবর্তন আসবে। ট্রেন নিয়ে মালামাল পাচারের ক্ষেত্রে খুবই সুবিধা। ঢাকা থেকে কক্সবাজারে বেড়াতে আসা পর্যটক শফিক আহমেদ জানান, আশা করছি আগামীবার থেকে ট্রেন নিয়ে কক্সবাজার আসতে পারব৷ ট্রেনের সুবিধা, এখানে টাকা খরচ কম হয়, যাতায়াতে নিরাপদ, দ্রুতগতির, আরামদায়ক ও ঝামেলা মুক্ত। সুতরাং, আমি মনে করি, ট্রেন চালু হলে কক্সবাজারে আগের চেয়ে বেশি পর্যটক ভ্রমণে আসবেন।
পাশাপাশি কক্সবাজারের অর্থনৈতিক অবস্থারও পরিবর্তন হবে। শনিবার কক্সবাজারে প্রধানমন্ত্রী প্রায় ৮৮ হাজার কোটি টাকার ২০টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। যার মধ্যে রেলসহ ১৬টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ৪টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। সে লক্ষ্যে সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর আগমন ঘিরে পুরো কক্সবাজারজুড়ে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। তোরণ, ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টারে ছেয়ে গেছে মাতারবাড়ির জনসভাস্থল, আইকনিক রেল স্টেশনসহ জেলার গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। জেলাজুড়ে অতিরিক্ত সর্তকতামুলক ব্যবস্থা, বিপুল সংখ্যক আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের টহল ও অবস্থান দেখা গেছে।
জেলা প্রশাসনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, রেল লাইন ছাড়া প্রধানমন্ত্রী যে প্রকল্পগুলো উদ্বোধন করবেন তাতে রয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে নির্মিত মাতারবাড়ি ১২০০ মেগাওয়াট কয়লা ভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ায় জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ সংযুক্তি, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের বাঁকখালী নদীর কস্তুরাঘাটে ৫৯৫ মিটার পিসি বক্স গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ, কক্সবাজার সদরের খাল লাইনিং অ্যাপ্রোচ রোড ও ব্রিজ উল্লেখযোগ্য।
এছাড়া আছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের ৪টি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ৪টি, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্প ও জেলা প্রশাসনের দুটি ছাদখোলা ট্যুরিষ্ট বাস।
কক্সবাজার নান্দনিক আইকনিক রেলস্টেশন
চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার রেলপথ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করলেও যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হবে ১ ডিসেম্বর থেকে। আর ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজার রেল যোগাযোগ চালু হলে সর্বনিম্ন ভাড়া থাকবে ১৮৮ টাকা। যাত্রী ও পর্যটকেরা এই ভাড়ায় কক্সবাজার আসতে পারবেন। রেলসচিব হুমায়ুন কবির বলেন, ১ ডিসেম্বর শুধু আন্তঃনগর ট্রেন চালু হবে। তবে পাশাপাশি কমিউটার ও মেইল ট্রেনও চালু করা হবে।
সচিব বলেন, ভবিষ্যতে এই রুটে পর্যটক কোচ চালু করা হবে। শুধু ঢাকা নয় উত্তর অঞ্চল ও দেশের অন্যান্য অংশ থেকেও কক্সবাজারে রেলপথে আসা যাবে। এতে করে যোগাযোগের নতুন পথ উন্মোচন হবে। তবে ১ ডিসেম্বর থেকে রেল চালু হলেও কক্সবাজারের আইকনিক ঝিনুক স্টেশনে সবরকম সুবিধা পাওয়া যাবে না বলে তিনি জানিয়েছেন।
পর্যায়ক্রমে এসব সুবিধা চালু করা হবে। রেলের মহাপরিচালক কামরুল আহসান বলেন, ঢাকা থেকে যে ট্রেনটি কক্সবাজার আসবে সেটি সকাল সাড়ে ১০টায় ছাড়বে। আর কক্সবাজারে এসে পৌঁছাবে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়। পর্যায়ক্রমে এই রুটে আরও ট্রেন বাড়ানো হবে। রেলওয়ের বাণিজ্যিক শাখা জানিয়েছে, চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে কক্সবাজারের প্রকৃত দূরত্ব ১৫০ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার। তবে রেলওয়ের নতুন নিয়ম অনুযায়ী, ১০০ মিটারের বেশি দৈর্ঘ্যের সেতুর জন্য অতিরিক্ত ভাড়া ও দূরত্ব (পয়েন্ট চার্জ) নির্ধারণ করছে। চট্টগ্রাম- কক্সবাজার রুটে সাতটি সেতুর জন্য বাড়তি ৫৪ কিলোমিটারের ভাড়া আরোপ করা হয়েছে।
বাড়তি পয়েন্ট চার্জ যুক্ত করে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রুটে বাণিজ্যিক দূরত্ব ২০৫ কিলোমিটার ধরে ভাড়া নির্ধারণ করা হবে। এরসঙ্গে ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রামের ৩২১ কিলোমিটারের বাণিজ্যিক দূরত্ব বিবেচনায় ঢাকা-কক্সবাজার পর্যন্ত ভাড়া পুনর্র্নিধারণ করা হবে। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজারের সর্বমোট ৫৫১ কিলোমিটার বাণিজ্যিক দূরত্ব ধরে ভাড়া নির্ধারণ করা হচ্ছে। রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, এ পথে নন-এসি অর্থাৎ শোভন চেয়ারে ৫০০ টাকা ও এসি সিটে ৯৫০ টাকা ভাড়া প্রস্তাব করা হয়েছে।
এসি সিটে ১৫ শতাংশ ভ্যাটসহ ভাড়া হবে ১ হাজার ১০০ টাকা। ভ্যাটসহ এসি কেবিনে ১ হাজার ২০০ ও এসি বার্থে ভাড়া পড়বে ১ হাজার ৭২৫ টাকা। রেলসচিব হুমায়ুন কবির বলেন, আমরা আশা করছি ১ ডিসেম্বর থেকেই যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু করতে পারব। আর সেই ট্রেনে সর্বনিম্ন ভাড়া যেটি ধরা হয়েছে সেটি হচ্ছে ১৮৮ টাকা। আর এটি নন এসি মেইল ট্রেন। সর্বোচ্চ ভাড়া এসি বার্থে ১ হাজার ৭২৫ টাকা। বর্তমানে রেলের যে ভাড়ার হার আছে সেই অনুযায়ী নির্ধারণ করা হয়েছে। এ রুটে দুটি ট্রেন চালানোর প্রস্তাব থাকলেও, ঢাকা থেকে প্রথম দিকে দিনে একটি আন্তঃনগর ট্রেন চলবে।
রেলওয়ে মহাপরিচালকের কার্যালয়ের প্রস্তাব অনুযায়ী, দিনে একটি ট্রেন ঢাকা থেকে রাত সাড়ে ১০টায় যাত্রা করে বিমানবন্দর এবং চট্টগ্রাম স্টেশনে বিরতি দিয়ে সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে কক্সবাজারে পৌঁছাবে। কক্সবাজার থেকে দুপুর ১টায় যাত্রা করে রাত ৯টা ১০ মিনিটে ঢাকায় ফিরবে। ফিরতি পথেও চট্টগ্রাম ও ঢাকার বিমানবন্দরে যাত্রাবিরতি করবে। মঙ্গলবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকবে ট্রেনটির। ট্রেনটির ছয়টি নাম প্রস্তাব করেছে রেলওয়ে।
এগুলো হলো– ‘প্রবাল এক্সপ্রেস’, ‘হিমছড়ি এক্সপ্রেস’, ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’, ‘ইনানী এক্সপ্রেস’, ‘লাবণী এক্সপ্রেস’ ও ‘সেন্টমার্টিন এক্সপ্রেস’। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নামটি চূড়ান্ত করবেন। ট্রেনে দুটি খাবার বগি, একটি পাওয়ার কার, তিনটি এসি কেবিন, পাঁচটি এসি চেয়ার, ছয়টি শোভন চেয়ার এবং একটি নন-এসি ফার্স্ট সিট বগি থাকবে।
ঢাকা থেকে যাত্রার সময় আসন সংখ্যা হবে ৭৯৭। ফিরতি পথে আসন হবে ৭৩৭। রেলসূত্রের আরও জানায়, আপাতত ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের তূর্ণা নিশিথার বগি দিয়ে চালানো হবে ঢাকা-কক্সবাজারের ট্রেন। তূর্ণা নিশিথায় বিকল্প রেক দেয়া হবে। স্থানীয় শিক্ষাবিদ শহিদুল করিম জানান, সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হলো, কক্সবাজার জেলা শহর থেকে তিন কিলোমিটার পূর্বে ঝিলংজা ইউনিয়নের হাজিপাড়া এলাকায় ২৯ একর জমির ওপর দৃশ্যমান আইকনিক রেল স্টেশন। ঝিনুকের আদলে তৈরি দৃষ্টিনন্দন এ স্টেশন ভবনটির আয়তন এক লাখ ৮২ হাজার বর্গফুট। ছয়তলা বিশিষ্ট স্টেশনটি নির্মাণে বিশ্বের বিভিন্ন আধুনিক স্টেশনের সুযোগ-সুবিধা বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। এতে আমরা কক্সবাজারবাসী খুশি।
এ বিষয়ে কক্সবাজার সোসাইটির সভাপতি কমরেড গিয়াস উদ্দিন বলেন, রেললাইন চালু হলে পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের পাশাপাশি বিনিয়োগ-শিল্পায়ন ও বাণিজ্যিক বন্ধন সহজতর হয়ে উঠবে। কৃষি-খামার ও শিল্প-কারখানায় উৎপাদিত পণ্যসামগ্রীর বাজারজাত এবং রপ্তানি সুবিধার প্রসার ঘটবে। সারাদেশের সাথে কক্সবাজারের জনসাধারণের কর্মচাঞ্চল্য ও স্বচ্ছলতা বাড়বে।
প্রসঙ্গত, রেলপথ নির্মাণের আগে কক্সবাজারের সঙ্গে কোনো রেল যোগাযোগ ছিল না। শুরুতে এটি ছিল দোহাজারী হতে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু হতে ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্প। এতে মোট ১২৯ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার রেল লাইন নির্মাণের কথা ছিল। পরে রামু থেকে ঘুমধুম অংশের কাজ স্থগিত করা হয়।
এখন চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। রেল নেটওয়ার্কের বাইরে থাকা পর্যটন নগরীতে ট্রেন নিতে প্রকল্পটি ২০১০ সালে অনুমোদনের সময় ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে প্রকল্প সংশোধনে ব্যয় বেড়ে হয় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা।
মাতারবাড়ি কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র সরকারের মেগা প্রকল্পগুলোর অন্যতম মাতারবাড়ি ১২০০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। এটি জাপানের আর্থিক সহায়তায় ৫১ হাজার ৮৫৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম। ১২০০ মেগাওয়াটের এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু হয় গত ২৯ জুলাই দুপুরে। তখন ৬ মেগাওয়াটের পরীক্ষামূলক উৎপাদনের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর এটি ১২ মেগাওয়াট উৎপাদন শুরু করে অক্টোবরের শুরুতে।
মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্পের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মনওয়ার হোসেন মজুমদার জানান, উৎপাদিত এ বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে। মহেশখালী উপজেলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ মাতারবাড়ি ও ধলঘাটা ইউনিয়নের মাঝামাঝি ১ হাজার ৬০৮ একর জমির ওপর স্থাপিত হচ্ছে দুটি ইউনিটে বিভক্ত এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র।
কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিপিজিসিএল) বাস্তবায়ন করছে প্রকল্পটি। প্রকল্পের নথিপত্রে দেখা যায়, ২০১৪ সালে অনুমোদন পাওয়া মাতারবাড়ি আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড পাওয়ার প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা। পরে সংশোধন করে এটি করা হয় ৫১ হাজার ৮৫৪ কোটি ৮৮ লাখ টাকা।
এতে আগে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থা (জাইকা) দেয়ার কথা ছিল ২৮ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা। এবার সেই ঋণ বাড়িয়ে জাইকা মোট ৪৩ হাজার ৯২১ কোটি টাকা দেয়। আর প্রকল্পটিতে সরকারি তহবিল থেকে জোগান দেয়া হয় ৬ হাজার ৪০৬ কোটি টাকা। এদিকে স্বাধীনতার ৫২ বছরে দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ায় প্রথমবারের মতো বিদ্যুতের জাতীয় গ্রিডে সংযুক্তি পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয় গত ১৩ এপ্রিল। আগের দিন ১২ এপ্রিল রাত থেকে দ্বীপটির দেড় হাজার গ্রাহক পরীক্ষামূলকভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ সুবিধা পেতে শুরু করে।
কক্সবাজার-খুরুশকুল সংযোগ সেতু
কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় কস্তুরাঘাট সংলগ্ন বাঁকখালী নদীর ওপর নির্মিত হচ্ছে ‘কক্সবাজার-খুরুশকুল’ সংযোগ সেতু। দীর্ঘ ‘প্রিস্টেইট বক্স গার্বার সেতু’। দীর্ঘ ৫৯৬ মিটারের এ সেতুর জন্য ব্যয় হচ্ছে ২৫৯ কোটি টাকা। সেতুটির আনুষ্ঠানিক কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের গত ১ সেপ্টেম্বর। এটি ২০২১ সালের ২১ আগস্টের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও করোনা মহামারি ও নানা জটিলতায় শেষ হতে ২০২৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত লেগে যায়। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন খান বলেন, কক্সবাজার জেলাটা পর্যটন নগরী। সারা বিশ্বের কাছে পর্যটন নগরী হিসেবে পরিচিত এ জেলা।
শহরের উত্তর পাশে বাঁকখালী নদী প্রবহমান। এ নদীর পাড়ে যে জায়গাটার মধ্যে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে, সেটা এর আগে পরিণত হয়েছিল ময়লার ভাগাড়ে। সেই জায়গায় এখন একটি দৃষ্টিনন্দন সেতু এলজিইডির মাধ্যমে বাস্তবায়ন হয়েছে এবং গুণগত মানের বিষয়ে জিরো টলারেন্স রেখে আমরা এই সেতুটি নির্মাণ করেছি। এ সেতুটি নির্মাণের ফলে যে বিষয়টা নতুন মাত্রা যোগ করেছে সেটি হলো পর্যটন শিল্প।
এ ছাড়া এর আরেকটা দিক থেকে কক্সবাজার শহরকে সম্প্রসারণ করার ক্ষেত্রে এ সেতুটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তিনি আরও বলেন, কক্সবাজার শহরের উত্তর দিকে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অধীনে এখানে রানওয়ে সম্প্রসারণের কাজ চলছে। সেখানে যারা উদ্বাস্তু হিসেবে ছিলেন, তাদেরকে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিচ্ছে বর্তমান সরকার। সেক্ষেত্রে ৪ হাজার ৪০৯টি পরিবারকে খুরুশকুল প্রান্তে তাদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তারাও এ সেতুটি ব্যবহার করে খুব সহজেই কক্সবাজারে তাদের নিত্যদিনের কার্যক্রম করতে পারবে। মূলত এ উদ্দেশ্যেই সেতুটি নির্মাণ করা হয়। এ সেতুটি নির্মাণের ফলে নবগঠিত ঈদগাঁও উপজেলার সঙ্গে কক্সবাজারের দূরত্ব কমে যাবে। খুরুশকুল ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি বোরহান উদ্দিন বলেন, খুরুশকুলের সঙ্গে শহরের দূরত্ব আগে ছিল প্রায় ৩০/৪০ মিনিটের। সেতু নির্মাণ হওয়ায় এ দূরত্ব কমে হয়েছে মাত্র তিন মিনিট।
সেতু ও এর আশেপাশের এলাকা ঘিরে স্বপ্ন দেখাচ্ছে অর্থনৈতিক সম্ভাবনার। এছাড়াও উক্ত এলাকায় আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ বেশ কিছু সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প রয়েছে। খুরুশকুল ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের অর্থ সম্পাদক কামাল উদ্দিন বলেন, জায়গাটিতে পৌরসভার ময়লা আবর্জনা ছিল। সেখান থেকে সরকার উন্নয়ন করেছে।
যে সেতুটি নির্মাণ করেছে তা শুধু দুই পাড়ের মানুষের যাতায়তের সংযোগ ঘটাবে না, দুই পাড়ে তৈরি হবে অর্থনীতি ও পর্যটনের নতুন সম্ভাবনা। খুরুশকুল ডেইল পাড়ার বাসিন্দা মোহাম্মদ ফিরোজ আলম বলেন, সেতুটি নির্মাণের ফলে দূরত্ব যেমন কমেছে তেমনি এ অঞ্চলের শাকসবজি, লবণ, মাছসহ নানা কিছু দ্রুত কক্সবাজার শহরে পৌঁছাতে পারবে। উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবশেষ ২০২২ সালের ৭ ডিসেম্বর কক্সবাজার আসেন। আর প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিক প্রয়াসে সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকার ৯৮টি প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বদলে যাচ্ছে কক্সবাজার।