আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইসরাইলি অব্যাহত হামলার মুখে করুণ পরিস্থিতির কথা জানালেন গাজার আল-শিফা হাসপাতালের পরিচালক মোহাম্মদ আবু সালমিয়া। তিনি জানালেন, প্রতি মিনিটে রোগীরা মারা যাচ্ছে। এমনকি ইনকিউবেটরে থাকা শিশুরাও।
‘আমরা মৃত্যুর খুবই কাছে,’ বলেন তিনি।
তার সাথে কথা বলেছে কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আলজাজিরা। তাতে তিনি যেসব কথা বলেছেন তার সংক্ষিপ্ত রূপ এরকম :
- আমি বলতে পারি, আমরা সবাই জীবন হারাতে যাচ্ছি। হাসপাতালের রোগীর প্রতি মিনিটেই মারা যাচ্ছে। আক্রান্ত ও আহতরাও মারা যাচ্ছে - এমনকি ইনকিউবেটরে থাকা শিশুরাও।
- আমরা ইনকিউবেটরে থাকা শিশুকেও হারাচ্ছি, আবার ইনটেনসিভ কেয়ারে থাকা তরুণকেও।
- হাসপাতাল কম্পাউন্ডকে ঘিরে রাখা হয়েছে এবং হাসপাতালের ভবনগুলোকে লক্ষ্য বানানো হয়েছে। হাসপাতালের কম্পাউন্ডে চলাচল করা যেকোনো ব্যক্তিকেই হামলার লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে। ইসরাইলি দখলদার বাহিনী যেকোনো ফিলিস্তিনির নাড়াচাড়া বন্ধ করে দিতে চায়।
- মেডিক্যাল টিমের একজন ইনকিউবেটরে থাকা শিশুদের সাহায্যের চেষ্টা করেছিলেন, তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
- আগে থেকে আহতদের কারো কারো স্নাইপার বন্দুকের গুলিতে হাড়ের সমস্যা হয়েছে।
- হাসপাতালটি বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়েছে। ইন্টারনেট সেবা নেই এমনকি পানি ও চিকিৎসাসামগ্রী সরবরাহও বন্ধ রয়েছে।
- আমরা বহির্বিশ্ব থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছি। আমরা মৃত্যুর খুব কাছাকাছি রয়েছি।
- আমরা আটকা পড়েছি। আমরা সারা বিশ্বে অনেক এসওএস (জরুরি বিপদসঙ্কেত) পাঠিয়েছি। কিন্তু কোনো প্রতিক্রিয়া নেই, কোনো প্রতিক্রিয়া নেই।
হাত দিয়েই কবর খুঁড়তে হচ্ছে
আল-শিফা হাসপাতাল থেকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিচালক মনির আল-বাশর জানিয়েছেন, ফিলিস্তিনিদের হাত দিয়ে মাটি খুঁড়েই হাসপাতাল কম্পাউন্ডে মৃতদের কবরস্থ করতে হচ্ছে।
তিনি আলজাজিরাকে বলেন, ‘আমাদের কোনো সরঞ্জামাদি বা যন্ত্রপাতি নেই কবর খোঁড়ার। আমাদেরকে এসব লাশ কবরস্থ করতে হচ্ছে। কারণ না হলে মহামারীর সৃষ্টি হতে পারে। এ লাশগুলো কয়েক দিন ধরেই রাস্তায় পড়ে রয়েছে।
এক ডাক্তারের ভয়াবহ বর্ণনা
আল-শিফা হাসপাতালের সার্জন সারা আল-সাক্কা জানিয়েছেন সেখানকার ভয়াবহ পরিস্থিতির কথা। জানিয়েছেন, হাসপাতালটি নিহত ও জীবিতদের দ্বারা উপচেপড়া অবস্থায় আছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা রোগীদের মেঝেতে, স্ট্রেচারে অথবা রাস্তায়ই চিকিৎসা দিচ্ছি। কোনো কক্ষ বাকি নেই যেখানে চিকিৎসাসেবা দেয়া যায়। লোকজনকে চিকিৎসা দেয়া যাচ্ছে না, তাই তারা মারা যাচ্ছে।’
‘আহত নারী, পুরুষ ও শিশুদের মেঝেতে অস্থায়ী বেডে রাখা হয়েছে,’ বলেন তিনি।
গতকাল শুক্রবার ইসরাইল আল-শিফা হাসপাতালের গেটে আক্রমণ শুরু করে। এ হাসপাতালটিতে আশ্রয় নিয়েছে হাজারো আহত ও বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি।
গাজার অন্যান্য হাসপাতালগুলোতেও ইসরাইলি বাহিনী ট্যাঙ্কসহ আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে।
ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্টের প্রধান অভিযোগ করেছেন, ইসরাইল এ উপত্যকাটি থেকে ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে দিতেই হাসপাতালগুলোকে টার্গেট করে হামলা চালাচ্ছে।
সূত্র : আলজাজিরা
প্রকাশক : মোহাম্মদ বদরুজ্জামান তালুকদার
সম্পাদক : খান মোহাম্মদ সালেক
Copyright © 2025 Daily Dhaka Press. All rights reserved.