জাবি সংবাদদাতা : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের কর্তা হলো ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। এই লুকোচুরির প্রকল্প আসলে প্রশাসন নয় ঠিকাদার পরিচালিত উন্নয়ন প্রকল্প।
শনিবার (১১ নভেম্বর) বিকেল সাড়ে ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রান্সপোর্ট চত্বরে ‘জাহাঙ্গীরনগর বাঁচাও আন্দোলন’ এর ব্যানারে আয়োজিত এক সংহতি সমাবেশে তিনি এই মন্তব্য করেন।
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ঠিকাদার পরিচালিত এই উন্নয়ন প্রকল্পে যখন মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে তর্ক বিতর্ক হচ্ছে, তখন এই কথাটা একটু ঘুরিয়ে অধিকতর উন্নয়ন কর্মসূচি নামে চালিয়ে দেওয়া হলো। ঠিকাদাররা আসলে প্রতিটি প্রকল্পের সাথে গ্লু দিয়ে আটকানো থাকে। মানে কাজটা ওই ঠিকাদারকেই দিতে হবে। যেহেতু তাদের সাথে আবার মন্ত্রীদের নানা সম্পর্ক।
তিনি বলেন, এটা একটা অদ্ভুত ব্যাপার যে এত কোটি কোটি টাকার প্রকল্পগুলো সিনেটে আলোচনা হয় না, সিন্ডিকেটে সিদ্ধান্ত হয় না, অথচ দিব্যি স্বেচ্ছাচারীতা করে বনভূমি ধ্বংস করে একের পর এক ভবন দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। এই সিদ্ধান্তগুলো কে নেয়? কোথা থেকে হয়? কিভাবে পাশ হয়? সেই প্রশ্নের উত্তর এখনও অজানা।
তিনি আরও বলেন, অপরিকল্পিত ভাবে ভবন নির্মাণ করলে যে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হয়, সমাজবিজ্ঞান ও নতুন কলা ভবন তার একটি উদাহরণ। লেকের পাশে নতুন কলা ভবন হওয়ায় সেখানে পুরো জায়গাটির পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে। সমাজবিজ্ঞান বছরের পর বছর পর্যাপ্ত আলো বাতাস ছাড়াই চলছে।সেজন্যেই মাস্টারপ্ল্যানের প্রয়োজন। আমি বলতে চাই প্রশাসন ও ঠিকাদারদের পকেট ভারি করতে নিয়মবহির্ভূত ভাবে প্রাণপ্রকৃতি ধ্বংস করে সকল ধরণের ভবন নির্মাণ বন্ধ থাকুক।
সমাবেশে সংহতি জানিয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল রনি বলেন, ২০১৯ থেকে আমি এই আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত। প্রশাসনকে আমরা অংশীজনদের মত নিয়ে শুধুু একাডেমিক মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করতে বলেছিলাম। তবে সেটা তারা করেনি। কারণ একটি সুনির্দিষ্ট মাস্টারপ্ল্যানের অধীনে কাজগুলো হলে তাদের স্বার্থসাধন এত সহজে হবে না।
তিনি বলেন, নিজেদের পকেট ভারি করার জন্য একাডেমিক ভবন নির্মানের জন্য চলমান বনভূমি নিধনের যে ধ্বংসযজ্ঞ প্রশাসন চালাচ্ছে তা এই সবুজ নগরীর জন্য বড় হুমকি। নতুন লাইব্রেরির পাশে ৬২ টি ক্লাসরুম বিশিষ্ট একাডেমিক কাম এক্সামিনেশন হল হচ্ছে। সেখানে ক্লাসরুম সংকটে থাকা বিভাগগুলো চাইলেই তাদের প্রয়োজন মিটিয়ে নিতে পারে। গাছ কেটে নতুন করে একাডেমিক ভবন বা এক্সটেনশনের ত প্রয়োজন নাই। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসেছি, আন্দোলন করতে আসিনি। কিন্তু প্রশাসনের এমন দুর্নীতির মানসিকতার জন্য আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছি।
ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক আনিছা পারভীন জলি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৫০০ কোটি টাকা আসার পর শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা সবারই চরিত্র নষ্ট হয়েছে। অর্থাৎ অর্থই অনর্থের মূল। সরকারি টাকা মানে জনগণের টাকা। খেয়ালখুশি মতো উন্নয়নের নামে সেই টাকা নিয়ে চলে ভাগ-বাটোয়ারা। এখানে আমরা জনগনের টাকায় পড়ি-চলি। অথচ আমরা সেই টাকার জবাবদিহিতার কোনো পরোয়াই করি না।
তিনি বলেন, উইকেন্ড প্রোগ্রাম বিভাগগুলোর চরিত্র নষ্ট করার আরেকটি উপায়। অর্থাৎ টাকা আছে মানেই আমি নিজের ইচ্ছোমতো গাছ কেটে ভবন তুলে ফেললাম। আইবিএ এবং বিজনেস অনুষদের জন্য সমন্বিত ভাবে একটি ভবন হতে পারে। কিন্তু তাদের অন্তর্দ্বন্দ্ব ও ইগোর জন্য সেটি তারা করবে না। আমরা ত এটার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ নষ্ট হতে দিতে পারি না। আইবিএ এবং আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে কোনো বিরোধ নাই। আমি আহ্বান জানাবো সকলে মিলে যৌথভাবে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের দাবিতে রুখে দাঁড়াতে হবে এবং সকল বিভাগের ক্লাসরুম সংকট দূর করে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে।
এসময় অন্যান্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড.নাসিম আখতার হোসাইন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবীর ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ এবং প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠন গুলোর সাবেক ও বর্তমান নেতারা।