চাঁদপুর প্রতিনিধি: নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি-জামায়াতের হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি অব্যাহত। পঞ্চম দফায় অবরোধের ডাক দিয়েছে বিএনপি। এসব হরতাল-অবরোধ নিয়ে চাঁদপুরের সাধারণ খেটে খাওয়া অধিকাংশ শ্রেনী পেশার লোকজনের মতামত আমরা খেয়ে-পরে বাঁচতে চাই। সরকার আমাদের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করুক। নাগরিক অধিকার নিয়ে যদি কেউ আন্দোলন করে, তাহলে আন্দোলন করাটাও যৌক্তিক এমন বক্তব্য দিয়েছেন কেউ কেউ।
সোমবার (১৩ নভেম্বর) দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের গত কয়েক দফা হরতাল ও অবরোধের কারণে কি ধরণের প্রভাব এবং বিভিন্ন পেশার লোকদের সাথে কথা বললে এসব তথ্য বেরিয়ে আসে।
চাঁদপুর সদর উপজেলার হরিণা ফেরিঘাট এলাকার হোটেল ব্যবসায়ী জাহিদ হোসেন বলেন, আমরা কখনই হরতাল অবরোধ চাই না। কারণ হরতাল-অবরোধ থাকলে ঘাটে গাড়ী আসে কম। আমাদের বিক্রি অর্ধেকে নেমে আসে। ৮-১০ হাজার টাকার বিক্রি নেমে এসেছে ৪ হাজার টাকায়।
এই ঘাটের হকার ফল বিক্রেতা নুরুল ইসলাম বলেন, অবরোধ ছাড়া প্রতিদিন বিক্রি হত ১৫০০ টাকা। আজকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে ৩০০টাকা। অবরোধ দিলে আমরা ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়। আমাদের আন্দোলন দরকার নেই। খেয়ে পরে বাঁচতে চাই।
ঘাটে অলস বসে আছেন দুইজন অটোবাইক চালক। দুজনের বাড়ী চান্দ্রা ইউনিয়নের দক্ষিণ বালিয়া গ্রামে। এর মধ্যে মো. পারভেজ জানালেন তার সারাদিনে রোজগার হয়েছে ৫০০টাকা। আরেকজন সৈকত পাঠান। তিনি সকাল ৮টায় নেমে বেলা ২টা পর্যন্ত রোজগার করেছেন ১৫০টাকা।
ঘাটের মুদি দোকানদার মঞ্জিল মাঝি ক্ষোভ নিয়ে বললেন, আমরা কোন আন্দোলন চাই না। দেশ ভালভাবে চলবে এটাই আমাদের আশা। কারণ এমনতি কেনাবেচা খুবই কম। এরপর অবরোধ হলে কোন গ্রাহকই আসে না। গাড়ী বন্ধ থাকলে অন্য জেলার মানুষ আসার সুযোগ থাকে না। ভয়ে মানুষ মূল্যবান গাড়ী নিয়ে রাস্তায় নামতে চায় না।
চট্টগ্রাম থেকে খুলনা যাওয়ার জন্য রডের ট্রাক নিয়ে ঘাটে এসেছেন চালক জাকির হোসেন। তিনি বলেন, আজ ভোরে চট্টগ্রাম থেকে রওয়ানা হয়েছি। লক্ষ্মীপুর এসে বিএনপির বিক্ষোভ মিছিলের সামনে পড়েছি। পরে পুলিশের সহযোগিতায় উদ্ধার হয়েছি। অবরোধে নামলে খুবই ঝুঁকির মধ্যে থাকতে হয়।
সদরের চান্দ্রা ইউনিয়নের চান্দ্রা বাজারের ফল ব্যবসায়ী আহমদ উল্যাহ, হোটেল ব্যবসায়ী দেলু রাড়ী জানালেন একই ধরণের কথা। তারা জানান, গত কয়েকদিনে তাদের বিক্রি অর্ধেকে নেমে এসেছে। আমরা হরতাল অবরোধ চাই না। দেশের শান্তিপূর্ব পরিবেশ চাই। যে আন্দোলন আমাদের পেটে লাথি দিবে, সেই আন্দোলন আমাদের প্রয়োজন নেই।
সদরের বালিয়া ইউনিয়নের ফরক্কাবাদ বাজারের ফুচকা বিক্রেতা মো. জসিম ভুঁইয়া জানান, অবরোধ হলে লোকজন বাড়ী থেকে কম বের হয়। যে কারণে বিক্রি অনেকাংশ কম।
ফরিদগঞ্জ ও সদরের সীমান্ত এলাকার বাগড়া বাজারের অটোরিকশা চালক ফারুক মজুমদার জানান, অবরোধের কারণে আমরা অনেকটা অবসর সময় কাটাতে হয়। যাত্রীর চাইতে গাড়ীর সংখ্যাই বেশী।
সদরের বাগাদী ইউনিয়নের চৌরাস্তা মোড়ে বসে অবসর সময় কাটাচ্ছেন সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালক মো. খোকন গাজী। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দুপুর ১টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বসে আছি এখানে। কোন যাত্রী পাইনি। তার মতামত হচ্ছেন-দ্রব্য মূল্যে বৃদ্ধি হওয়ার কারণে আন্দোলন হওয়া প্রয়োজন আছে। কারণ সরকার কোনভাবেই বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।
একই এলাকার প্রবীণ ব্যবসায়ী মতিন খান জানান, বিগত ১৫ বছরে আমি নিজের ভোট নিজে দিতে পারি না। এই বয়সে আর ভোট দিতে পারবো কিনা সন্দেহ আছে। ভোটের অধিকারের জন্য হরতাল-অবরোধের দরকার আছে।
চাঁদপুর জেলা জজ আদালতের আইনজীবী রফিকুজ্জামান রনি জানান, হরতাল অবরোধে আদালতের সকল কার্যক্রম চলমান। তবে যাদের মামলাগুলোতে আসা খুবই জরুরি তারাই আদালতে আসেন। জরুরি ছাড়া বাকী মামলার সংশ্লিষ্ট লোকজন এখন কিছুটা কম আসেন।