রাজিব রায়হান, জাবি প্রতিনিধি: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) বিদ্যমান সংকট নিরসনে দ্রুত সময়ের মধ্যে অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় তৃতীয় ধাপের একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনের কাজ শুরুর আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশীজনেরা। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই কাজ শুরু করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চলতি বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে তৃতীয় ধাপের জীববিজ্ঞান অনুষদ, কলা ও মানবিকী অনুষদ, গাণিতিক ও পদার্থবিষয়ক অনুষদের সম্প্রসারিত ভবন এবং ১০ তলা বিশিষ্ট নতুন প্রশাসনিক ভবন নির্মাণের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়।
এরপর ২৩ অক্টোবর টেন্ডার ওপেন করা হয়। পরে সেগুলো যাচাই-বাছাই করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম সুপারিশ করে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও বিচার বিভাগ, বঙ্গবন্ধু তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইন্সটিটিউট, বিজনেস স্টাডিজ অনুষদ ও ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনসহ কয়েকটি বিভাগের শ্রেণিকক্ষ ও ল্যাব সংকট দীর্ঘদিনের।
এছাড়া প্রশাসনিক দফতরগুলো ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় থাকায় প্রশাসনিক কাজে ভোগান্তিতে পড়েন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তার পরিপ্রেক্ষিতে একাডেমিক ভবন ও পূর্ণাঙ্গ প্রশাসনিক ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এসব ভবনের কাজ শেষ হলে চলমান সংকট অনেকটা দুর হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই এসব ভবনের কাজ শুরু করার দাবি জানিয়েছেন অংশীজনেরা।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলা হয়। তারা বলেন, ‘ক্লাসরুম ও শিক্ষকদের কক্ষের সংকট নিরসনে একাডেমিক ভবনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে একাডেমিক ভবনগুলোর নির্মাণকাজ শুরু করা দরকার। যেহেতু আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালীন সময়ে দেশের উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে অনেকে উদ্বিগ্ন, তাই নির্বাচনের আগেই কাজ শুরু করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।’
তারা আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসনিক ভবনে যেহেতু সকল সেবা মিলছে না, সেহেতু পূর্ণাঙ্গ একটি প্রশাসনিক ভবনও দরকার। তবে নতুন প্রশাসনিক ভবন নির্মিত হলে, বর্তমান প্রশাসনিক ভবনটি যেসব বিভাগের ক্লাসরুম সংকট আছে, তাদের দেওয়া যেতে পারে।’
এছাড়া নতুন ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে কাজের স্বচ্ছতা ও গুণগত মান ঠিক রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি ক্লাসরুম সংকট নিরসন ও প্রশাসনিক কাজে ভোগান্তি কমানোর লক্ষ্যে নতুন একাডেমিক ও পূর্ণাঙ্গ প্রশাসনিক ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন তারা।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় নির্মিত সকল ভবনের কাজের গুণগত মান ঠিক রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়েছে। সকল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পূর্বের অভিজ্ঞতা ও কাজের মান যাচাই-বাছাই করেই কাজ দেওয়া হয়েছে।
যাদের সুনাম ভালো, তাদেরকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত যেসব প্রতিষ্ঠান কাজ করছে, তাদের মধ্যে অনিক ট্রেডার্স ও মাহাবুব ব্রাদার্স প্রাইভেট লিমিটেডের কাজের মান নিয়ে সন্তুষ্ট নির্মাণকাজ তদারকি কমিটির সদস্যরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় চলমান নির্মাণকাজ তদারকি কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘অন্য স্থাপনার তুলনায় স্পোর্টস কমপ্লেক্স, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ও লেকচার থিয়েটারের কাজের গুণগত মান ভালো হচ্ছে।
এছাড়া কাজ অনেক দ্রুত গতিতে এগিয়েছে। যতদূর জানি, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অনিক ট্রেডার্স ও মাহাবুব ব্রাদার্স প্রাইভেট লিমিটেড এসব স্থাপনার কাজ করছে। তবুও কোথাও কোন অসঙ্গতি পেলে, তারা দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে।’
অন্যদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নতুন করে কোনো প্রকল্প গ্রহণ, অর্থ অবমুক্ত ও অনুদান না দিতে নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প অনেক আগেই একনেকে পাস করা এবং অর্থ অবমুক্ত করা হয়। ফলে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নির্দেশনা এই প্রকল্পের ওপর কোন প্রভাব ফেলবে না বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
সার্বিক বিষয়ে অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের উপ-প্রধান প্রকৌশলী আহসান হাবীব বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিভাগে শ্রেণিকক্ষ সংকট রয়েছে। ফলে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষাকার্যক্রম। তাই ক্লাসরুম সংকট নিরসনে একাডেমিক ভবনগুলোর কাজ দ্রুত সময়ের মধ্যে শুরু করা প্রয়োজন।”
তিনি আরো বলেন, “বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক সেবা পেতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্টদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। যখন সকল দপ্তর এক ভবনের আওতায় আসবে, তখন সকলেই উপকৃত হবে। পাশাপাশি প্রশাসনিক কাজের গতিশীলতা বৃদ্ধি পাবে।”
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে ২১টি অবকাঠামো নির্মাণের জন্য ১ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প’ নামের প্রকল্প নেওয়া হয়। মোট তিন ধাপের এ প্রকল্পের প্রথম ধাপে ছেলে ও মেয়েদের জন্য তিনটি করে ছয়টি আবাসিক হল নির্মাণ করা হয়।
এছাড়া গত বছরের জুনে দ্বিতীয় ধাপের ১৪টি স্থাপনার নির্মাণকাজের উদ্বোধন করা হয়। তবে স্থান নির্ধারণ সংক্রান্ত জটিলতাসহ কয়েকটি কারণে একাধিক স্থাপনার কাজ বন্ধ রয়েছে।