স্টাফ রিপোর্টার: রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেনের বগিতে আগুন দিতে গিয়ে আল-আমিন নামের একজন আটক হয়েছেন। শনিবার দিবাগত রাত পৌনে ১১ টায় নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা চলাচলকারী কমিউটার ট্রেনে এ ঘটনা ঘটে।
আটককৃতের নাম মো: আল-আমিন (২৩)। তার বাড়ি লক্ষীপুর জেলার রামগতি থানায়। তার কাছ থেকে তিনটি পেট্রোল ভর্তি বোতল এবং গ্যাস লাইটার উদ্ধার করেছে রেলওয়ে পুলিশ।
রবিবার (৩০ নভেম্বর) দুপুরে রেলওয়ে পুলিশের ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জ চাষাড়া স্টেশন থেকে শনিবার রাত ১০ টায় ট্রেনটি ছেড়ে এসে রাত পৌনে এগারোটায় কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ৮ নং প্লাটফর্মের ৯ নং লাইনে এসে দাড়াঁয়। ট্রেন থেকে সকল যাত্রী নেমে যাবার পর একদম পেছনের সর্বশেষ বগি থেকে চোর চোর.. বলে চিৎকার শুনতে পান প্লাটফর্মে থাকা যাত্রী এবং নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা।
এসময় তারা এগিয়ে গেলে ৩ থেকে ৪ জন যুবক দিক বেদিক ছুটোছুটি করতে থাকে। এসময় একজন কে জাপটে ধরে ফেললেও সে ধস্তাধস্তি করে ছুটে দৌড়াতে থাকে। এসময় রেলওয়ে প্রশাসনিক ভবনের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা একজন পুলিশ সদস্য আল-আমিন’কে কৌশলে আটক করতে সক্ষম হয়।
তিনি আরও বলেন, প্লাটফর্মে পৌঁছানোর পর ট্রেন থেকে সকল যাত্রী নেমে গেলে সুযোগ বুঝে ট্রেনের পিছনের ২০৭৫ নং বগিতে যাত্রী বেশে থাকা আটককৃত আলামিন ব্যাগে বোতল ভর্তি
পেট্রোল দিয়ে ট্রেনের পিছনের বগির ৮টি সিটের উপর পেট্রোল ছিটিয়ে গ্যাস লাইটার দিয়ে কয়েকবার আগুন ধরানোর চেষ্টা করে। কিন্তু গ্যাস লাইটারে ঠিক মতো কাজ না করায় সে বারবার চেষ্টা করতে থাকে। এসময় একজন সাধারণ যাত্রী ঐ ঘটনা টের পেয়ে তাকে বাধা ও আটক করতে যায় এবং চোর চোর বলে চিৎকার শুরু করে। ভয়পেয়ে আলামিন ও তার তিন সঙ্গী পেট্রোল ভর্তি ব্যাগ ফেলে ট্রেন থেকে দৌঁড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।
পুলিশ সুপার আনোয়ার বলেন, ধৃত আল আমিন পালিয়ে যাওয়া তিন সহযোগীর মধ্যে একজনের নাম প্রকাশ করেছে। সোহাগ নামের এক বিএনপি কর্মীর সাথে আলামিন বিশ হাজার টাকার বিনিময়েএই কাজের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল। আলামিন পেশায় বাসের হেল্পার। মাঝে মাঝে সে বাস চালাতো। তাদের দলনেতা সোহাগ ৬ নাম্বার বাসের চালক। তাদের সাথে দীর্ঘ দিনের
পরিচয়ের সুবাদে শনিবার দুপুর ১২টার সময় গোপন কাজের কথা বলে আলামিনকে নারায়ণগঞ্জে তার খালার বাসায় পাঠিয়ে দেয় এবং একটি কাগজে সোহাগ একটি নম্বর দিয়ে বিকাল ৫টার দিকে ফোন করতে বলে।
আটককৃত আলামিন সোহাগের কথামত তার খালার মোবাইল থেকে ওই নম্বরে ফোন করলে তাকে রাত ১০টার দিকে চাষাড়া রেল স্টেশনে আসতে বলা হয়। রাতে আলামিন রেল স্টেশনে গেলে ঐখানে সোহাগসহ আরও দুইজনকে দেখতে পায়। এসময় সোহাগ তাকে একটি কালো ব্যাগে তিনটি পেট্রোল ভর্তি বোতল দিয়ে ট্রেনে আগুন ধরিয়ে দেয়ার নির্দেশ দেয়।
আটককৃত আল-আমিনের বরাত দিয়ে পুলিশ সুপার আরও জানিয়েছেন, সোহাগ ছাড়া সেখানে অপর দুই জনের মধ্যে একজন বিএনপি সংগঠনের রাজনীতির সাথে জড়িত এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের মাধ্যমে দলীয় ব্যক্তিদের পরিবহণে আনা-নেওয়ার দায়িত্ব পালন করত সে।
তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ে পুলিশের এই কর্মকর্তা।
এছাড়া নাশকতাকারী ব্যক্তিকে গ্রেফতারে সহায়তার জন্য ট্রেনের যে সাধারণ যাত্রী চিৎকার করে এবং তাদের নিবৃত করতে সাহায্য করেছেন তাঁকে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের ঘোষিত বিশ হাজার টাকা নগদ অর্থ পুরস্কারে জন্য নাম ঠিকানা প্রেরন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।