চট্টগ্রাম ব্যুরো :
সংসদীয় এলাকার মোট ভোটারের এক শতাংশ মানুষের স্বাক্ষর গড়মিল, ঋণখেলাপি ও আয়কর সংক্রান্ত ঝামেলা থাকায় চট্টগ্রামে ১৪ স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ ১৮ জনের মনোনয়ন বাতিল করেছে নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা।
আজ ৩ ডিসেম্বর রবিবার সকালে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে মনোনয়নপত্র যাচাইবাছাই কার্যক্রম শুরু হয়।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে রবিবার চট্টগ্রাম-১ আসন ছাড়াও চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি), চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ), চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) ও চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা) আসন এবং বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড), চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী), চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসনের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাচাই করা হয়েছে।
সকালে জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনের জমা দেওয়া ভোটারের স্বাক্ষর ত্রুটিপূর্ণ হওয়ায় মনোনয়নপত্র বাতিল করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মনোনয়নপত্রের সঙ্গে নির্বাচনী আসনের মোট ভোটারের এক শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর জমা দিতে হয়।
একই অভিযোগে চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে স্বতন্ত্র হিসেবে জমা দেওয়া গোলাম নওশের আলী, মো. শাহজাহান ও রিয়াজ উদ্দিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম-৩ (সন্দীপ) আসনের জাকের পার্টির নিজাম উদ্দিন নাছির ও বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের প্রার্থী আমিন রসূলের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে।
বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মনোনয়ন যাচাইবাছাইয়ে চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনের বর্তমান এমপি দিদারুল আলম আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র জমা দিলেও দল থেকে মনোনয়ন না দেওয়ায় তার মনোনয়ন বাতিল করা হয়। এছাড়া প্রার্থীদের ভোটার সমর্থকদের তালিকায় গরমিল থাকায় বিএনএফের আখতার হোসেন, দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. সালাউদ্দিন ও মোহাম্মদ ইমরান এর মনোনয়ন বাতিল করে রিটার্নিং কর্মকর্তা।
এরপর চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনে দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী নাছির হায়দার চৌধুরী বাবুল ও মোহাম্মদ শাহজাহানের মনোনয়ন বাতিল করা হয়। তাদের বিরুদ্ধেও ভোটার সমর্থকদের ভুল তথ্য দেওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়। দেড় ঘন্টা বিরতি দিয়ে দুপুর আড়াইটায় আবার শুরু হয় মনোনোয়ন যাছাই-বাছাইয়ের কাজ।
জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে চট্টগ্রাম ৬ (রাউজান) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শফিউল আজমের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয় ভোটার তালিকা সঠিক না হওয়ায়। তার ৯৮ নম্বর তালিকায় তিনি যার সমর্থন নিয়ে নাম দিয়েছেন ওই ভোটার রাউজানের নয়। তিনি সাতকানিয়ার ভোটার। এছাড়া আরেকজন ভোটার থাকেন বিদেশে।
চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী) আসনে খেলাফতে আন্দোলনের মৌলভী রশিদুল হকের আয়-ব্যয় হিসেবে কোনো ব্যাংক একাউন্টের নথি জমা না দেওয়ায় প্রথমে তার মনোনোয়ন বাতিল করলেও পরে তিনি দাবি করেন তার ব্যাংক একাউন্ট আছে। এরপর রিটার্নিং কর্মকর্তা তাকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সময় দেন।
এদিকে বিরতি দিয়ে শুরু হওয়া চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চাঁন্দগাও) আসনে মনোনোয়ন যাচাইবাছাই শেষে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়ানো চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) সাবেক চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আলহাজ্ব আবদুছ ছালাম, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আরশাদুল আলম বাচ্চু, চসিকের সাবেক কাউন্সিলর ও নগর আওয়ামী লীগের সদস্য বিজয় কুমার চৌধুরীর মনোনয়ন বাতিল করা হয় ভোটার তালিকায় গরমিল থাকায়। বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থী মহিবুর রহমান বুলবুলের বিরুদ্ধে ঋণখেলাপির অভিযোগে তার প্রার্থীতা বাতিল করা হয়।
এছাড়া মনোনোয়ন ফরম জমা দেওয়ার সময় কংগ্রেসের আরেক প্রার্থী মনজুর হোসেন বাদল প্রস্তাবক ও সমর্থক নাম না দেওয়া এবং হলফনামা, ছবি না থাকায় তার প্রার্থিতা বাতিল করে রিটার্নিং কর্মকর্তা।
তবে বাতিল হওয়া প্রার্থীরা তাদের মনোনয়ন বৈধতার জন্য আপিল করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। চট্টগ্রামের ১৬টি আসনে মোট ১৫১ জন মনোনয়ন জমা দেন।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ও নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, ‘আমরা ১০টি আসনের মধ্যে পাঁচটির মনোনোয়ন ফরম যাছাইবাছাই শেষ করেছি। এর মধ্যে সাতজনের মনোনোয়ন বাতিল হয়েছে।
যার বেশিরভাগই স্বতন্ত্র প্রার্থী। বাতিল হলেও প্রার্থীদের আপিলের সুযোগ রয়েছে। ৫ ডিসেম্বর থেকে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত তারা নির্বাচন কমিশনের কাছে প্রার্থিতা ফিরে পেতে আবেদন করতে পারবেন। এছাড়া কয়েকজন প্রার্থীর নথিপত্র পর্যাপ্ত না থাকায় তাদের সন্ধ্যা পর্যন্ত সময় দিয়েছি।’