চট্টগ্রাম ব্যুরো : গতকাল ১০ ডিসেম্বর রবিবার বিশ্ব মানবাধিকার দিবসের প্রতিপাদ্য ‘সবার জন্য মর্যাদা, স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচার’ প্রাপ্তি ও প্রদানে স্ব স্ব অবস্থান থেকে সবাইকে দায়িত্বশীলতার আহ্বানে বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা রাঙ্গুনিয়া উপজেলা মডেল শাখা ও পৌরসভা শাখার যৌথ উদ্যোগে সেমিনার ও গুণী সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়।
উপজেলা মডেল শাখার সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ জহুরুল আনোয়ার-এর সভাপতিত্বে প্রথম অধিবেশনের সূচনাপর্বে বিশ্ব মুসলিমের প্রথম কা’বা পবিত্র বায়তুল মুকাদ্দাস ও নিরীহ নিরস্ত্র ফিলিস্তিনী মুসলমানদের মাতৃভূমি দখলে নেয়া জন্য ইসরাইলী হানাদার বাহিনীর গণহত্যা, ধ্বংসযজ্ঞ ও নজিরবিহীন বর্বরতার নিন্দা এবং শাহাদাত বরণকারীদের রূহের মাগফিরাত কামনা করা হয়।
দ্বিতীয় পর্বে “কর্ণফুলী নদীর ভাঙ্গন ও দূষণ রোধ এবং গুমাই বিল সুরক্ষা : সময়োচিত করণীয়” বিষয়ে সেমিনার পেপারের ১ম অংশ উপস্থাপন করেন কর্ণফুলী সুরক্ষা সংগঠন সাংবাদিক আলীউর রাহমান। ২য় অংশ উপস্থাপন করেন গুমাই বিল সুরক্ষা সংগঠক সাংবাদিক মো. এনায়েতুর রহিম।
প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্থার আজীবন সদস্য ও চুয়েট-এর সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ইন্জিনিয়ার মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক।
প্রবন্ধ নিয়ে আলোচনা করেন রাঙ্গুনিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা চন্দন কুমার চক্রবর্তী, সংস্থার আজীবন সদস্য অধ্যাপক এম এ সালাম, অধ্যাপক মো. শওকত হোসেন, অধ্যক্ষ মো. আবু ইউসুফ ও ড. এস এম ফয়সল অশ্রু।
প্রধান অতিথি বলেন, দেশের নদ-নদীসম্পদের মধ্যে কর্ণফুলী অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নদী। তিনি বলেন প্রাকৃতিক ঐতিহ্যসমৃদ্ধ এ নদীর দূষণরোধ, দখলপ্রতিরোধ ও সুরক্ষায় আইনী ব্যবস্থার রায় পেতেও ভোগান্তি পোহাতে হযেছে। এ নদীর রাঙ্গুনিয়া অংশের প্রধান শাখানদী ইছামতি ও শিলক খালের অনিয়ম ও অবৈধ পন্থায় বালি উত্তোলনের কারণে নদীশাসন ও গতিপ্রকৃতি ধ্বংস হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
এ দেশের বড় বড় নদীগুলোর অধিকাংশ নদীর উৎপত্তিস্থলের নামকরণ ও এ দেশের নামকরণ অভিন্ন। কিন্তু কর্ণফুলী নদীর ‘কর্ণফুলী’ নামকরণ কেবল এ দেশেই। তাই তিনি কর্ণফুলীর ইতিহাস, ঐতিহ্য, চরিত্র ও গতি-প্রকৃতির সুরক্ষা ও মানবসৃষ্ট দূষণ-দখল উচ্ছেদে তদারকি ও তত্ত্বাবধান ইত্যাদির প্রেক্ষিতে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় কর্তৃক একে ‘জাতীয় নদী’র ঘোষণা চাই।
তিনি আরো বলেন, এ দেশে ধান উৎপাদনে বৃহৎ ও প্রসিদ্ধ বিলগুলোর মধ্যে রাঙ্গুনিয়ার গুমাই বিল দু’ফসলী আবাদের অন্যতম প্রসিদ্ধ বিল। আগেকার যুগে এটি ছিল এ অঞ্চলের বৃহত্তর অনাবাদী ঝিল। সমাজচিন্তাশীল ব্যক্তিত্ব আবদুল বারী তালুকদারের মেধা মনন শ্রম ত্যাগ ও প্রচেষ্টায় এ ঝিল বিলে পরিণত হওয়ায় পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান তাকে ‘ফাদার অব গুমাই’ খেতাবে ভূষিত করেন। দেশের তৎকালীন দু’দিনের খাদ্য উৎপাদনের ভান্ডারখ্যাত এ বিলে অনুমোদনবিহীন ঘরবাড়ী ও মার্কেট নির্মাণ এবং ইটভাটা স্থাপন করা হচ্ছে। ফলে ক্রমশঃ চাষাবাদ সঙ্কুচিত হয়ে আসছে।
তিনি এ বিলের ইতিহাস ঐতিহ্য রক্ষায় আজকের সেমিনার থেকে কৃষি মন্ত্রণালয় কর্তৃক ‘গুমাইবিল উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’ গঠনের জোর দাবী জানান।
দ্বিতীয় অধিবেশনের প্রথম পর্বে ৮ গুণীকে ‘মানবাধিকার পুরস্কার’ প্রদান করা হয়। ইসলামী আধ্যাত্মিকতায় হযরত আল্লামা হাফিয সৈয়দ বিসমিল্লাহ্ শাহ্ (রাহ্), তার সম্মাননা গ্রহণ করেন তার পুত্র হযরত মাওলানা সৈয়দ আবুল বয়ান শাহ্ নঈমী, সুশাসন প্রতিষ্ঠায় শহীদ সৈয়দ খাজা আহমদ (মরণোত্তর), তার সম্মাননা গ্রহণ করেন তার পৌত্র সৈয়দ এহসানুল হুদা, সমাজসেবায় ইউনিয়ন বোর্ড প্রেসিডেন্ট সৈয়দ আহমদ তালুকদার (মরণোত্তর), তার সম্মাননা গ্রহণ করেন তার পৌত্র নূরুল আজিম, বিজ্ঞান গবেষণায় মহাকাশ বিজ্ঞানী মোহাম্মদ ওবাইদুল কাদের, শুদ্ধাচার ও সততায় অবসরপ্রাপ্ত অ্যাডিশন্যাল আইজিপি (ফিন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট) মো. শাহাব উদ্দীন কোরেশী, উচ্চতর শিক্ষায় অধ্যক্ষ প্রফেসর জ্যোস্না বিকাশ চৌধুরী (মরণোত্তর), তার সম্মাননা গ্রহণ করেন তার পুত্র অসীম কুমার চৌধুরী, মাধ্যমিক শিক্ষায় প্রধান শিক্ষক মতিলাল বিশ্বাস (মরণোত্তর), তার সম্মাননা গ্রহণ করেন তার শুভাকাঙ্খী অ্যাডভোকেট বঙ্কিম চন্দ্র দাশ, প্রাথমিক শিক্ষায় প্রধান শিক্ষক ডা. মোহাম্মদ মুছা (মরণোত্তর) তার সম্মাননা গ্রহণ করেন তার পুত্র অধ্যক্ষ এএনএম ইউসুফ চৌধুরী।
দ্বিতীয় পর্বে ৪ পিএইচডি গবেষণক, ১ এমফিল গবেষক, ৩ গ্রন্থ প্রণেতা ও ১টি শ্রেষ্ঠ সমাজসেবী সংগঠন ‘সরফভাটা ওয়েলফেয়ার সোসাইটি চট্টগ্রামকে ‘মানবাধিকার সনদ’ এবং উভয় শাখার আজীবন সদস্যদের ‘আজীবন সদস্য সনদ’ প্রদান করা হয়।
সোসাইটির পক্ষে সভাপতি ডা. এস এম আবুল ফজল শ্রেষ্ঠ সংগঠনের সনদ গ্রহণ করে তার অভিমত ব্যক্ত করেন।
রাঙ্গুনিয়া থানার পূর্ব পার্শ্বস্থ ড্রীম রেস্টুরেন্ট কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত ২য় অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন পৌরসভা শাখার সভাপতি মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম। উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম আজাদ ও পৌরসভা শাখার সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম স্ব স্ব শাখার বার্ষিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।
সহ সাধারণ সম্পাদক মো. সাজ্জাদুল করিম রিংকুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত করেন মানবাধিকার কর্মী মাওলানা মুহাম্মদ আলমগীর, গীতা পাঠ করেন ডা. সুভাষ চন্দ্র সেন ও ত্রিপিটক পাঠ করেন কমরেড প্রমোদ বরণ বড়ুয়া।
রাঙ্গুনিয়ার সব ঘরানা ও রাজনৈতিক মতাদর্শের সুধীজনের প্রাণবন্ত এ অনুষ্ঠানের সভাপতি মাওলানা জহুরুল আনোয়ার সমাপনী বক্তব্যে রাঙ্গুনিয়ায় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় কর্মপদ্ধতি, কর্মকৌশল ও কার্যক্রম তুলে ধরেন এবং সংবর্ধিত গুণীজন ও মরণোত্তর গুণীর প্রতিনিধিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।
তিনি উভয় শাখার কার্যকরী পরিষদ, আজীবন সদস্য, ইউনিয়ন শাখার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, অর্থসম্পাদক, উপকারভোগী ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা উপস্থিত হয়ে দিবস পালন সফল করায় ধন্যবাদ জানিয়ে সভা সম্পন্ন করেন।