
এইচ এম বাবলু বাউফল পটুয়াখালী:
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে বিজয়ী হওয়ার পর নতুন মন্ত্রিসভায় কারা ঠাই পাচ্ছেন এ নিয়ে ইতিমধ্যেই এলাকায় আলোচনা সৃষ্টি হয়েছে।
পটুয়াখালী-২ (বাউফল) আসনটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। স্বাধীনতার পর থেকে এ আসনে নৌকার জয়জকার।
স্বাধীনতার পর থেকে দশবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান আ স ম ফিরোজ। যার মধ্যে আটবার নির্বাচিত হন প্রবীণ এ রাজনীতিবিদ। এর মধ্যে চারবার আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলেও মন্ত্রীর আসনে স্থান হয়নি তার।
স্বাধীনতার পর কোনো সরকারের আমলেই বাউফলে মন্ত্রী হননি কেউ। বাউফল উপজেলার জনগণনের দাবি, জেলার সব আসনে বিভিন্ন সরকারের আমলে মন্ত্রী পেলেও বাউফল পায়নি। যার ফলে এবার আ স ম ফিরোজকে মন্ত্রী পরিষদে চান উপজেলার মানুষ।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, স্বাধীনতার পর ৭৩ সালে প্রথম সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হন প্রয়াত আজিজ খন্দকার। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। ১৯৭৯ সালে নৌকার মনোনয়ন নিয়ে প্রথমবার নির্বাচিত হন আ স ম ফিরোজ। সেই ১৯৭৯ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত নয়বার মনোনয়ন পান তিনি। নির্বাচিত হন সাতবার।
শুধু ২০০১ সালে তিনি বিএনপির শহিদুল আলম তালুকদারে কাছে পরাজিত হন। আর ২০০৬ সালে দলীয় মনোনয়ন পেলেও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। ১৯৭৯ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সাতবার নির্বাচিত হলেও চারবার (১৯৯৬, ২০০৮,২০১৪ ও ২০১৮) সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ।
বাকি তিনবার (১৯৭৯, ১৯৮৬ ও ১৯৯১) ছিলেন বিরোধী দলে। দীর্ঘদিন প্রায় ৩৫ বছর এমপি হলেও মন্ত্রীপরিষদে স্থান হয়নি বর্ষীয়ান এ রাজনীতিবিদের। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদে হুইপ ও ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদের চিফ হুইপের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। সর্বশেষ ২০১৮ সালে দ্বাদশ জাতীয় সংসদে শেষ বাজেট অধিবেশেনে প্যানেল স্পিকারের দায়িত্ব পালন করেন আ স ম ফিরোজ।
ছিলেন সংসদীয় সরকারি প্রতিষ্ঠান কমিটির সভাপতিও। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দশমবারের মত নৌকার টিকেট নিয়ে ১ লাখ ২১ হাজার ৩৪১ ভোটের ব্যবধানে অষ্টমবারের মত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আ স ম ফিরোজ।
জেলার অপর তিনটি আসন বঙ্গবন্ধু, জিয়াউর রহমান, এরশাদ, শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার আমলে পটুয়াখালী সদর, কলাপাড়া-রাঙ্গাবালী ও দশমিনা-গলাচিপা আসনে একাধিক সংসদ সদস্য মন্ত্রী পরিষদে স্থান পান। তবে স্বাধীনতার পর মন্ত্রীশূণ্য বাউফল। এবারের মন্ত্রী পরিষদে আ স ম ফিরোজকে চান এ উপজেলার মানুষ।
উপজেলার কালাইয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা ও প্রবীণ আওয়ামী লীগ কর্মী মো. মোকত্তার আলী বলেন, ১৯৭৯ সাল থেকে আ স ম ফিরোজকে চিনি। তার রাজনীতিক জীবনে কোনো দুর্নাম নেই। সুনামের সঙ্গে রাজনীতি করছে আসছেন। তিনি অত্যন্ত সৎ লোক। তাকে মন্ত্রী পরিষদে রাখা হোক।
তিনি মন্ত্রী হলে তার মন্ত্রণালয় দুর্নীতি মুক্ত হবে, এটুকু নিশ্চিতভাবে বলা যায়।
কালাইয়া ইউপি চেয়ারম্যান এস.এম ফয়সাল আহম্মেদ বলেন, আ.স.ম ফিরোজ এমপি একজন স্বচ্ছ রাজনীতিবিদ। তিনি শান্তিপ্রিয় নেতা। বার বার তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেও মন্ত্রী পরিষদে তার জায়গা হয়নি।
এটা শুধু তার রাজনীতিক জীবনে আক্ষেপ নয়, বাউফলবাসীর আক্ষেপ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বার তাকে মন্ত্রী পরিষদে জায়গা দিয়ে বাউফলবাসীর প্রাণের দাবি পূরণ করবেন বলে আশাবাদী।
বাউফল সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, দেশের সকল উপজেলায় একবার হলেও মন্ত্রীর সম্মান পেয়েছেন। শুধু আমরা বাউফলবাসীই হতভাগা। স্বাধীনতার পর থেকে এখানে নৌকার জয়জয়কার। বার বার আওয়ামী লীগের প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন।
একাধিক বার সরকারও গঠন করেছেন আওয়ামী লীগ। তবে বাউফল মন্ত্রী করা হয়নি। এবার যেন ফিরোজকে মন্ত্রী করা হয়। এ দাবি বাউফলের সকল জনগণের।
উপজেলা পরিষ ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সহসভাপতি মোসারেফ হোসেন খান বলেন, বাউফলের মানুষ বার বার শেখ হাসিনার নৌকায় আস্থা রেখেছেন।
বিপুল ভোটে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করেছেন। বিগত দিনেও আমাদের দাবি ছিল আ.স.ম ফিরোজ এমপিকে মন্ত্রী পরিষদে রাখা হোক। তবে রাখা হয়নি। এবার তাকে মন্ত্রী করে বাউফলবাসীর প্রাপ্য মর্যাদা দিবেন।
পটুয়াখালী জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আব্দুল বারেক মিয়া বলেন, যুদ্ধকালীন সময় আ স ম ফিরোজের সঙ্গে প্রথম পরিচয় হয়। মুক্তিযুদ্ধে ফিরোজ সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেন এবং নয় নম্বর সেক্টরের চিফ পলিটিক্যাল মটিভেটর ছিলেন। তিনি বিএম কলেজের ভিপিও ছিলেন।
দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে বাউফল আওয়ামী লীগের হাল ধরে আছেন। সুনামের সঙ্গে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। সফল চিফ হুইপও ছিলেন তিনি। তবে মন্ত্রী থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। তাকে এবার মন্ত্রীত্ব দেওয়া হোক। এ দাবি মুক্তিযোদ্ধারাসহ সকল শ্রেণিপেশার মানুষের।
প্রবীণ রাজনীতিবিদ আ স ম ফিরোজ বলেন, ১৯৭৯ সাল থেকে আওয়ামী লীগ আমার ওপর আস্থা রেখে আসছেন। আমিও বার বার দলকে বিজয় এনে দিয়েছি। ১৯৮৬ সালে আমি দ্বিতীয় বার এমপি নির্বাচিত হই। সেবার এরশাদ সরকার গঠন করে।
তখন আমাকে মন্ত্রী ও আমার স্ত্রীকে সংরক্ষিত এমপি বানানোর প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তবে আমি সেই প্রস্তাব প্রত্যাখান করেছিলাম। যতদিন বাঁচব ততদিন আওয়ামী লীগের সঙ্গেই থাকব। আমাকে কোথায় রাখবেন, সে সিদ্ধান্ত শেখ হাসিনা নিবেন।
এদিকে উপজেলার বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের দাবী তিনি মন্ত্রীত্ব পেলে গোটা জেলায় দলের সাংগঠনিক কাঠামো ধরে রাখার পাশাপাশি উন্নয়নে ভুমিকা রাখতে পারবেন। তাই আওয়ামীলীগের মাঠ পযার্য়ের নেতা-কর্মীদের আশা আ স ম ফিরোজকে মন্ত্রীত্ব দিবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।