
রাজিব রায়হান: গত ৫৩ বছরে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের গবেষণায় বিশ্বসেরা ও গৌরবময় অবস্থান অর্জন করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি)। তবে গবেষণা, গবেষণাপত্র দেখভাল করার জন্য নেই কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনা। একইসাথে গড়ে ওঠেনি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব কোনো প্রকাশনা সংস্থাও।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৬ নভেম্বর ২০২২ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত নিয়মিত সিন্ডিকেট সভায় রিসার্চ সেলের পরিচালনা নীতি প্রণয়ণ সংক্রান্ত কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। এরপর এক বছর পেরিয়ে গেলেও গবেষণার মান উন্নয়ন ও প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করার জন্য রিসার্চ সেল বা গবেষণা কেন্দ্র গঠনের উদ্দেশ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাদেশ প্রণয়ন কমিটি গঠন করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে কর্তৃপক্ষ।
প্রাথমিক কমিটিতে প্রত্নতত্ত্ব গবেষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. সুফি মোস্তাফিজুর রহমানকে সভাপতি এবং উচ্চ শিক্ষা ও বৃত্তি শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার আজিজুর রহমানকে সদস্য সচিব করা হয়েছিল। উক্ত কমিটিতে সদস্য হিসেবে ছিলেন প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মোস্তফা ফিরোজ, প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. ইব্রাহিম খলিল, ইন্সটিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজির অধ্যাপক ড. শামীম কায়সার, ইন্সটিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এর অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. তারিকুল ইসলাম।
কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. তারিকুল ইসলাম বলেন, যেকোনো একটি কাজ একটি কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়। কমিটি গঠনের পর আমরা কয়েক দফায় মিটিং করে রিসার্চ সেলের নামকরণ ও ইনস্টিটিউশনাল সকল পরিকল্পনা নিয়েছিলাম। তারপর আমরা উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) সহ অন্যান্য স্যারদের সাথে বসে আমরা ইনস্টিটিউশনাল পরিকল্পনা তুলে ধরেছিলাম। তারপর আরও অনেক আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছিলাম আমরা। এখন অনুমোদনের জন্য অপেক্ষা করছি, অনুমোদন পেলেই অতিদ্রুত কাজ শুরু করব আমরা।
এ বিষয়ে ঐ কমিটির সদস্য সচিব এবং উচ্চ শিক্ষা ও বৃত্তি শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার আজিজুর রহমান বলেন, প্রাথমিক কমিটির রিপোর্ট জমা দিয়েছি উপাচার্য স্যার বরাবর। আমরা প্রায় ছয় মাসের অধিক সময় কাজ করেছিলাম কমিটি গঠনের পর। পরবর্তীতে আরেকটি কমিটি গঠন করা হয়।
প্রাথমিক কমিটির সভাপতি ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. সুফি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা আমাদের কমিটির রিপোর্ট জমা দিয়েছি। আমাদের সবাই খুব ভালো ভাবেই কাজ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ সেলের কাঠামো দাঁড় করানোর জন্য। পরবর্তীতে অন্য কোনো কমিটি গঠন করা হয়েছে কী না আমি জানি না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মোহাম্মদ মোস্তফা ফিরোজ বলেন, সিন্ডিকেট সভায় সকল অনুষদের ডিনদের নিয়ে আমার সভাপতিত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এ কমিটির মাধ্যমে একাডেমিক কাউন্সিলের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রাথমিক কমিটির রিপোর্ট যাচাই-বাছাই করার পর কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে।
রিপোর্টে সংশোধনীর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, প্রাথমিক কমিটির কাছে মূলত একটি রিসার্চ সেল গঠনের রিপোর্ট চাওয়া হয় কিন্তু তারা মূলত একটি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রিপোর্ট দিয়েছিল। এখানে মূলত মৌলিক সমস্যা ছিল। তাছাড়াও অনেক বিষয় বৃহৎ পরিসরে ছিল সেগুলোতেও পরিবর্তন করা হয়েছে। আমাদের সকল কার্যক্রম শেষ করেছি। আশা করি একাডেমিক কাউন্সিল মিটিংয়ে একটি সিদ্ধান্ত আসবে।
এ বিষয়ে দুই অনুষদের ডিনের সাথে কথা বলতেই তারা নানাভাবে এড়িয়ে যান। তবে নাম না বলা শর্তে একজন ডিন জানান, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) স্যার আমাদের সাথে রিসার্চ সেল নিয়ে কোনো ধরনের আলোচনা সভা করেননি। এই বিষয়টা সম্পূর্ণ তিনি নিজেই দেখছেন।
পূর্বের কমিটির সদস্যদের না জানিয়েই গঠন করা হলো নতুন কমিটি। এ বিষয়ে উচ্চ শিক্ষা ও বৃত্তি শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার লুৎফর রহমান আরিফ ও মো. তারিকুল ইসলাম (উপ-উপাচার্য শিক্ষা একান্ত সচিব) কে জিজ্ঞেস করা হলে তারা এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে নিশ্চিত করেন।
এছাড়াও বিশ্বের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে রয়েছে নিজস্ব প্রকাশনা সংস্থা বা ইউনিভার্সিটি প্রেস। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ ও শিক্ষার্থীদের রিসার্চ পেপার ও প্রকাশনা যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে প্রকাশ করতে পারেন। ইউনিভার্সিটি প্রেসের মাধ্যমে প্রকাশনা গুলোকে সংরক্ষণ করা যায় এবং শিক্ষার্থীরা লাইব্রেরী হিসেবে ব্যবহার করতে পারে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই কোনো ইউনিভার্সিটি প্রেস। ফলে প্রতিবছরই বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা তাদের রিসার্চ এবং প্রকাশনা পাবলিশ করতে বিভিন্ন জটিলতার শিকার হন। অনেক সময় তারা তাদের রিসার্চ পেপার পাবলিশ করতে পারেন না। ফলে রিসার্চ করতে অনিহা প্রকাশ করেন প্রথম সারির অনেক শিক্ষার্থী।
এ বিষয়ে ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের আহ্বায়ক আলিফ মাহমুদ বলেন, বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আমাদের একটি ইউনিভার্সিটি প্রেস খুবই প্রয়োজন। আমাদের বিশ্বসেরা র্যাঙ্কিং অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চাররা। যারা রিসার্চ করেন তারা মূলত সবাই চান তার রিসার্চ পেপার বা আর্টিকেলটা যেন একটি বইয়ের মতো লিপিবদ্ধ থাকে। যারা পিএইচডি সহ অন্য ডিগ্রী নিতে চান তারাও চান পূর্ববর্তী রিসার্চ পেপার এবং আর্টিকেলগুলো স্টাডি করতে। এজন্য প্রকাশনাগুলোর প্রতিষ্ঠানিক দেখভাল প্রয়োজন। যেটা ইউনিভার্সিটির প্রেস ছাড়া সম্ভব নয়।