Daily Dhaka Press

বসন্তের রঙে ভালোবাসার ছোঁয়া

রেজাই রাব্বী: শীতের রুক্ষতাকে বিদায় জানিয়ে ফুলে ফুলে সেজে ওঠার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে প্রকৃতির মাঝে। গাছের ডালে ডালে নতুন সোনালি লাল রঙের কচি পাতার সমাগম। বাগানে ফুটেছে বাহারি রঙিন ফুল।

যেন প্রকৃতি বলছে, বছরঘুরে পাতা ঝরা বসন্ত এসে গেছে। কবির ভাষায় ‘ফুল ফুটুক আর না ফুটুক আজ বসন্ত।’ কবির শঙ্কা দূর করে ফুল ফুটেছে। গাছে গাছে ফুটেছে আমের মুকুল। শীতের খোলসে থাকা কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, নাগলিঙ্কন এখন অলৌকিক স্পর্শে জেগে উঠেছে। বাতাসে যেন মিষ্টি এক আনন্দের আমেজ।

কিছুদিন আগে থেকেই বসন্তের আগমনী বার্তা জানাচ্ছিলো প্রকৃতি। সকালের কুয়াশা ভেদ করে আকাশে উঁকি দিচ্ছিলো সূর্য়। কখনও দেখা গেছে ঝকঝকে রোদ। প্রকৃতিই জানান দিচ্ছে, ‘আজই বসন্ত জাগ্রত দ্বারে।’ চাদরমোড়া শীতকে বিদায় জানিয়ে এসেছে বসন্ত, এসেছে ফাগুন।

বাংলা পঞ্জিকা বর্ষের শেষ ঋতু বসন্তের প্রথম দিনকে বাঙালি পালন করে ‘পহেলা ফাল্গুন-বসন্ত উৎসব’ হিসেবে। এই উৎসব এখন প্রাণের উৎসবে পরিণত হয়েছে। মোগল সম্রাট আকবর ১৫৮৫ খ্রিস্টাব্দে প্রথম বাংলা নববর্ষ গণনা শুরু করেন। নতুন বছরকে কেন্দ্র করে ১৪টি উৎসবের প্রবর্তন করেন তিনি। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বসন্ত উৎসব। ১৪০১ বঙ্গাব্দ থেকে ‘বসন্ত উৎসব’ উদযাপন শুরু হয়। সেই থেকে জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদ বসন্ত উৎসব আয়োজন করে আসছে।

এবার যেন বসন্ত আর ভালোবাসা দিবস একসঙ্গে জোড় বেঁধে এলো। কাকতালীয়ভাবে বসন্তের প্রথম দিনটির সঙ্গে আজ যোগ হয়েছে ভালোবাসা দিবস। সেই যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন, ‘আয় তবে সহচরী হাতে হাতে ধরি ধরি’ অনেকটা সে রকম। একই দিনে দুটি দিবসের আনন্দ ছুঁয়ে যাবে বাঙালির মনে প্রাণে।

ভাষা, সুর, ছন্দ বলে ‘বসন্ত এসে গেছে।’ কমলা, বাসন্তী, হলুদ, সবুজে প্রকৃতির পাশাপাশি সেজে ওঠে উৎসবপ্রেমীরা। সঙ্গে ভালোবাসা দিবসের উষ্ণ ছোঁয়া। রঙে রঙিন হবে নারী, পুরুষ সবাই। সকাল থেকেই বাসন্তী শাড়ি, হলুদ পাঞ্জাবিতে সুসজ্জিত নানা বয়সী নর-নারীদের দেখা যায় ফুল হাতে।

এদিকে বাহারি ফুলের পসরা সাজিয়ে বসেছে বিক্রেতারা। ফুলের দোকানে ব্যস্ত তরুণ-তরুণীরা। প্রিয় মানুষের খোঁপায় ফুল গুঁজে দিয়ে যেন বসন্তকে স্বাগত জানাচ্ছে তরুণ-তরুণীরা। উপহার দেওয়া, একসঙ্গে বাইরে ঘুরে বেড়ানো, কোথাও খেতে যাওয়া অতঃপর সেই পরম রোমাঞ্চকর মুহূর্ত, সেই চিরপুরাতন আবেগের চিরকালের নতুন কথাটি জানিয়ে দেওয়া আমি তোমায় ভালোবাসি। বিশেষত তরুণ প্রজন্ম এই দিনটি বেছে নিয়েছে তাদের মনের মানুষের কাছে প্রণয়ের কথা নিবেদনের জন্য।

রবীন্দ্র সরোবরে কথা হয় ঘুরতে বের হওয়া দিবা ও ফয়সালের সঙ্গে। এই জুটি দৈনিক ঢাকা প্রেসকে জানান, ভালোবাসার মানুষের সঙ্গে ঘুরতে, রোমাঞ্চকর মুহূত কাটাতে পহেলা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবস উদযাপন করতে বের হয়েছেন তারা। সকাল থেকে সারাদিন দুজনে একসাথে শহরের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ান তারা। দিবা বলেন, ভালোবাসার জন্য কোনো দিবস লাগে না! তবুও কতদিন ধরেই না অপেক্ষা করেছি প্রিয় মানুষকে মনের কথা বলবো বলে। এ সুযোগে হাতে ফুল নিয়ে এক অনুভূতির আনন্দে ছুটে এসেছি প্রিয়জনকে সেই চিরপুরাতন আবেগের মনের কথা নতুন করে বলার উচ্ছ্বাসে।  কেউ ভালোবেসে হাসে, কেউ ভালোবেসে হাসায়। ভালোবাসা দিবসে সবাই ছোটে আপনজনের কাছে। ভালোবাসার পবিত্রতা রক্ষা করে পূর্ণ হোক সব আশা।

এই দিনকে উপলক্ষ্য করে আয়োজন করা হয়েছে রাজধানীসহ সারা দেশে নানা অনুষ্ঠানের। রাজধানীর চারুকলার বকুলতলা, বোটানিক্যাল গার্ডেন, রমনা পার্ক, বনানী লেক, ধানমন্ডি লেক, রবীন্দ্র সরোবর, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ অনেক জায়গায় দিনভর চলছে বসন্তের উৎসব।

দিনভর চলে তরুণ-তরুণীদের বসন্তের উচ্ছ্বাস আর আনন্দ। ফাগুনের ডাকে, বসন্তের আবাহনে সাড়া দিয়ে হাজারো বইপ্রেমী মানুষ সারাদিন যে যেখানেই থাকুক, শেষ বেলায় ছুটে এসেছেন বইমেলায়। কেউ এসে পছন্দের বই কিনে পছন্দের মানুষকে উপহার দিচ্ছে।

ফাগুনের আগুন শেষে ভালোবাসার রঙে রাঙ্গালো অমর একুশে গ্রন্থমেলা। প্রিয়জনকে না বলা কথা লেখক কলমে বলে দেওয়ায় বইয়ের গুরুত্ব অনেক। আর সেজন্যই প্রেমিকের মন খোঁজে বইয়ের আশ্রয়। বসন্ত বরণ আর ভালবাসা দিবসে বাঙালির প্রাণের মেলা অমর একুশে গ্রন্থমেলাও এক অন্যরকম রূপ ধারণ করেছে। যেন ফাগুন বন্দনায় ভালোবাসায় মুখর হয়ে উঠেছে প্রকৃতিপ্রেমীরা।

চলুন আজ থেকেই ভালোবাসার নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপিত হোক। ভালোবাসা জগৎজুড়ে এক মায়ার বন্ধন। বসন্তের রঙে রাঙিয়ে তুলুন জীবন। ভালোবাসুন মাতৃভাষা, দেশ এবং দেশের মানুষ। ভালোবাসুন নিজস্ব সংস্কৃতি এবং দেশীয় পণ্য। ভালোবাসায় ভরে উঠুক সবার জীবন। শুভ হোক আগামীর পথচলা।

ডেইলি ঢাকা প্রেস/আরআর/১৪ ফেব্রুয়ারি,২০২৪

Exit mobile version