ধর্মজীবন: হজ ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রুকন এবং ফরজ ইবাদত। সামর্থ্যবান মুসলমানের ওপরই কেবল হজ ফরজ হয়। সামর্থ্য বলতে হজের মৌসুমে প্রয়োজন অতিরিক্ত ততটুকু সম্পদ থাকা, যার দ্বারা সে মক্কায় আসা-যাওয়ার খরচ করতে পারে এবং যাদের ভরণ-পোষণ তার জিম্মায় রয়েছে হজ থেকে ফিরে আসা পর্যন্ত তাদের খরচ নির্বাহ করতে সক্ষম হয়।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন- وَلِلهِ عَلَی النَّاسِ حِجُّ الْبَیْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ اِلَیْهِ سَبِیْلًا ‘মানুষের মধ্যে যারা সেখানে (বায়তুল্লাহ) পৌঁছার সামর্থ্য রাখে তাদের উপর আল্লাহর উদ্দেশ্যে এ গৃহের হজ করা ফরজ। (সুরা আলে ইমরান: ৯৭)
উল্লেখিত আয়াতের আলোকে অনেকে বলে থাকেন, হজের সময় ওমরা করতে পেরেছে মানে কাবা শরিফ যাওয়ার সামর্থ্য হয়েছে, তাই তার ওপর হজ ফরজ হয়ে গেছে।
এটি সঠিক বক্তব্য নয়। কাবা দেখা বা ওমরা করার দ্বারা হজ ফরজ হয়ে যায় না। কারণ, বর্তমানে ভিসা ও হজ আদায়ের অনুমতিও আইনিভাবে হজের সামর্থ্যের অন্তর্ভুক্ত। আগের যুগে যেহেতু ভিসার আইনি বাধ্যবাধকতা ছিল না, তাই হজের মাসসমূহে কেউ ওমরা করতে মক্কায় পৌঁছে গেলে বাকি দিনগুলো সেখানে অবস্থান করতঃ হজ আদায়ে কোনো আইনি বাধা ছিল না। এজন্য ফুকাহায়ে কেরাম এমন ব্যক্তিকে সামর্থ্যবান গণ্য করে তার উপর হজ ফরজ হওয়ার কথা বলেছেন। কিন্তু বর্তমানে যেহেতু ওমরা ভিসা নিয়ে হজ করা বা হজ পর্যন্ত মক্কায় অবস্থানের সুযোগ নেই, সেজন্য এখন হজের মৌসুমেও ওমরা করার কারণে হজ ফরজ হবে না।
উল্লেখ্য, কিছু শর্ত পূরণ হলে ব্যক্তির ওপর হজ ফরজ হয়। শর্তগুলো হলো- ১. মুসলিম হওয়া। ২. বিবেকবান হওয়া অর্থাৎ পাগল না হওয়া। ৩. বালেগ হওয়া তথা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া। ৪. আজাদ বা স্বাধীন হওয়া—অর্থাৎ কারো গোলাম বা দাস না হওয়া। ৫. দৈহিক ও আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান হওয়া। নারীদের ক্ষেত্রে আরেকটি শর্ত যুক্ত হবে, সেটি হলো- সঙ্গে ‘মাহরাম’ (যেসব পুরুষের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাত জায়েজ) থাকা।
(আলমাসালিক ফিল মানাসিক: ১/২৫৭; যুবদাতুল মানাসিক, পৃ-২১; ইরশাদুস সারি ইলা মানাসিকি মোল্লা আলি কারি, পৃ-৪১; ইমদাদুল আহকাম: ২/১৬৩)