ধর্মজীবন: বসন্ত পেরিয়ে শুরু হয়েছে গ্রীষ্মকাল। অসহ্য তাপমাত্রায় জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। এমন অস্বস্তিকর অবস্থায় মুমিনদের জন্য রয়েছে সওয়াব অর্জনের সুবর্ণ সুযোগ। দোয়া ও বিভিন্ন আমলের মাধ্যমে মুসলমানরা প্রচণ্ড গরমে নিজেদের আমলনামা পুণ্যে ভারী করতে পারে।
তীব্র গরম নিয়ে হাদিসে যা বলা হয়েছে-
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে প্রিয়নবী (স.) বলেছেন, জাহান্নাম আল্লাহ তাআলার কাছে আবেদন করল, হে আমার প্রতিপালক! আমার এক অংশ অপর অংশকে খেয়ে ফেলছে, আমাকে শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার অনুমতি দিন। তখন আল্লাহ তাআলা জাহান্নামকে দুইবার শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ ও ত্যাগের অনুমতি দিলেন। একটি শীতকালে এবং অপরটি গ্রীষ্মকালে। অতএব তোমরা শীতকালে যে হিমঋতু অনুভব করো তা জাহান্নামের শ্বাস-প্রশ্বাসের কারণে এবং গ্রীষ্মকালে যে প্রচণ্ড উষ্ণতা অনুভব করো তা এই কারণেই। (বুখারি: ৬১৭, ৩২৬০)
গরমে যে দোয়া পড়বেন-
প্রচণ্ড গরমে নবীজির শেখানো একটি দোয়া হলো— اَللهم إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ زَوَالِ نِعْمَتِكَ، وَتَحَوُّلِ عَافِيَتِكَ، وَفُجَاءَةِ نِقْمَتِكَ، وَجَمِيعِ سَخَطِكَ উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন জাওয়ালি নি‘মাতিকা ওয়া তাহবিলি আফিয়াতিকা ওয়া ফুজাআতি নিকমাতিকা ওয়া জামিয়ি সাখাতিকা।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই আপনার নিয়ামতের বিলুপ্তি, আপনার অনুকম্পার পরিবর্তন, আকস্মিক শাস্তি এবং আপনার সমস্ত ক্রোধ থেকে।’ (মুসলিম: ২৭৩৯, আবু দাউদ: ১৫৪৫, রিয়াদুস সালেহিন: ১৪৭৮)
নফল নামাজ-
অতিরিক্ত গরম হলো- জাহান্নামের নিশ্বাস, তাই জাহান্নামের ভয়ে বেশি করে এবং লম্বা লম্বা সুরা দিয়ে নফল নামাজ আদায় করা উত্তম। হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যখন গরম বেশি পড়বে, তখন বেশি নামাজ আদায় করো। কারণ অতিরিক্ত গরম হলো- জাহান্নামের নিশ্বাস।’ (মেশকাত: ৫৯১)
পিপাসার্তকে পানি পান করানো-
গরমে পিপাসার্তকে পানি পান করানো একটি উত্তম আমল। এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (স.)-কে প্রশ্ন করলেন, ‘কোন দান উত্তম? তিনি বললেন, ‘পানি পান করানো।’ (নাসায়ি: ৫৪৫৬) হাদিসের অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘সদকা বা দান জাহান্নামের আগুন নির্বাপণ করে। আর পানি পান করানো উত্তম সাদকা।’ (আবু দাউদ: ৭৪৩৫)
গরমে জোহর নামাজ একটু দেরিতে পড়া সুন্নত-
ভীষণ গরমের দিনে রাসুলুল্লাহ (স.) জোহরের নামাজ কিছুটা বিলম্বে আদায় করতেন। আবু জার (রা.) বলেন, এক সফরে আমরা রাসুলুল্লাহ (স.)-এর সঙ্গে ছিলাম। একসময় মুয়াজ্জিন জোহরের আজান দিতে চেয়েছিল। তখন নবীজি (স.) বলেন, গরম কমতে দাও। কিছুক্ষণ পর আবার মুয়াজ্জিন আজান দিতে চাইলে নবীজি (স.) পুনরায় বলেন, গরম কমতে দাও। এভাবে তিনি (নামাজ আদায়ে) এত বিলম্ব করলেন যে আমরা টিলাগুলোর ছায়া দেখতে পেলাম। এরপর নবীজি (স.) বলেন, গরমের প্রচণ্ডতা জাহান্নামের উত্তাপ হতে। কাজেই গরম প্রচণ্ড হলে উত্তাপ কমার পর নামাজ আদায় করো।’ (বুখারি: ৫৩৯)
গরিবদের ফল বিতরণ-
প্রচণ্ড গরমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করার আরও একটি মাধ্যম হচ্ছে, গরিব-দুখীর মাঝে মৌসুমি ফল বিতরণ। গরমে মৌসুমি ফল উপকারী। কিন্তু গরিব মানুষদের প্রয়োজনীয় খরচের পর ফল কেনার সামর্থ্য থাকে না। তাই গরমের দিনে গরিব আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী ও অসহায়দের ঘরে তরমুজ, বাঙ্গিসহ বিভিন্ন রসালো ফল-পৌঁছানোর মাধ্যমে বিপুল সওয়াব লাভ করার সুযোগ রয়েছে। রাসুল (স.) বলেছেন, ‘মহান আল্লাহ বলেন, হে আদম সন্তান! তুমি ব্যয় করো, আমিও তোমার জন্য ব্যয় করব।’ (বুখারি: ৫৩৫২)
বৃষ্টির জন্য নামাজ-
প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের কারণে জমিন শুকিয়ে গেলে জনজীবন ও প্রাণীজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে। তখন বৃষ্টির প্রয়োজন হয়। এমন পরিস্থিতিতে দয়াময় আল্লাহর দরবারে বৃষ্টি কামনা করে নামাজ পড়া ও দোয়া করা সুন্নত। (দ্র: আবু দাউদ: ১১৭৩)