মাহমুদ সালেহীন খান: দেশে পাসের হার বাড়লেও শিক্ষার মানে তেমন উন্নতি নেই। পুঁথিগত বিদ্যায় প্রায় বন্দি হয়ে গেছে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা। পাঠ্যপুস্তক বা সিলেবাসনির্ভর পড়ালেখা ছাত্রছাত্রীদের জ্ঞানের জগৎ খণ্ডিত করে দিচ্ছে। ইন্টারনেট, মোবাইল ফোন, ফেসবুক সুলভ হওয়ায় তারা বই দূরে ঠেলে দিচ্ছে। খুব বেশি প্রযুক্তিনির্ভরতা তাদের আচরণেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বিশিষ্টজনরা বলছেন, শিশু-কিশোর ও তরুণদের সিলেবাসের সংকীর্ণ গণ্ডি থেকে বের করতে পারে পাঠাগার। দেশে পাঠাগারের সংখ্যা বেড়েছে, বইও বেরোচ্ছে প্রচুর, তবে কমেছে পাঠক। অল্প বয়সিদের বেশিরভাগই বইবিমুখ।
দেশে কত সংখ্যক গ্রন্থাগার আছে, তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই। এ ব্যাপারে কখনো কোনো জরিপ হয়নি। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের মূল কাজ দেশে গ্রন্থের উন্নয়ন, প্রকাশনা ও পাঠাভ্যাস বৃদ্ধি। এই প্রতিষ্ঠানটিরও কাজ ও কাজের পরিধি আশাব্যঞ্জক নয়। অতীতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে সরগরম থাকত পাঠাগারগুলো। পাঠাগারকেন্দ্রিক সাহিত্য আন্দোলন গড়ে উঠত। এখনকার ব্যস্ত জীবনে ছোট বা বড়দের পাঠাগারে যাওয়ার সময় কই। পাঠকের অভাবে আড়ালে পড়ে যাচ্ছে একসময় আলোর মশাল জ্বালানো একেকটি পাঠাগার। নতুন নতুন প্রযুক্তির কল্যাণে দৈনন্দিন জীবনে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে; কিন্তু মানুষের মননে, মূল্যবোধে তার প্রভাব পড়ছে না।
বিজ্ঞান যখন অর্থনীতিকে এগিয়ে নিচ্ছে, মানুষ হয়ে পড়ছে আরো বেশি আত্মকেন্দ্রিক ও স্বার্থপর। এই ভারসাম্যহীনতা ঘোচাতে চাইলে মানুষকে শেষ পর্যন্ত বইয়ের কাছেই ফিরতে হবে। তা না হলে প্রকৃত জ্ঞানের সন্ধান মিলবে না। বিকাশ ঘটবে না নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধের। সমাজে অপরাধপ্রবণতা বেড়ে যাওয়ার পেছনে বিশেষজ্ঞরা মানুষের মূল্যবোধের পতনকেই বেশি দায়ী করে থাকেন। ভারসাম্যপূর্ণ শিক্ষা ছাড়া ছাত্রছাত্রীদের দৃঢ় মূল্যবোধ গড়ে ওঠে না।
এই সময়ের অন্যতম বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ যে জঙ্গিবাদ তারও অন্যতম কারণ আদর্শ শিক্ষার অভাব। মানস গঠনের উপযোগী বই শিশুর হাতে দেওয়া হচ্ছে না। তাকে নম্বরের প্রতিযোগিতার মধ্যে ঠেলে দিয়ে জ্ঞানের আস্বাদ থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। জিপিএ ৫-এর সংখ্যা বৃদ্ধিতে আমরা উল্লসিত হই, খতিয়ে দেখি না উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীটি সত্যিকার অর্থেই কিছু শিখল কি না।
ভারসাম্যপূর্ণ শিক্ষাই একজন শিক্ষার্থীকে সত্যিকারের মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারে এ কথা শিক্ষক, অভিভাবক, নীতিনির্ধারক কারোরই ভুলে গেলে চলবে না। যে নবীন প্রজন্ম একদিন সমাজ ও রাষ্ট্রের নেতৃত্ব দেবে, তাদের বইমুখী না করা গেলে জাতি কাদের কাঁধে ভর দিয়ে এগোবে? তাই মানসম্মত বইয়ের প্রকাশ, আরো বেশি পাঠাগার স্থাপন ও পুরোনো পাঠাগারগুলোর আধুনিকায়নে সরকারি-বেসরকারি সব মহলকেই এগিয়ে আসতে হবে।
একটা সময় ছিল স্মার্টফোন ছিল দুর্লভ বস্তু। সেই সময় মানুষের আগ্রহ ছিল বই পড়ার প্রতি, গল্প করার প্রতি। অনেক সামর্থ্যবানদের বাড়িতে থাকত নিজস্ব গ্রন্থাগার। এখন সেসব গল্প শুধুই অতীত। এ যুগে ঘরে ঘরে পাঠাগার না পাওয়া গেলেও স্মার্টফোন ঠিকই পাওয়া যায়। কিন্তু মানুষের শরীরের জন্য যেমন খাদ্যের দরকার, তেমনি মনের খাদ্যও তার প্রয়োজন। এই প্রয়োজন মেটাতে পারে একটি ভালো বই। টুইটার, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আধিপত্যের কারণে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শিশুরা অশিক্ষিত হবে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন ব্রিটিশ এক লেখক। জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত বুকার পুরস্কার বিজয়ী লেখক হাওয়ার্ড জ্যাকসনের উদ্ধৃতিতে জানা যায়, স্মার্টফোনের ব্যবহার এবং প্রচুর পরিমাণে ফেসবুক, টুইটারসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের কারণে নাটকীয়ভাবে তরুণ প্রজন্মের যোগাযোগের পদ্ধতি বদলে যাচ্ছে আর এসবের কারণে তারা হারাচ্ছে বই পড়ার অভ্যাস। এক্ষেত্রে তিনি শুধু তরুণ প্রজšে§র কথাই বলেননি বরং সেই সঙ্গে নিজের অবস্থাও তুলে ধরেছেন। তিনি নিজেও বইয়ের প্রতি আর তেমন মনোযোগ দিতে পারেন না। তার মনোযোগের একটা অংশও চলে যায় মোবাইল কম্পিউটারের স্ক্রিনের পেছনে। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, আমরা আগামী ২০ বছরের মধ্যে এমন এক শিশুদের পাব যারা পড়তে পারবে না। আজকের কম্পিউটারের যুগে আমাদের চোখ দিনের অধিকাংশ সময়ই কম্পিউটারের মনিটরে স্থির হয়ে থাকে। তার থেকেও বেশি সময় স্মার্টফোনের পর্দায় থাকে। প্রথমে আমরা কিবোর্ডের কল্যাণে হাতের লেখা ভুলতে বসেছি। শোনা যাচ্ছে উন্নত দেশের স্কুলে নাকি পরীক্ষা ল্যাপটপে নেওয়া হচ্ছে। কারণ তাদের হাতের লেখা যাচ্ছে তাই।
একসময় আমাদের দেশে ডাকহরকরা ছিল। যত্নে লেখা চিঠি প্রিয়জনের ঠিকানায় পৌঁছে দিত। এখন মোবাইল এসএমএসের যুগ। পরীক্ষা ছাড়া হাতে লেখা প্রায় হয়েই ওঠে না। এমন কোনো প্রজন্ম কি আসবে যখন কেউ বর্ণমালা সঠিকভাবে লিখতে পারবে না। হতেই পারে। তবে সেদিনটা নিশ্চয়ই খুব দুঃখজনক হবে। তখন আর বর্ণমালা নিয়ে পেন্সিল ঘুরিয়ে মা-বাবা সন্তানকে সঠিকভাবে অক্ষর লেখা শেখাবে না।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উৎকর্ষতার মধ্য দিয়ে পৃথিবী এগিয়েছে। যত নতুন নতুন আবিষ্কার হচ্ছে, ততই মানুষ মানুষ থেকে মুখ ফিরিয়ে যান্ত্রিকতায় মগ্ন হচ্ছে। আমরা আজ যন্ত্রের দখলে। ২৪ ঘণ্টার একটি বড় অংশই কাটছে যন্ত্রের সঙ্গে। এই যন্ত্র ব্যবহারকারীদের অধিকাংশই তরুণ। আজকাল কিশোর তরুণদের হাতে হাতে মোবাইল ট্যাব। চোখের মণি সর্বদাই সেসব ডিজিটাল প্রযুক্তির পর্দায় স্থির হয়ে আছে। বাস, ট্রেনে সব জায়গাই এক দৃশ্য। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হয়েছে। ফেসবুক, টুইটার আবেগ-অনুভূতি জানানোর সবচেয়ে বড় মাধ্যম হয়ে উঠেছে। এর মধ্যে জনপ্রিয় ফেসবুক। কেউ একজন আত্মহত্যা করছে তার আগে সে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে দিচ্ছে। সেসব নিয়ে পরদিন পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হচ্ছে। এমনকি ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বলতেও কিছু নেই আজকাল। প্রতিদিন অসংখ্য মেয়ের সর্বনাশ হচ্ছে এই ফেসবুকের মাধ্যমে। ব্যক্তিগত মুহূর্তগুলো ফেসবুকে আপলোডে ছেড়ে দেয়ার হুমকি দেখিয়ে আদায় করছে টাকা। আবার কেউ কেউ তা ছেড়েও দিচ্ছে। অনেক কিশোরী আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছে। আমাদের দেশের দৈনিকগুলোয় চোখ বুলালে এর সত্যতা মিলবে।
বিভিন্ন গবেষণার প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, পশ্চিমা বিশ্বের শিক্ষার মান অনেক নেমে গেছে। ১৯৮২ সালের পর গত বছরই প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে সাহিত্য পড়ার হার সবচেয়ে কম। গবেষণায় বলা হয়েছে, গত বছর মাত্র ৪৩ শতাংশ মানুষ বছরে মাত্র একটি বই পাঠ করেছেন। শুধু তাই নয়, প্রতিদিনই বাড়ছে তরুণদের অনলাইনে কাটানো সময়ের হার। পাঁচ থেকে ১৫ বছর বয়সিরা প্রতি সপ্তাহে গড়ে ১৫ ঘণ্টা অনলাইনে কাটায়। যুক্তরাষ্ট্রের এক গবেষণায় দেখা গেছে, বর্তমানে কিশোর বয়সিদের মধ্যে এককীত্বের মাত্রা সবচেয়ে বেশি এবং ২০০৭ সালে আইফোন বাজারে আসার পর থেকে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটেছে।
প্রযুক্তির অন্যসব দিকের মতো এরও ভালো-মন্দ দিক রয়েছে। ঠিক অন্যসব কিছুর ব্যবহারের মতো আমরা বর্তমানে ২ কোটি ২৬ লাখ মানুষ মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ফেসবুক ব্যবহার করি। উই আর সোশ্যাল ইস্যুটি তথ্যমতে ফেসবুক ব্যবহারের দিক থেকে রাজধানী ঢাকার অবস্থান অবস্থান দ্বিতীয়। শুধু ঢাকাতেই এর ব্যবহারকারী ২ কোটি ২০ লাখ লোক। ১৮ বছরের নিচে বাংলাদেশে প্রচুর ফেসবুক ব্যবহারকারী রয়েছে এবং এসব কিশোর-কিশোরীর ফেসবুক ব্যবহার যে তাদের লেখাপড়ায় প্রভাব বিস্তার করছে তা বলাই বাহুল্য। ফেসবুক এদের বই পড়ার আগ্রহ কমিয়ে দিচ্ছে। যে সময়টাতে তাদের বই নিয়ে পড়ালেখা করার কথা সে সময়টাতে তার ফেসবুকে বা মেসেঞ্জারে বন্ধুর সঙ্গে কথা বলায় ব্যস্ত রয়েছে অথবা কোন ছবি আপলোড করতে ব্যস্ত। অথচ ফেসবুকের মাধ্যমেও কিন্তু লেখাপড়া করা বা পাঠ্যবইয়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশ শেয়ার করে বন্ধুদের সঙ্গে পড়া কোনো কঠিন বিষয় নয়। তবে সেটা খুব কমই হচ্ছে। তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নেতিবাচক দিকটাই বেছে নিচ্ছে। তাদের ফেসবুক ব্যবহার কেবলমাত্র সীমাবদ্ধ রয়েছে লাইক, কমেন্ট আর পোক দেওয়াতে।
বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ থেকে দেয়া তথ্যে জানা যায়, বর্তমানে দেশে ২ কোটি ৩৩ লাখ ফেসবুক ব্যবহারকারী রয়েছে। এই ব্যবহারকারীর ৯১ শতাংশই ফেসবুক ব্যবহার করে। এর মধ্যে ১ কোটি ৭০ লাখ পুরুষ এবং ৬৩ লাখ নারী ফেসবুক ব্যবহারকারী রয়েছে। অর্থাৎ যারা ফেসবুক ব্যবহার করে তাদের মধ্যে তরুণ-তরুণীর সংখ্যাই বেশি। এই জরিপের বাইরেও ফেসবুক ব্যবহারকারী রয়েছে। এমনকি মাধ্যমিক পর্যায় শুরু করা উঠতি বয়সি কিশোর-কিশোরীরাও ফেসবুকে সারাদিন মুখ গুঁজে থাকে। এর সংখ্যাও কম নয়। ফেসবুককে যারা পজিটিভলি ব্যবহার করছে তারা এর সঠিক ব্যবহার করছে। তবে এর সংখ্যা হাতেগোনা। অধিকাংশই সময় পার করে কোন বন্ধু কী পোস্ট করছে বা কতজন তার দেওয়া পোস্টে লাইক বা কমেন্ট করছে। এই কাজটিই আমাদের তরুণ সমাজকে বই পড়া থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। লাইব্রেরিতে গিয়ে ভালো বই খোঁজাখুঁজি করছে এমন তরুণদের সংখ্যা হাতেগোনা। মূলত আগ্রহটাই কমে যাচ্ছে। বই আমাদের বড় বন্ধু হলেও আজকাল মোবাইল আর ফেসবুকই বড় বন্ধু হয়ে দাঁড়িয়েছে! এটা খুব একটা শুভ সংকেত নয়।
প্রাইভেট-কোচিং চক্রে বন্দি। ফলে পাঠ্যবইয়ের বাইরে বই পড়ার অবসর মিলছে না তাদের। চাঁদপুর সরকারি কলেজের গ্রন্থাগারিক তৃপ্তি সাহা বলেন, কেবল প্রযুক্তির কারণে শিক্ষার্থীরা বইবিমুখ হচ্ছে না। অনেকগুলো কারণ এর জন্য দায়ী। প্রযুক্তি তার একটি মাত্র। আগে বেশিরভাগ পরিবারে পারিবারিক গ্রন্থাগার ও বাসায় বই পড়ার প্রচলন ছিল। এখন সেটা কমে এসেছে। প্রযুক্তির অপব্যবহার কেবল বই নয়, সামাজিকতা থেকেও মানুষকে দূরে রাখছে। প্রজš§কে বইমুখী করতে হলে প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার প্রয়োজন।
অনেকে মনে করেন, বর্তমানে ভালো ভালো বই প্রকাশ হচ্ছে না। সে কারণে বই পাঠ প্রীতি কমছে। অনেকে দায়ী করছেন প্রকাশকের মানহীন বই প্রকাশকে। বজলুল করিম বলেন, আজ নানা কারণে বই পড়ার অভ্যাস কমে যাচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তির বিস্তারে বই পড়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে মানুষ। অন্যদিকে রয়েছে ভালো লেখার অভাব। প্রযুক্তির অতিরিক্ত ব্যবহার কল্যাণকর নয়। মানুষের বই পাঠ কমার পেছনে প্রযুক্তির অপব্যবহার খুব গুরুত্বপূর্ণ কারণ। তিনি বলেন, প্রযুক্তির অতিরিক্ত আসক্তির কারণে কেবল শিক্ষার্থীরা নয়, সব শ্রেণির মানুষই বইকে দূরে সরিয়ে রাখছে।
কেউ কেউ মনে করেন বইবিমুখতার জন্য দায়ী ব্যস্ত জীবনব্যবস্থা। আজকের শিক্ষার্থীরা প্রতিনিয়তই কোচিং-স্কুল-প্রাইভেট-কোচিং চক্রে বন্দি। ফলে পাঠ্যবইয়ের বাইরে বই পড়ার অবসর মিলছে না তাদের। চাঁদপুর সরকারি কলেজের গ্রন্থাগারিক তৃপ্তি সাহা বলেন, কেবল প্রযুক্তির কারণে শিক্ষার্থীরা বই বিমুখ হচ্ছে না। অনেকগুলো কারণ এর জন্য দায়ী। প্রযুক্তি তার একটি মাত্র। আগে বেশিরভাগ পরিবারে পারিবারিক গ্রন্থাগার ও বাসায় বই পড়ার প্রচলন ছিল। এখন সেটা কমে এসেছে।
কেবল জিপিএ ৫ প্রাপ্তির জন্য পড়লেই হবে না, ভালো মানুষ হওয়ার জন্য, সৃজনশীলতা বৃদ্ধির জন্য পড়তে হবে। প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার, ভালো মানের গ্রন্থাগার ও বই পাঠের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হলে মানুষের মাঝে বইপ্রীতি বাড়বে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
শিক্ষার্থীদের বইমুখী করতে হলে মা-বাবা ও শিক্ষকদের ভূমিকা রাখতে হবে। মা-বাবা ও শিক্ষকরা বই পড়তে শিক্ষার্থীকে উৎসাহিত করবেন। সপ্তাহে এক দিন ৩০ মিনিট বই পাঠের একটি ক্লাস থাকতে পারে। প্রযুক্তির মাত্রাতিরিক্ত আসক্তি এবং অপব্যবহারের প্রভাব জীবনের নানা ক্ষেত্রেই পরিলক্ষিত হচ্ছে। এর ফলে সাইবার অপরাধও বাড়ছে। বই পড়ায় প্রভাব তো পড়ছেই। অনেক শিক্ষার্থীকে ‘শেষের কবিতা’, ‘দুই বিঘা জমি’ কিংবা ‘বনলতা সেন’ কবিতার কথা জিজ্ঞেস করলে বলে, এসব কবিতার কথা তারা কখনও শোনেনি। এটি দুঃখজনক বিষয়।
সমৃদ্ধশালী জাতি গড়ে তুলতে হলে বই পাঠের বিকল্প নেই। মানুষের মনের উৎকর্ষতা লাভের জন্য বই পড়া বাড়াতে হবে। সে জন্য প্রযুক্তির অপব্যবহার দূর করতে হবে। আর মনের উৎকর্ষতা লাভ হলেই একজন মানুষ মানবিক গুণাবলিসম্পন্ন প্রকৃত মানবে পরিণত হতে পারে। তাই এখনই আমাদের সচেতন হতে হবে এবং বই পড়া আর পাঠাগার স্থাপনে আগ্রহ বাড়াতে হবে এবং ছোটদেরও উৎসাহিত করতে হবে বেশি বেশি বই পড়তে।
লেখক: মাহমুদ সালেহীন খান
আলোকিত বাংলাদেশ