প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা,
(এইচএসসি পরীক্ষার্থী -২০২৪)
সবাইকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা। তোমরা যারা ২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থী তারা নিশ্চয়ই ইতোমধ্যে পরীক্ষার রুটিন পেয়ে গেছো। বিশেষ কোন সমস্যা না হলে আগামী ৩০ জুন তারিখ হতে তোমাদের পরীক্ষা শুরু হবে। তোমরা সবাই এখন হয়তো অনেক ব্যস্ত চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিয়ে।
তবে যারা দৈনন্দিন পড়া লিখায় পিছিয়ে পরেছ তাদের এখন কিছুটা হিমশিম খাওয়ারই কথা। তাই প্রতিদিন এর পড়া-লিখা প্রতিদিন শেষ করার মাঝে বেশ উপকার রয়েছে। তবে আর যাই হক এখন চারিদিক কেবল পড়া আর পড়াই দেখছো। কেউ কেউ আবার হয়তো এ স্যারের নিকট থেকে ও স্যারের নিকট, এক কোচিং সেন্টার হতে আরেক কোচিং সেন্টারে বিরামহীন দৌড়াদৌড়ি করছো। বিশ্রাম, খাওয়া-দাওয়া, ঘুম বিনোদন যেন কিছুরই নেই সময়।
তবে এটি সঠিক নয়। মনে রাখতে হবে ‘বিশ্রাম কাজেই অঙ্গ এক সাথে গাঁথা, নয়নের অঙ্গ যেমন নয়নের পাতা’। কাজের গতি ও উদ্যম বৃদ্ধির জন্য বিশ্রাম ও বিনোদন অপরিহার্য। ঠিক এইসময়টাতে যখন তোমরা পড়া-লিখা ছাড়া অন্য সবদিকে বাধা তোমরা তোমাদের গুরুজনদের কাছথেকে কিছু উপদেশ নিতে পারো। উপাসনা করে নিতে পারো। পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রামের সুযোগ করে নিতে পারো। শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করতে পারো। সে জন্যই থাকা চাই একটি কার্যকর কর্মপরিকল্পনা বা রুটিন এবং সে অনুযায়ী সম্পাদন করা চাই দৈনন্দিন লেখাপড়া, খাওয়া দাওয়া , উপাসনা, নিদ্রা, বিশ্রাম, বিনোদন। তবে সারা বছর যারা নিয়মিত ক্লাস করেছ এবং শিক্ষক ও অভিভাবকদের পরামর্শ অনুসারে মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া করেছ তাদের পরীক্ষা নিয়ে সামান্য চিন্তা হলেও ওতটা দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। অব্যাহত প্রচেষ্টার সুফল অভিসম্ভাব্য। তোমরা সবাই নিজের উপর আত্মবিশ্বাস রেখে এগিয়ে যাও সুদৃঢ় ভাবে। কারণ আস্থাই মনে প্রবল শক্তি যোগায়।
মনের গভিরে গেঁথে রাখো,
আমি কেন পারব না আমাকে পারতেই হবে। আমাকে ভালো করতেই হবে।অন্যরা পারলে আমি কেনো পারবো না? আমাকেও পারতে হবে। অবশ্যই আমি পারবো। মনে প্রবল ঝড় তুলো এটা যে, সব ভয়কে জয় করেই ছিনিয়ে আনতে হয় সকল সফলতা। জীবনের যেকোনো কাজে জয়ী হতে হলে অবশ্যই থাকা চাই আন্তরিক প্রচেষ্টা ও সুদৃঢ় আত্মবিশ্বাস। অবশ্যই দুশ্চিন্তার কোন সুফল নেই। মাথাথেকে ঝেড়ে ফেলো সকল দুশ্চিন্তা।
এখন একটাই কাজ থাকবে আর সেটি হচ্ছে, পরীক্ষায় ভালো করা। ভালো ভাবে আয়ত্ত্বে রাখো প্রতিটি বইয়ের প্রত্যেকটি চ্যাপ্টারের সকল খুটিনাটি বিষয় গুলো। তবে এটা মাথায় রেখো কারো সাজেশনে বা প্রশ্নের উত্তর মুখস্ত করে পরীক্ষায় ভালো করার দিন এখন আর নেই। এখন যে পদ্ধতি সৃজনশীল পদ্ধতিতে পরীক্ষায় ভালো করার জন্য তোমাকে সঠিক ভাবে জানতে হবে, বুঝতে হবে এবং আত্মস্ত করতে হবে নির্ধারিত পাঠ্যসূচির সকল বিষয়। এমন অনেকেই অছো, যারা একসাথে অনেক কিছু মনে রাখতে পারো না তারা পরীক্ষায় খারাপ করার ভয়ে চিন্তিত। তোমরা স্যারের সহায়তায় বাছাই করে নাও গুরুত্বপূর্ণ ও সহজ বোদ্ধ কয়েকটি অধ্যায়। খুব ভালো ভাবে আয়ত্ব করো অধ্যায় গুলোর সবকিছুর খুটিনাটি। যেন এই অধ্যায়ের যে কোন প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারো তুমি। সহজেই তুলে নিতে পারো পাশ নম্বরের চেয়ে অনেক বেশি নম্বর। শুধু পড়লেই চলবে না। লিখতেও হবে বারবার। মনে রেখো, একবার লেখা দশবার পড়ার চেয়ে বেশি ফলপ্রসূ। পড়ে জেনে নাও বিস্তারিত। মুখস্ত করার চেয়ে উত্তম নিজের সৃজনশীলতাকে কাজে লাগিয়ে লিখতে শিখা।বারংবার চেষ্টা করতেই থাকো। আর দেখবে তুমি যখন নিজের সৃজনশিলতাকে কাজে লাগিয়ে লিখতে পারবে। এতে লেখাপড়ায় পাবে অনেক আনন্দ আর পরীক্ষায় নিশ্চিত পাবে অধিক নম্বর। আবারো বলছি, সকল পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের জন্য সচ্ছ ভাবে আত্মস্থ থাকা চাই, নির্ধারিত চ্যাপ্টারের খুঁটিনাটি সবকিছু এবং সেই সাথে থাকা চাই যে কোন প্রশ্নের সঠিক উত্তর নির্ভুল বানানে লেখার নিজস্ব ক্ষমতা।
আর অবশ্যই প্রবেশপত্র হাতে পাওয়ার সাথেসাথে তোমার বিস্তারিত সবকিছু অক্ষরে অক্ষরে মিলিয়ে দেখবে ঠিক আছে কিনা। তোমার নাম, ঠিকানা, রেজিস্ট্রেসন নম্বর, রোল নম্বর, বিষয় কোড,বিষয়ে নাম ইত্যাদি সঠিক ও সুস্পষ্ট আছে কি-না তাও ভালোভাবে নিজে দেখবে এবং অন্যকে দিয়েও নিরীক্ষা করাবে। সামান্যতম ভুল পেলেই সঙ্গে সঙ্গে তোমাদের প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষকে তা দেখাবে এবং বিধিমত সংশোধন করিয়ে এনে দিতে বলবে।কারন কোন ভুল ত্রুটির শামিল হলেই তুমি পরীক্ষা দিতে পারবে না। মনে রাখবে এগুলো তোমার সারা জীবন কাজে লাগবে। তাই এ বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরীক্ষার আগের রাতে প্রয়োজনীয় স্কেল, কলম, পেন্সিল, ইরেজর, রেজিস্ট্রেশন কার্ড, প্রবেশপত্র এবং পরীক্ষার রুটিন নির্দীষ্ট একটি ফাইলে গুছিয়ে রাখবে এবং প্রবেশপত্রের উল্টা পিঠে লিখিত নির্দেশ গুলো মনোযোগদিয়ে পড়ে রাখবে এবং সঠিক ভাবে অনুসরণ করবে সেগুলো।
এছাড়া পর্যাপ্ত পানি এবং রুমাল অথবা টিস্যু সাথে রাখবে যেনো তীব্র তাপাদহে তুমি নিজের শারীরিক সুস্থতা ঠিক রাখতে পারো। অভিভাবকদেরও সচেতন থাকতে হবে এসব বিষয়ে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে রাস্তায় যান্ত্রিক কারণে যেন পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছাতে দেড়ি না হয় সেজন্য হাতে অন্তত ১ ঘণ্টা সময় নিয়ে বের হতে হবে।
অতঃপর, পরীক্ষার কেন্দ্রে প্রবেশ করার পর উত্তরপত্র হাতে পাওয়ার সাথে সাথে প্রবেশপত্র অনুসারে সাবধানে সঠিকভাবে লিখতে হবে রোল, রেজিস্ট্রেশন ও বিষয় কোড নম্বর। বারে বারে উওর পএ চেক দিতে হবে সব কোড সঠিক ভাবে পূরন হয়েছে কিনা। সামান্য কোন ভুল হলে কাটা ছেঁড়া করা যাবে না হলে দায়িত্বরত শিক্ষককে দ্রুত বিষয় টি জানাবে এবং সমাধান করবে। মনেরাখবে উওপএের সিটে সামান্য কোন ভুল হলেই তোমার রেজাল্ট আসবে না। প্রশ্নপত্র পাওয়ার পর সম্পূর্ণ প্রশ্নপত্র ভালো করে একবার পড়ে নিবে। প্রশ্নপত্রে প্রদত্ত নির্দেশ অনুসারে প্রয়োজনীয় সংখ্যক প্রশ্নের উত্তর লিখবে। যে সকল প্রশ্নের উত্তর তোমার কাছে সহজ মনে হবে সেগুলো প্রথমে লিখবে। এতে পূর্ণমানের উত্তর সম্পন্ন হলে খুবই ভালো। না হলে, কমজানা উত্তর গুলোই আংশিক হলেও লিখে আসবে। পরীক্ষার খাতা কোনোভাবেই খালি রাখবে না। বেশি পারো আর পারো নিজেকে মানসিক ভাবে অবশ্যই সচ্ছল রাখবে পরীক্ষার হলে তবেই তুমি পারবে।
আশাকরি তোমাদের সকলের পরীক্ষার ফলাফল অত্যন্ত ভালো হবে, ইনশাআল্লাহ।
লেখক: মো: আব্দুল গাফফার সিরাজী
প্রভাষক, ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ