উর্বশী এহসান: বর্ষা মৌসুম চলছে। এ সময়ে ডেঙ্গুর প্রধান উৎস বা বাহক এডিস মশার উপদ্রব বেশি দেখা যায়, মূলত প্রজননের সময় এটা। চলতি বছর ডেঙ্গু বারবার চোখ রাঙিয়েছে এবং এখনও রাঙাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন গত বছরের তুলনায় এ বছর আরও ভয়াবহ হতে পারে ডেঙ্গু পরিস্থিতি। গণস্বাস্থ্যের স্বার্থেই এ সংকট মোকাবিলায় সতর্কতা ও উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাত্র তিন দিনেই এই আতঙ্ক কাটানো সম্ভব। এ ক্ষেত্রে প্রশাসন এককভাবে উদ্যোগ নিলে তাতে শতভাগ সাফল্য না-ও আসতে পারে, এর জন্য দরকার জনসাধারণের সচেতনতা ও প্রচেষ্টা।
প্রাথমিক পদক্ষেপ আসুক পরিবার থেকে- পরিবারের পক্ষ থেকেই প্রথম পদক্ষেপ আসা দরকার। পরিবারে সচেতনতা সৃষ্টি হলে তা প্রতিবেশীদের ওপর প্রভাব পড়বে। ডেঙ্গু ছড়ায় এডিশ মশার কামড়ে। এ মশা বংশবিস্তার করে থাকে বদ্ধ-পরিষ্কার পানিতে। তাই ঘরের ভেতর, বারান্দায়, ছাদে, এমনকি ভবনের আশপাশের কোনো জায়গায় পানি জমে থাকতে দেওয়া যাবে না। এই মৌসুমের জ্বরকে অবহেলা করা যাবে না; বরং ডেঙ্গুজ্বরের যে-কোনো উপসর্গ দেখা দিলেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। হাসপাতালে প্রধানত ৯০ থেকে ৯৭ শতাংশ ডেঙ্গুর প্রাথমিক লক্ষণ নিয়ে হাসপাতালে আক্রান্তরা যান। মাত্র ৩ শতাংশ রোগী বেশি লক্ষণ নিয়ে যান। তা না করে নিজের মতো চিকিৎসাসেবা নেওয়া যেতে পারে। তাই কোনো লক্ষণ দেখা গেলে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো জরুরি।
মশা থেকে দূরে থাকা- দিনে বা রাতে যখনই বিছানায় যাবেন মশারি ব্যবহার করতে হবে। মশারি ভালোভাবে গুঁজতে ভুলবেন না। মশারিতে কোনো বড় ছিদ্র আছে কি-না, খেয়াল রাখতে হবে। মশারির বাইরে থাকার সময় ঢিলেঢালা পোশাক পরা ভালো, যাতে হাত-পা ও শরীর ভালোভাবে ঢেকে থাকে। পোশাকে মশানিরোধী পদার্থ (মসকিউটো রিপেলান্ট) ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে তিন বছরের কম বয়সি শিশুদের জন্য এই পদার্থ ব্যবহার না করাই ভালো। ঘরের জানালা, বাথরুমের জানালা ও বারান্দার দরজায় ছোট ছিদ্রের নেট লাগানো যেতে পারে। মশা তাড়াতে ধূপ ব্যবহার করুন এটা প্রাকৃতিক পন্থা। এতে ঘরের বাতাসও অনেকটা জীবাণুমুক্ত থাকে। কীটনাশক বা কয়েল ব্যবহার যতটা পারা যায় কম করুন। বাইরে যখন মশার ওষুধ দেওয়া হয়, তখন নিজের বাড়ির দরজা-জানালা বন্ধ রাখতে হবে।
অ্যাকুরিয়াম ও জলজ উদ্ভিদে সতর্কতা- বাড়িতে জলজ উদ্ভিদ থাকলে প্রতি ৭২ ঘণ্টায় পাত্রের পানি বদলে ফেলতে পারলে ভালো হয়। জলজ উদ্ভিদের জন্য ব্যবহৃত জায়গাটি যথেষ্ট বড় হলে গাপ্পি কিংবা গাম্বুসিয়া মাছও ছাড়তে পারেন। এসব মাছ মশার লার্ভা খেয়ে ফেলে।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় রাখতে হবে দৃষ্টি- মাত্র তিন দিনেই মশার সমস্যা দূর করা যায়। পানি জমে বা মশা জন্মায় এমন টব, গাড়ির টায়ার, নারকেলের মালা বা পাত্র যাতে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখা দরকার। অব্যবহৃত কমোড ঢেকে রাখুন। ফ্লাশ করুন সময়ে সময়ে। নির্মাণাধীন ভবনে পানি জমা থাকছে কি-না, খেয়াল রাখুন। প্রয়োজনে এলাকার সবাই মিলে ভবন নির্মাণ প্রতিষ্ঠান বা জমির মালিক ও নির্মাণশ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলুন। এ ছাড়া এলাকার কোথাও পানি জমে থাকার আশঙ্কা থাকলে সেই জায়গা নিজেরা পরিষ্কার করে ফেলুন। প্রয়োজনে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর সহায়তা নিতে পারেন।